পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ মহাত্মা গান্ধী ー B● খণ্ডিত করেও একটা ঐক্যসাধনের প্রচেষ্টা ছিল। সহসা পশ্চিমের সিংহদ্বার ভেদ ক'রে শত্রুর আগমন হোলে । আধরা ওই পথেই এসে একদিন পঞ্চনদীর তীরে উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন, এবং তার পরে বিদ্ধ্যাচল অতিক্রম করে ক্রমে ক্রমে সমস্ত ভারতবর্ষে নিজেদের পরিব্যাপ্ত করেছিলেন । ভারত তখন গান্ধার প্রভৃতি পারিপাশ্বিক প্রদেশগুদ্ধ একটি সমগ্র সংস্কৃতিতে পরিবেষ্টিত থাকায়, বাইরের আঘাত লাগে নি। তার পরে একদিন এল বাইরের থেকে সংঘাত। সে সংঘাত বিদেশীয়, তাদের সংস্কৃতি পৃথক । যখন তারা এল তখন দেখা গেল যে আমরা একত্র ছিলুম, অথচ এক হই নি। তাই সমস্ত ভারতবর্ষে বিদেশী আক্রমণের একটা প্লাবন বয়ে গেল । তার পর থেকে আমাদের দিন কাটছে দুঃখ ও অপমানের গ্লানিতে। বিদেশী আক্রমণের স্থযোগ নিয়ে একে অঙ্কের সঙ্গে যোগ দিয়ে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে কেউ, কেউবা খণ্ড খণ্ড জায়গায় বিশৃঙ্খলভাবে বিদেশীদের বাধা দেবার চেষ্টা করেছে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করার জন্যে । কিছুতেই তো সফলকাম হওয়া গেল না। রাজপুতনায়, মারাঠায়, বাংলা দেশে যুদ্ধবিগ্রহ অনেক কাল শাস্ত হয় নি। এর কারণ এই যে, যত বড়ে দেশ ঠিক তত বড়ো ঐক্য হোলো না ; দুর্ভাগ্যের ভিতর দিয়ে আমরা অভিজ্ঞতা লাভ করলেম বহু শতাব্দী পরে। বিদেশী আক্রমণের পথ প্রশস্ত হোলো এই অনৈক্যের স্ববিধা নিয়ে। নিকটের শত্রুর পর হুড়মুড় করে এসে পড়ল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিদেশী শত্রু তাদের বাণিজ্যতরী নিয়ে, এল পৰ্টুগীজ, এল ওলন্দাজ, এল ফ্রেঞ্চ, এল ইংরেজ । সকলে এসে সবলে ধাক্কা মারলে ; দেখতে পেল ষে এমন কোনো বেড় নেই যেটা দুলঙ্ঘ্য । আমাদের সম্পদ সম্বল সব দিতে লাগলুম, আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধির ক্ষীণত এল, চিত্তের দিক দিয়ে সম্বলহীন রিক্ত হয়ে পড়লুম। এমনি করেই বাইরের নিঃস্বতা ভিতরেও নিঃস্বও कॉ८म । এই রকম ছঃসময়ে জামাদের সাধক পুরুষদের মনে যে চিন্তার উদয় হয়েছিল সেটা হচ্ছে পরমার্থের প্রতি লক্ষ্য ৭শে ভারতের স্বাতন্ত্র্য উদ্বোধিত করার একটা আধ্যাত্মিক একট। তখন থেকে জামাদের সমস্ত মন গৈছে পারমার্ষিক পুণ্য উপার্জনের দিকে । আমাদের পার্থিব সম্পদ পৌছয় নি সেখানে, যেখানে যথার্থ দৈন্ত ও শিক্ষার অভাব । পারমার্থিক সম্বলটুকুর লোভে যে পার্থিব সম্বল খরচ করি সেটা যায় মোহামু ও পাণ্ডাদের গর্বস্ফীত জঠরের মধ্যে । এতে ভারতের ক্ষয় ছাড়া বুদ্ধি হচ্ছে না । বিপুল ভারতবর্ষের বিরাট জনসমাজের মধ্যে আরেক শ্রেণীর লোক আছেন যারা জপ তপ ধ্যান ধারণ করার জন্তে মানুষকে পরিত্যাগ ক’রে দারিদ্র্য ও দুঃখের হাতে সংসারকে ছেড়ে দিয়ে চলে যান । এই অসংখ্য উদাসীনমণ্ডলীর, এই মুক্তিকামীদের অন্ন জুটিয়েছে তারা যার এদের মতে মোহগ্ৰস্ত সংসারাসক্ত ৷ একবার কোনো গ্রামের মধ্যে এই রকম এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাকে বলেছিলুম, “গ্রামের মধ্যে দুস্কৃতিকারী, দুঃখী পীড়াগ্রস্ত যারা আছে, এদের জন্যে আপনারী কিছু করবেন না কেন ?" আমার এই প্রশ্ন শুনে তিনি fবস্মিত ও বিরক্ত হয়েছিলেন, বললেন, “কী ! যারা সাংসারিক মোহগ্ৰস্ত লোক, তাদের জন্তে ভাবতে হবে আমুস্থা আমি একজন সাধক, বিশুদ্ধ আনন্দের জন্তে ওই সংসার ছেড়ে এসেছি, আবার ওর মধ্যে নিজেকে জড়াব ?” এই কথাটি ধিনি বলেছিলেন তাকে এবং তারই মতো অন্ত সকল ংসারে বীতস্পৃহ উদাসীনদের ডেকে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে হয় যে তাদের তৈলচিকুণ নধরকাস্তির পরিপুষ্টি সাধন করল কে স্বাদেরকে এঁরা পাপী ও হেয় ব’লে ত্যাগ করে এসেছেন সেই সংসারী লোকই ওঁদের অন্ন জুটিয়েছে। পরলোকের দিকে ক্রমাগত দৃষ্টি দিয়ে কতখানি শক্তির অপচয় হয়েছে তা বলা যায় না। বহু শতাব্দী ধরে ভারতের এই দুর্বলতা চলে আসছে। এর যা শাস্তি, ইহলোকের বিধাতা সে শান্তি আমাদের দিয়েছেন। তিনি আমাদের হুকুম দিয়ে পাঠিয়েছেন সেবার দ্বারা, ত্যাগের দ্বারা এই সংসারের উপযোগী হোতে হবে । সে হুকুমের অবমাননা করেছি, সুতরাং শাস্তি পেতেই হবে। সম্প্রতি ইউরোপে স্বাতন্ত্র্যপ্রতিষ্ঠার একটা চেষ্টা চলেছে। ইতালী এক সময়ে বিশের কবলে ধিকৃত জীবন যাপন করেছিল, তারপরে ইতালীর ত্যাগী ধারা, ধারা বীর— ম্যাজিনী ও গ্যারিবর্তী শবদেশীর অধীনতা-জাল থেকে