পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

史8史 প্রবাসী ১৩৪৪ একজনও এক মুহূৰ্ত্তও চীৎকার থামাচ্ছে না। সবাই সবাইকার গলার স্বর ডুবিয়ে দিতে ব্যস্ত । আমাদের সহযাত্রী জাপানী ভদ্রলোক একটা আধমণী হাতী কিনে ফেলল। ব্যাপারীদের ত জাহাজের উপর আসতে দেয় না, তাই ওরা একটা থলিতে লম্বা দড়ি বেঁধে দড়িটা উপরে ছুড়ে দেয়। কৃয়ার জল ভোলার মত টেনে থলিটা তুললে জিনিষ পাওয়া যায়। তার পর টাকাও সেই থলিতে দিতে হয় । কলম্বোতে থার্ড ক্লাসে এক পাল সিংহলবাসী, সেকেও ক্লাসে একটি ঘনকৃষ্ণকাস্তি তামিল এবং ফাষ্ট ক্লাসে এক জোড়া সাহেবমেম দুটি ছোট ছেলে নিয়ে উঠল। ম্যাডাগাস্কারের দল এইখানে নেমে গেল। দ্বিতীয় শ্রেণীর তামিলটিকে দেখে আমাদের সহযাত্রীরা সবাই জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “এ কোন nationalityর লোক ?” ভারতবাসীরা যে অনেকেই খুব কালো হয় তা ত তারা জানেই, তবুও কেন তারা এ প্রশ্ন করছিল ঠিক বোঝা গেল না । আমাদের ঠাট্ট করেও হতে পারে, আমাদের দর একটু বাড়িয়েও হতে পারে। যাই হোক, আমরা বললাম, “ইনি আমাদের দেশেরই লোক ।” প্রথম শ্রেণীতে যে সাহেবমেমরী উঠেছিল তাদের আভিজাত্য বড়ই বেশী । তাদের সঙ্গী বলতে সেখানে জাপানীরা ছাড়া আর কেউ ছিল না, তবু তার প্রাণ গেলেও আমাদের ডেকে অস্তি না, পাছে আমাদের হাওয়া-লেগে তাদের জাত যায়। ভারতবর্ষের কুন বেশী দিন থেয়ে তাদের জাতিভেদে বিশ্বাস ও ছুংমার্গে নিষ্ঠ অসম্ভব বেড়ে গিয়েছিল । প্রথম শ্রেণীর ডেক ছিল আমাদের মাথার উপর । সেখানে লোক অত্যন্ত কম থাকাতে এবং কেউ আপত্তি না করাতে এতদিন দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীরা সেখানে বেড়াতে ও ডেক-গলফ খেলতে রোজই যেত। কিন্তু নতুন মেমসাহেব এসেই স্থার্ডদের দিয়ে কড়া হুকুম জারি করে দিলেন, “আমাদের ডেকে তোমরা কেউ আসবে না।" মেমসাহেব ঠোটে রক্তের মত রাঙা করে রং লাগিয়ে ছেলেদের নিয়ে সেখানে নিজেদের ঘাটি আগলে বসে থাকতেন। ছেলে দুটো অতি শিশু, বোধ হয় একটার দুই এবং একটার চার বছর বয়স হবে। সারা সকাল উপরের ভেকে শুধু গায়ে জাগিয়া পরে খেলার মোটর নিয়ে খেলা ছিল তাদের কাজ । যখন কেবিনে আসত তখন পোটহোল দিয়ে গল বাড়িয়ে তৃষিত নেত্ৰে চেয়ে থাকত সেকেও ক্লাসের দুটি ক্রীড়ামত্ত মেয়ের দিকে। কিন্তু বাইরে এসে খেলা তাদের বারণ ছিল জাত যাবার ভস্থে । ঘরে নানারকম খেলনা ছড়াছড়ি যেত, কিন্তু ভেকে দুটি মেয়ের লাফালাফি নাচানাচি দেখে তাদের চোখ খেলনার দিকে কিছুতেই যেত না । পোটখোল দিয়ে মুখ বার করে তারা চেয়ে থাকত আর মাঝে মাঝে মিচকে মিচকে হাসত। সিংহলের কাছ থেকেই সমূত্রের মতোমাতি স্বরু । সকালে আমরা কলম্বে পৌছবার আগেই দেখেছিলাম সমূত্রের উন্মত্ত নৃত্যের স্বচনা। জাহাজের ধাক্কায় ঢেউ ভেঙে নীল জলের উপর সাদা ফেনাগুলো অনেক দূর পর্যন্ত রেখায় রেখায় ছড়িয়ে পড়ছে যেন ঢাকাই নীলাম্বরী জংলী শাড়ী। বড় জিনিষের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় নীল হিমাচলের মাথা বেয়ে সাদা বরফের নদী দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তার ভিতরে ভিতরে আবার কত রঙের খেলা। ঢেউগুলো যখন ফুলে উঠছে তখন ধেন সমুদ্রের তলায় হঠাৎ কে বাতি জেলে দিচ্ছে, চূড়াটা বাতির আগের আভায় যেন হাস্থা নীলার মত জলছে, তারপর আসমানী হয়ে শেষে সাদা ফেনার স্তুপ ফেটে ছড়িয়ে চলে যাচ্ছে। ১৩ই রাত থেকেই জাহাজ দোলার মত দুলতে লাগল । সকালে উঠে দেখি দোলানির চোটে আর হাট যায় না। আমার মেয়েটিকে বিছানা থেকে তুলতেই পারলাম না, বললে, “আমার মাথা ঘুরছে, গা বমি-বমি করছে।” রেলিং ধরে উপরে গিয়ে শুনলাম ফরাসী বালিকাটিরও সেই দশা । বড়দের মধ্যেও অনেকে কেবিনে মাথা গুজে পড়ে রইলেন, কেউবা ডেকে চেয়ার পেতে প্রাণপণে চোখ বুজে পড়ে আছেন। খাওয়া-দাওয়া অৰ্দ্ধেক লোকের বন্ধ । কেবিনে থাকলে গরমে শরীর আরও খারাপ হবে বলে দুটি ছোট মেয়েকেই টেনেটুনে ডেকে এনে ফেলা হল । ঢেউগুলো তখন লাফিয়ে লাফিয়ে ডেকের উপর এসে পড়ছে, সমূত্রের তলায় যেন স্বরান্বরের দ্বন্দ্ব বেধে গিয়েছে, তারা পাহাড় পৰ্ব্বত তুলে ছুড়ছে। একসঙ্গে শত শত পৰ্ব্বতের ১৩ই