পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ণ সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে বিচ্ছিন্নভাবে দূরে সরে থাকত। তার ধারণা ছিল টেলিগ্ৰাফ-পোষ্টটা গাত্রঘর্ষণ করবার একটা নিজীব বস্তুবিশেষ--তাছাড়া ওর ধে আর কোন উপযোগিতা থাকতে পারে তা সে কল্পনাও করতে পারত না। কর্ডেরা হচ্ছে একটি গাভী—সে সংসারের অনেক কিছু দেখেছে, শুনেছে । সময় সময় সে আহারের পরিবর্তে বহুক্ষণ ধরে সেই তৃণাচ্ছাদিত শুামল প্রাস্তরে বসে চিন্তা করত। শাস্ত, পরিপূর্ণ জীবন, ধূসর আকাশ ও শস্তগুমেলা পৃথিবীকে প্রাণভরে উপভোগ করতে করতে সে মনকে উন্নততর করবার চেষ্টায় নিযুক্ত থাকত । রোজা আর পিনিনের সব খেলাধুলায় সে যোগ দিত। তাদের উপরে ভার ছিল তার রক্ষণাবেক্ষণের । কর্ডেরার যদি হাসবার ক্ষমতা থাকত তাহলে সে প্রাণ ভরে হাসত ; তার—কর্ডেয়ার-ভার কি না দেওয়া হয়েছে রোজা ও পিনিনের উপর, যাতে সে চারণভূমি ছেড়ে অন্যত্র না চলে যায় বা বেড়া ডিঙিয়ে রেল-লাইনের উপর দিয়ে না ঘুরে বেড়ায় ; –যেন সে তাই করতে যাচ্ছে আর কি—তার কি দায় পড়েছে রেল-লাইনে অনধিকারপ্রবেশ করবার জন্ত ? এ রকম অনাবশুক কৌতুহল তার এক বিন্দুও ছিল না। ঘাড় নীচু ক'রে সযত্বে বেছে-নেওয়া কোমল সতেজ তৃণগুচ্ছ নিবিষ্ট চিত্তে চৰ্ব্বণ করাতেই তার মুখ। তার পরে বাকী সময়টা হয় সে নিশ্চিন্তচিত্তে বসে চিন্তা করত নয়ত স্থস্থ শরীরে, শারীরিক কোন প্রকার কষ্ট ভোগ না করার আনন্দে বিভোর হয়ে থাকত। কেবলমাত্র বেঁচে থাক!— নিছক প্রাণধারণ করা—এই ছিল তার একমাত্ৰ কাম্য। সে জনিত ধে বাকী আর সব কিছুই বিপদসঙ্কুল । প্রথম যখন এখানে রেল-লাইনের পত্তন হ’ল সেই সময় মাত্র তার একবার মানসিক শাস্তির ব্যাঘাত ঘটেছিল ; প্রথম দিন ট্রেন চলতে দেখে সে ভয়ে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। ভয়ের চোটে সে অল্প গাভীদের দলে মেশবার জষ্ঠ দেওয়াল টপকে পাশের জমিতে চলে গিয়েছিল। তার এই ভয় কয়েক দিন ধরে সমানভাবেই বর্তমান ছিল। যখনই দুরে এনিটা দেখা যেত তখনই জয়বিস্তুর প্রবলতার সঙ্গে তার উীতি ফিরে আসত। ক্রমে ক্রমে সে বুঝতে পারল যে ট্রেনটা কোন નંદો. ৰিদণয় Seve কারী বস্তু নয়—ও এমন একটা বিপদ যা সব সময়েই দূরে সরে যায়—যা ভয় দেখায় কিন্তু কখনও আঘাত করে না। তখন থেকে সে আর সতর্কতা অবলম্বন করবার বা মাথা নীচু করে আত্মরক্ষার জন্ত প্রস্তুত হবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করত না । তার পর থেকে সে না উঠে, ব’লে বসেই ট্রেনটার দিকে চেয়ে থাকত—তার পরে ট্রেনের প্রতি তার সন্দেহ ও অবিশ্বাস একেবারেই দূর হয়ে গেল—আর সে ওটার দিকে তাকাতও ন । রোজা ও},পিনিনের মনে কিন্তু রেলপথ সুন্দরতর অনুভূতির সঞ্চার করেছিল। সৰ্ব্বপ্রথমে একটা ভীতিমিশ্রিত উত্তেজনা ওদের মন ভরে উঠেছিল—ওরা তখন পরম আনন্দে পাগলের মত নাচত ও নানা রকম অদ্ভুত শব্দ ক’রে চীৎকার করত। তার পর তারা ওটাকে একটা খেলা পেয়ে গেল। সেই বিশাল লৌহময় পদার্থটা যখন সরীস্বপগতিতে বহু অপরিচিত লোক বহন ক’রে দ্রুতবেগে চলে । ধেত তখন তাদের খুব আমোদ হ’ত । কিন্তু রেলই হোক আর টেলিগ্রাফের পোষ্টই হোকতারা আর কতক্ষণের জন্য মনকে আকৃষ্ট করে ? একটু পরেই আবার বিরাট নির্জনতা এসে তাদের ঘিরে ফেলত। তখন আর কোন জীবিত পদার্থের দর্শন মিলত না, বহিজগতের কোন সাড়াশব্দও পাওয়া যেত না। 登 দিনের পর দিন প্রথম সূৰ্য্যকিরণসমাচ্ছন্ন প্রাস্তরে কীটপতঙ্গের গুঞ্জনধ্বনি শুনতে শুনতে শিগুছুটি ও গাভীটি বাড়ী ফিরে যাবার জন্ত দ্বিপ্রহরের প্রতীক্ষা করত, ফিরে এসে আবার মান, দীর্ঘ সায়াহ ধরে রাত্রির অপেক্ষায় থাকত । ক্রমে ক্রমে ছায়াগুলি দীর্ঘাকার ধারণ করত, পার্থীর কুজন থেমে যেত, অন্ধকার আকাশে দু-একটি তারা ফুটে উঠত। প্রকৃতির ধীরগষ্ঠীর মূৰ্ত্তি শিশুদের মনে শান্ড পবিত্র ভাব জাগিয়ে তুলত, কঙেরার পাশে তারা স্থির হয়ে বসে থাকত। মাঝে মাঝে কডেরার গলার ঘণ্টার মৃদু শব্দ ছাড়া আর কিছু সেই আবেশভরা স্বপ্নময় নীরবতার শাস্তি ভেদ করত না । 聽 - কাচা ফলের ছুটি বিভিন্ন অংশের মত অখণ্ডনীয় স্নেহে শিশু ছুটি পরম্পরের সঙ্গে জুড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ৰে কি পার্থক্য আছে আর কেনই বা যে তারা পৃথক দুটি সত্তা,