পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ সত্যগ্রহের দার্শনিক ভিত্তি ও কৌশল רי8S9 ১৯২০ সালে গান্ধীজী সকলকে কারাবরণ পৰ্য্যস্ত অগ্রসর হইতে বলিয়াছিলেন। ১৯৩• এ কিন্তু স্পষ্টভাবে বলিয়াছিলেন জোতঞ্জমি, সংসার-সম্পত্তি সবই আমাদিগকে খোৱা দিতে হইবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ইহাও শুনাইয়া রাখিয়াছিলেন যে অপরকে না মারিয়া স্বেচ্ছায় মৃত্যু পৰ্য্যস্ত অগ্রসর না হইলে আমাদের দ্বারা মুক্তিলাভ হইবে না। এইভাবে ক্রমবৃদ্ধির পথে তিনি ভারতবর্ষের অধিবাসিগণকে স্বরাজ লাভের পথে আগাইয়া যাইতে বলেন । কেহ কেহ বলেন যে গান্ধীজী বিপ্লবী নহেন, তিনি মডারেটগণের মত সংস্কারপন্থী। কিন্তু গান্ধীজী স্পষ্টতঃই বিপ্লবী, কেননা তিনি মৃত্যুর দাম দিয়া মূল্যবান স্বরাজ লাভ করিতে চান। মডারেটগণ একটি লাভ হইতে বৃহত্তর লাভের চেষ্টা করেন। সে লাভ বৈষয়িক । গান্ধীজী একটি লোকসান হইতে বৃহত্তর লোকসানের দিকে জনগণকে লইয় যান। তাহাতে বৈষয়িক ভাবে লোকসান হয় বটে, কিন্তু অস্তরে মামুষের বল বুদ্ধি পায় অর্থাৎ বৈষয়িক না হইলেও আধ্যাত্মিক লাভ হইয়া থাকে। যথাসময়ে ইহার দ্বারা মানুষ জগতে স্থখের নীড় গড়িয়া তুলিতে পারিবে এই আশা গান্ধীজী সৰ্ব্বদাই পোষণ করেন। অতএব সত্যাগ্রহ-বিপ্লবের প্রথম কৌশল হইল ইহা ক্রমবুদ্ধির পথে মানুষকে ত্যাগ ও সাহসের এবং আদর্শবাদের শেষ পৰ্য্যস্ত লইয়া যায় । (২) দ্বিতীয় নিয়ম হইল যে সত্যাগ্রহের সময়ে সত্যাগ্রহী ধে দাবি করিবেন তাহ যেন কদাপি অস্থায় না হয়। শুধু তাহাই নয়। আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি যদি চার জানা হয় তবে সত্যাগ্রহী দুই জানা মাত্র দাবি করিয়া লড়াই করিতে থাকিবেন। কিন্তু সেই দুই আনা দাবির জন্ত ষে দিন লড়াই করা তাহার স্থির করিবেন সেদিন হইতে ধেন তাহারা পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখিলেও কিছুতেই দুই জানাকে ছাড়িং এক আন না করেন অথবা আশু জয়ের উৎফুল্লতায় যেন হই আনাকে বাড়াইয়া তিন আনার দাবিও করিয়া না. বসেন। সেই যুদ্ধ যত দিন চলিবে তত দিন দুই আনার অতিরিক্ত বা কম আর কিছুই যেন তাহাদের দাবি না হয়। দাবি দুই আন কি তিন আনা করিবেন তাহা স্থির করিবার পূৰ্ব্বে র্তাহারা সহস্রবার চিন্তা করিবেন। কিন্তু একবার তাহা স্থির হইয়া গেলে কখনও সেই দাবি হইতে র্তাহারা আগাইবেনও না, পিছাইখেনও না। এ নিষ্ঠা সত্যাগ্রহীদের নিশ্চয়ই থাকা চাই । দাবি স্থির করার ব্যাপারে তাহারা সৰ্ব্বদা অল্পের দিকে থাকিতে চেষ্টা করিবেন ইহা সত্যাগ্রহ-সংগ্রামের দ্বিতীয় কৌশল । প্রতিপক্ষ হয়ত বৃহৎ দাবিতে ভয় পাইয়া ছোট দাবি স্বীকার করিয়া লইতে পারে । কিন্তু প্রতিপক্ষকে ভয় দেখান, মানুষ হিসাবে তাহাকে আরও হীন করিয়া কিছু আদায় করিয়া লণ্ডয়া সভাপ্রহীর উদ্বেগু নয়। নিজেদের দাবি এমন হওয়া চাই ধেম শক্রতেও তাহা স্কায়তঃ অস্বীকার করিতে ন পারে। তাহা হইলে জগতের লোক সংবাদ পাইলে সত্যাগ্রহীদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হইবে এবং সত্যাগ্রহীদের নিজের মধ্যেও বাধন দৃঢ় থাকিবে, অন্যথা তাহা শিথিল হইবার সম্ভাবনা আছে । (৩) সঙ্গে সঙ্গে গান্ধীজী আরও একটি সতর্ক-বাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন অনেক সময়ে জনগণকে সত্যাগ্রহে ཙེ་ཝཱ.s করা কঠিন ব্যাপার হইয়া দাড়ায় । সেই সময়ে কেহ কেহ তাহাদের জাগরিত করিবার জন্ত খাজনা বন্ধ বা অনুরূপ কোনও আন্দোলনে আহবান করিতে চান। খাজনা বন্ধের লোভে অর্থাৎ আগু লাভের আশায় উত্তেজিত হইয়া হয়ত জনগণ সত্যাগ্রহীর নেতৃত্ব স্বীকার করিতে পারে ; কিন্তু গান্ধীজী ইহাকে সত্যাগ্রহীর পক্ষে ভূল পথ বলিয়া বিবেচনা করেন। যদি জনগণ ঠিক বুঝিয়া থাকে যে খাজনা বন্ধের ফলে তাহাঁদের জোত জমি, গরু বাছুর নিলাম হইয়া যাইবে, তাহাদের জেলে কঠিন কষ্ট স্বীকার করিতে হইবে এবং বুঝিয়াও যদি তাহারা প্রস্তুত থাকে, অহিংসার সঙ্কল্পে অবিকল থাকে তবেই স্বরাজ লাভের জন্য খাজনা বন্ধের মত কঠিন পখে সত্যাগ্রহী নামিবেন । কিন্তু যদি জনগণকে জাগরিত করা যাইতেছে না বলিয়া সত্যাগ্রহীগণ শুধু সংখ্যা বৃদ্ধির জন্ত বা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাইবার জন্ত এইরূপ আন্দোলন করেন তবে সত্যাগ্রহ আর সত্যাগ্ৰহ থাকিবে না। অহিংসা বজায় থাকিবে না এবং জনগণের পক্ষে জয়ের পরিবর্ভে অস্তে পরাজয়ের সম্ভাবনা বেশী হইয়া দড়িাইবে । (৪) সত্যাগ্রহের আর একটি নিয়ম হইল সত্যাগ্ৰহী সৰ্ব্বদাই