পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“যাহা পাই তাহ চাই না” শ্রীপারুল দেবী 3. বঁকিপুর শহরের যেদিকটা নূতন পাটনায় পরিণত হয় নাই, শহরের সেই দিকে একটি পুরাতন ছোট বাংলো। বাংলোটি ছোট হটলেও বাড়ীর চারি পাশের জমি কিন্তু অনেকখানি । কোনও এক সময়ে এই জমিতে বোধ হয় বাগান ছিল, তাহার চিহ্ন এখনও স্থানে স্থানে বর্তমান । সেইখানে এক দিন সকালবেলা একটা ছায়াবহুল নিমগাছের তলায় বসিয়া পিতা ও কস্তাতে শেলীর স্কাইলার্ক পড়া চলিতেছিল। পড়াট। বিদ্যালয়ের পরীক্ষার, কিন্তু ভবানীবাবু বা ইন্দু কাহারও কবিতা-পড়ায় স্কুলের তাগিদ ছিল না। শরতের প্রভাতে, নিৰ্ম্মল আকাশের নীচে, গাছের তলায় বসিয়া কবিতা পড়িতে পড়িতে পিতাপুত্রীর ভাবপ্রবণ হৃদয় শেলীর লার্কের সহিত আকাশে উড়িয়া গিয়াছিল—ভাবটা কতকট এইরূপ : পার্থী উড়িয়াছে—উদ্ধ হইতে উদ্ধে উড়িতে উড়িতে পার্থী দৃষ্টির বাহিরে মিলাইয় গেল, কিন্তু তখনও তাহার স্বরের রেশ থামে নাই এবং ইন্দুর কানে তাহাই আসিয়া বাঞ্জিতেছে। স্কাইলার্ক পড়া হইয়া গেল। ইন্দু একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া পিতার মুখের প্রতি চাহিয়া দীপ্ত মুখে বলিল, “কি স্বন্দর— না বাবা ?” পিতা কন্যার পিঠে হাত রাখিয়া সস্নেহে মৃদু মৃদু আধাত করিয়া আদর করিলেন । পাটনা কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক তিনি ; চিরটা কাল বই পড়িয়া ও পড়াইয়া কাটিল কিন্তু পড়ার তৃষ্ণা এখনও র্তাহার মেটে নাই । বাড়ীতে অনেকগুলি পরিবার— আয় তদনুরূপ নহে। ছেলেমেয়ের উপদ্রবে বাড়ীতে বসিয়া মন দিয়া পড়াশুনা করিবার সময়ও পাওয়া যায় না—স্থানেরও অভাব। নিজের একটি লাইব্রেরি করা আজন্মের আকাঙ্ক্ষা হইলেও তাহারও স্বযোগ মেলে নাই। মনে মনে আশা ছিল যে নিজের পুত্রকন্যা লইয়া বাড়ীর নিভৃত অবসরে শেষ জীবনে নিশ্চিন্ত মনে বিদ্যাচর্চা করিবেন, কিন্তু বড় ছেলেটি বার বার তিন বার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করিয়া গত বৎসর পিতার সে মাশা চুৰ্ণ করিয়া মোটরের কারখানায় ঢুকিয়া পড়িয়া পড়াশুনার হাত হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়া বাচিয়াছে। জ্যেষ্ঠ কুন্তাটির ১৩ বৎসর পূর্ণ হইতেনHহইতেই ভবানীবাবুর জ্যেষ্ঠা ভগিনী "মেয়ে বড় হইল, মেয়ে বড় হইল” বলিয়া এমনই সোরগোল তুলিয়াছিলেন যে সে মেয়েটিকে কিং রীডার হইতে “I remember, I remember the house where I was born” কবিতাটি পড়ান আরম্ভ করিবার পূৰ্ব্বেই ভবানীবাবু তাহার বিবাহ দিবার পথ পান নাই। তাই নিভৃত অবসরে বাড়ীতে সসন্তান বিদ্যাচর্চার আকাঙ্ক্ষা ভবানীবাবুর এখনও অপূর্ণ। তবে মধ্যম। কন্যা ইন্দু হয়ত পিতার সে আশ। কিছু পূর্ণ করিতেও পারে, এইরূপ একট। চিস্তা কিছু কাল হইতে ভবানীবাবুর মনে স্থান পাইয়াছে। উপযুপিরি প্রথম দুইটি পুত্রকন্যার নিকট বাধা পাইয়া তিনি ইন্দুর লেখাপড়ার দিকে প্রথমে তেমন মন দেন নাই। ভাবিয়াছিলেন বড়মেয়ে বিন্দুবাসিনীর মত এ মেয়েরও ছোটবেলায় মনোমোহিনী বালিক-বিদ্যালয়ে পড়িতে পড়িতে এবং মায়ের ও পিসীমার নিকট গুহকৰ্ম্মাদি শিখিতে শিখিতে এক দিন কোন সময়ে বিবাহ হইয়া পরের ঘরে চলিয়। যাইবে—কবিতা পড়াইবার সময় আর হইবে না। কিন্তু ইন্দু পিসীমা ও মায়ের প্রত্যহ সনুিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধ ও অসুযোগ সত্ত্বেও এক দিনও রান্নাঘরে ঢুকিল না, রুটি বেলিতে শিথিল না এবং এক দিন মনোমোহিমী বালিকা-বিদ্যালয় হইতে সসম্মানে প্রবেশিক পরীক্ষ পাস করিয়া রৌপ্যপদক লইয়া গৃহে ফিরিল। কন্যার কৃতিত্বে মা গৌরব বোধ করিলেন। পদকখানি হাতে লইয়ু নাড়াচাড়া করিয়ু হাসিমুখে কনিষ্ঠপুত্র রমণী মোহনকে ডাকিয়া বলিলেন, “যা ত রে, রায়বাড়ীর মেস বৌদিকে এটা দেখিয়ে আয় ত। বলিস্ মেজদি ভাল ক’রে পাস করেছে, তাই মেডেল পেয়েছে। মোহিনী কলেজের এগজামিন পাস করতে পারে নি ব'লে বাছাকে ওরা কঠ কথাই না শোনাত বাপু—আমার গা জাল করত গুণে । এই ধর, দেখিয়ে আয় গিয়ে।” পিসীমা পাশের ছোট ঘরে রান্না করিতেছিলে । উনান হইতে কড়াটা নামাইয়া মুখ বাড়াইয়া বলিলে , “থাক্, থাক, মেয়েমানুষের বিধ্যে আর আত জাক ক' : ব’লে বেড়াতে হবে না । ছেলে পাস ক’রে মেলে ঘরে আনত ত ই্য-সে হ’ত বটে স্বখের কথা । যার । কাজ ! এ মেয়ের এতখানি বয়সে একটা তরকারি রাধব ।