পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՑԳՆ প্রবাসী ॐN©38 পঞ্চানন বসিয়া বসিয়া মৃণালকে ভাল করিয়া দেখিয়া লইতেছিল। সে জাদর্শ সনাতনপন্থী হিন্দু, বিবাহের আগে স্ত্রী-পুরুষের পরস্পরকে চোখে দেখাটাকেও অনাচার বলিয়া প্রচার করে। তাই বলিয়া ভাবী বধু সামনে যদি দৈবগতিকে পড়িয়া যায়, তাহা হইলে দেখিতে দোষ কি ? দেখিতে ত বেশ ভালই লাগে। গায়ের রং গুণমবর্ণ, ইহা ভিন্ন মেয়েটির চেহারার বিশেষ কোন খুং নাই। তরুণ লাবণ্যমণ্ডিত মুখখানি নয়নাভিরাম, শরীরের গঠন চমৎকার, গ্রীবার উপর বিপুল কবরী এলাইয়া পড়িয়াছে, খুবই স্ককেশী হইবে। ইহার সহিত বিবাহটা ঘটিয়া গেলে পঞ্চানন নিজেকে হতভাগ্য মনে করিবে না। কিন্তু মেয়েটি বোধ হয় অতিরিক্ত স্বাধীনতাপ্রিয়, ধরণধারণ কেমন যেন উগ্র । ইহার ভিতর স্ত্রীস্থলভ নম্রতা, লজ হয়ত কমই। তাহ হইলেও উহাকে পথে আনিতে পঞ্চাননকে বেগ পাইতে হইবে । তা নিজের ক্ষমতার উপর পঞ্চাননের আস্থা আছে । বিরক্তির ভাবট। তাহার মুখে মানাইয়াছে মন্দ নয়, কিন্তু হিন্দুকুলনারীর বিরক্ত হওয়াও উচিত নয়, ইহাই ছিল পঞ্চাননের মত। তাহারা সৰ্ব্বংসহ ধরিত্রীর মত সকল অবস্থাতেই শাস্ত থাকিবে । যদিও মৃণাল এখনও তাহার পত্নী হয় নাই, তবু পঞ্চাননের মনে তাহাকে হিন্দুনারীর আদর্শ সম্বন্ধে একটা উপদেশ দিবার ইচ্ছা ক্রমে মাথা তুলিয়া উঠিতে লাগিল । পরের ষ্টেশনটায় কপালগুণে সত্যই তিন-চারজন মানুষ নামিয়া গেল, কিন্তু উঠিয়াও পড়িল চার-পাচজন। কাজেই বসিবার জায়গা পাওয়ার আশা মৃণালের মনে উদিত হইয়াই মিলাইয়া গেল। যাহারা উঠিল তাহারা সব কয়জনই পুরুষ, কাজেই ঠেলাঠেলি করিয়া তাহাঙ্গের ভিতর বসিয়া পড়াও সম্ভব নয় । মৃণাল যেখানে দাড়াইয়া ছিল, তাহারই পাশের বেঞ্চে দুইজন যুবক আসিয়া বসিয়া পড়িল । কিন্তু একজন চারিদিকে চাহিয়া আবার উঠিয়া দাড়াইল এবং মৃণালের দিকে তাকাই বলিল, “আপনি বসুন।” মৃণাল বসিল, বসিতে পাইয়া বাচিাই গেল। ধে-যুবকটি নিজে উঠা তাহাকে বসিবার জায়গা করিয়া দিল, তাহার দিকে একবার ভাল করিয়া তাকাইয়া দেখিল । মানুষটা বেশ স্বত্র, রং ফরসা, লম্বা একহার চেহারা। মুখের ভাব বেশ মার্জিত, সপ্রতিভ। কলিকাতাবাসী মামুব বোধ হয়, পাড়াগায়ে বেড়াইতে আসিয়া থাকিবে । সহযান্ত্ৰিণীদের সম্বন্ধে অত্যুগ্র কৌতুহলও নাই, আবার তাহাজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে অচেতনও নয় । উণ্টাদিকের বেঞ্চ হইতে পঞ্চানন হঠাৎ হাক দিয়া উঠিল, “বিমূলে, এ দিকে আয়।” ছেলেটি ভিড় ঠেলিতে ঠেলিতে পঞ্চাননের কাছে অগ্রসর হইয়া গেল। জিজ্ঞাসা করিল, “কি ব্যাপার ? বসবার জায়গা আছে ?” পঞ্চানন মুখভদী করিয়া বলিল, “হ্যা, জায়গা ত কাদছে। গাধার মত জায়গা পেয়েও ত ছেড়ে দিলি ।” কথাগুলা অবগু সে নীচু গলাতেই বলিল, কিন্তু এতটা নীচু নয় যে গাড়ীর অন্য লোকে শুনিতে পাইল না । মৃণাল মনে মনে বলিল, “গাধা ও ত নয়, গাধা তুমি।” বিমল নামক ছেলেটি বলিল, “তা কি করব, অতগুলি মেয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।” পঞ্চানন বলিল, “ত থাক্‌ না দাড়িয়ে আমাদের দেশের মেয়েরা ত মেমসাহেব নয় বা মোমের পুতুলও নয়। পাচ মিনিট দাড়ালেই মৃচ্ছা যাবে না।” বিমল বলিল, “না, তা কি যায় ? তুমি থাক না ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে, কেমন আরাম লাগে দেখি ” পঞ্চানন বলিল, “খুব পারি, তোমাদের মত শহরে ‘গ্যালান্ট” নই। নিজেও গ’লে যাই না, অষ্ঠের গ'লে যাবার ভয়ও রাখি না ।” বিমল বলিল, “তা বেশ কর । এখন ঐ ঢাকাই জালাটি বাক্সটার ওপর থেকে নামাও দেখি, আমি বান্ধটার ওপরে বসি । এক জালা ভৰ্ত্তি ক'রে কি নিয়ে যাচ্ছ ? গঙ্গাজল নিশ্চয়ই নয়, সে ত কলকাতাতেই পাওয়া যায়।” পঞ্চানন বলিল, “এই পাচ সেরি ইাড়িটা হ’ল ঢাকাই জালা ? তুমি একেবারে মূৰ্ত্তিমান চাদের আলো থেকে ক্যালকেশিয়ান কবি । ওতে ধি আছে হে শ্ৰীমান, বাড়ীর তৈরি গাওয়া ৰি।” বিমল বলিল, “সাধে এই বয়সে অত বড় ষ্টুড়ি তোর । এই পাচ সের ঘি একলা গিলবি ?”