পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯২ রবীন্দ্রনাথের তিন খণ্ড “গীতবিতান” গ্রন্থের শেষ খণ্ড ১৩৩৯ সালের শ্রাবণ মাসে প্রকাশিত হয়। এই তিন খণ্ডে মোটামুটি ১৬০০ গান আছে। ১৩৩৯ সালের পরও এ পর্য্যস্ত তিনি বিস্তর গান রচনা করিয়াছেন। সবগুলি হইতে জাতীয় সঙ্গীতগুলি বাছিয়া লইয়া সেগুলির সম্বন্ধে সরাসরি রায় দেওয়ার কাজে আমরা প্রবৃত্ত হইব না । “বন্দেমাতরমূ” “বন্দেমাতরম" গানটি আদ্যোপাস্ত বঙ্গে ও বাঙালীদের নিকট যেরূপ পরিচিত, বঙ্গের বাহিরে ও অবাঙালীদের মধ্যে তদ্রুপ নহে । “আনন্দমঠ” এবং “রাজসিংহ”ও অবাঙালীদের পরিচিত নহে। এই জন্য আমরা গানটি ও এই ছুপানি বহি সম্বন্ধে আমাদের মত কিঞ্চিৎ যুক্তিসহ ইংরেজী মডার্ণ রিভিয়ু পত্রিকায় প্রকাশিত করিয়াছি। বাঙালীদের জন্য প্রবাসীতে তত কথা লেখা অনাবশুক। তথাপি কিছু লিখিতেছি । আমাদের মত এই, যে, “বন্দেমাতরমূ” গানটি পৌত্তলিকতাব্যঞ্জক বা পৌত্তলিকতাপ্রণোদক নহে—যদিও গুণিবামাত্র বা ভাসা ভাসা ভাবে পড়িবামাত্র ইহা পৌত্তলিক গান মনে হওয়া অস্বাভাবিক নহে । আমরা কেন ইহাকে অপৌত্তলিক গান মনে করি তাহা পরে বলিতেছি । গানটি ধে মুসলমানবিদ্বেষপ্রস্থত বা মুসলমানবিদ্বেষজনক নহে, সে বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই। মুসলমানদের কোন নিন্দ ইহাতে থাকা দূরে থাক, ইহার কোথাও মুসলমানদের উল্লেখ পৰ্য্যন্ত নাই। বরং ইহাতে মুসলমানদিগকেও মাতৃভূমির সন্তান বলিয়া ধরিয়া জন্মভূমি ষে সংঘশক্তিতে বলীয়সী তাহাই বলা হইয়াছে। গানটি রচনার সময় বিহার ও উড়িষ্যা বাংলার সহিত যুক্ত ছিল এবং সমগ্র বাংলা প্রদেশের লোকসংখ্যা তখন সাত কোটি ছিল। এই জন্য গানটিতে সপ্তকোটি কণ্ঠ ও দ্বিসপ্তকোটি ভুজের উল্লেখ । পরে যখন গানটিকে সমগ্র ভারতের উপযোগী করিবার নিমিত্ত সপ্তকে ত্রিংশ করা হয়, তখন ভারতবর্ষের লোকসংখ্যা ছিল ত্রিশ কোটি । সপ্ত কোটি ও ত্রিংশ কোটি উভয়ের মধ্যেই মুসলমান আছেন। জাতি ষে মুসলমানদেরও বলে বলীয়ান, বঙ্কিমচন্দ্র তাহাই বুঝাইতে চাহিয়াছিলেন। স্বতরাং গানটি মুসলমানবিরোধী নহে। ইহ “আনন্দমঠ” রচিত হইবার বহু পূর্বে রচিত হয়। সুতরাং “আনন্দমঠে" যদি মুসলমানবিরোধিতা থাকে, স্বাহ নাই আমরা বলিয়াছি, তাহ “বন্দেমাতরম্ গানে আরোপিত হওয়া উচিত নয়। “রিপুদলবারিণীম্‌” শব্দের *রিপুঘল” দ্বারা মুসলমান বুঝাইতে পারে না, কারণ সপ্ত কোটি প্রৰণসী SNరీశ్రీ : বা ত্রিংশ কোটি জাতীয় দলের মধ্যে মুসলমানদিগকে ধর হইয়াছে। যদি গানটিকে "আনন্দমঠে”র অংশ বলিয়ু ধরা হয়, তাহা হইলেও, যেহেতু ঐ পুস্তকে বর্ণিত যুদ্ধগুলি ইংরেজ কোম্পানীর ইংরেজ সেনাপতিদের দ্বারা চালিত সৈনিকদের বিরুদ্ধে হইয়াছিল, সেই জন্য যদি তাৎকালিক কোন দলকে লক্ষ্য করিয়া “রিপুদল” প্রযুক্ত হইয়াছিল, তাহ। হইলে তাহারা ঐ ইংরেজ সেনাপতিগণ ও তাহtvদর সৈনিকগণ । গানটি বাঙালী হিন্দুর রচিত। এই জন্য ইহাতে পৌরাণিক কোন কোন দেবতার নাম ও স্বরূপ ব্যবহার করিয়া কবি নিজের ভাব ও চিন্তা ব্যক্ত করিয়াছেন । তাহাতে গানটি পৌত্তলিক গান হইয়া যায় নাই। সে কথা পরে বলিতেছি । মাতৃভূমিতে ব্যক্তিত্ব আরোপ, চেতনা আরোপ, অহিন্দু অভারতীয় সভ্য জাতিরাও করিয়া গান ও কবিতা রচনা করিয়াছে ও করে। ইহা পৌত্তলিকতা নহে। মাতৃভূমিকে নমস্কার করাও পৌত্তলিকতা নহে। কোন কোন মুসলমান বলিয়াছেন, আমরা আল্লাহ ভিন্ন আর কাহারও কাছে নতি জানাই না ইহা কি সভ্য ? তাহারা কি কোন গুরুজনকে নতি জানান না, কোন প্রভুকে ঝু কিয়া সেলাম করেন না ? মাতৃভূমি অবগু বৈজ্ঞানিকের ভাষায় জড় পদার্থ। কিন্তু জাতীয় পতাকা কি তাহা অপেক্ষাও অধিক জড় পদার্থ নহে ? কোটি কোটি সচেতন মানুষ এবং অগণিত অন্ত প্রাণবান জীব ও উদ্ভিদ মাতৃভূমিতে বাস করে এবং আমরা মাতৃভূমি হইতে আমাদের প্রাণরক্ষার সমূদয় উপকরণ সংগ্ৰহ করি, আত্মার পুষ্টিও কম পাই না । কিন্তু পতাকা জিনিষটি হইতে ত তাহাও করি না। তথাপি কংগ্রেস পতাকাকে সেলাম করার বৈদেশিক রীতি চালাইয়াছেন, এবং তাহাতে ংগ্রেসী কোন মুসলমান আপত্তি করেন নাই। অধিকন্তু অ-কংগ্রেণী—কংগ্রেসবিরোধী—মোক্সেম লীগ তাহাদের একটি স্বতন্ত্র পতাকা উডঙীন করিয়াছেন । তাহা হইলে, “তোমাকে বন্দনা করি, মাতৃভূমিকে বলাতেই কি যত দোষ ? t “বন্দেমাতরম্ গানটিতে আছে, “ত্বং হি দুর্গ। দশপ্রহরণধারিণী, কমল কমলদলবিহারিণী, বাণী বিদ্যাদায়িনী । ইহার অর্থ অনেকে এই রূপ বুঝেন- আমিও তাই বুঝি, “তুমিই দুর্গ, তুমিই কমলা, তুমিই বাণী,” অস্ত কোন ছুর্গ, কমলা, বাণী নাই। এই রূপ ব্যাখ্যার সমর্থন “আনন্দমঠ” হইতেই পাওয়া যায় । ইহার শেষ एष१]iंश्च स्वांछ् ि३ “মহাপুরুষেরা যেরূপ বুঝাইয়াছেন, একথা তোমাকে সেইরূপ fৰাই, মনোযোগ দিয়া শুন । তেত্রিশ কোটি দেবতার পূজা