পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSR প্রবাসী SN988 দেখি একটি মেয়ে ওঁর ঘরের উত্তর দিকের বেড়ার গা বেয়ে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। তথনি হুজুর আমি নিজে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকলাম। অতটুকু সময়ের মধ্যে লুকোবে কোথায়, যাবেই বা কত দূর ? বিশেষ ক’রে আমরা জঙ্গল জরীপ করি, অন্ধিসন্ধি সব আমাদের জানা । কত খুঁজলাম বাবু, কোথাও তার চিহ্নটি পাওয়া গেল না। শেষে আমার কেমন সন্দেহ হ’ল, মাটিতে আলো ধ’রে দেখি কোথাও পায়ের দাগ নেই, আমার নাগরা জুতোর দাগ ছাড়া । আমীন বাবুকে আমি একথা বললাম না আর সেদিন । এক দুটি প্রাণী থাকি এই ভীষণ জঙ্গলের মধ্যে, হুজুর। ভয়ে আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। আর বোমাইবুরু জঙ্গলের একটু দুনামও শোনা ছিল। ঠাকুরদাদার মুখে শুনেছি, বোমাইবুরু পাহাড়ের উপর ওই যে বটগাছটা দেখছেন দূরে, একবার তিনি পূর্ণিয়া থেকে কলাই বিক্রির টাকা নিয়ে জ্যোৎস্না-রাত্রে ঘোড়ায় ক’রে জঙ্গলের পথে ফিরছিলেন—ওই বটতলায় এসে দেখেন এক দল অল্পবয়সী সুন্দরী মেয়ে হাতধরাধরি ক’রে জ্যোৎস্নার মধ্যে নাচছে। এদেশে বলে ওদের, ডামাবাণু –এক ধরণের জীনপরী, নির্জন জঙ্গলের মধ্যে থাকে। মানুষকে বেঘোরে পেলে মেরেও ফেলে। হুজুর, পরদিন রাত্রে আমি নিজে আমীন বাবুর র্তাবুতে শুয়ে জেগে রইলাম সারারাত। সারারাত জেগে জরীপের থাকবন্দীর হিসেব কষতে লাগলাম। বোধ হয় শেষ রাতের দিকে একটু তন্দ্র এসে থাকবে—হঠাৎ কাছেই একটা কিসের শব্দ শুনে মুখ তুলে চাইলাম—দেখি আমীন সাহেব ঘুমুচ্ছেন ওঁর খাটে আর থাটের নীচে কি একটা ঢুকেছে। মাথা নীচু ক’রে খাটের নীচে দেখতে গিয়েই চমকে উঠলাম। আধ-আলো আধঅন্ধকারে প্রথমটা মনে হ’ল একটি মেয়ে যেন গুটিমুটি মেরে খাটের তলায় বসে আমার দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছে—পষ্ট দেখলাম হুজুর, আপনার পায়ে হাত দিয়ে বলতে পারি। এমন কি, তার মাথায় বেশ কালো চুলের গোছ পৰ্যন্ত স্পষ্ট দেখেছি। লণ্ঠনটা ছিল যেখানটাতে বসে হিসেব করছিলাম সেখানে—হাত ছ-সাত দূরে। আরও ভাল ক’রে দেখব ব’লে লণ্ঠনটা যেমন আনতে গিয়েছি, কি একটা প্রাণী ছুটে খাটের তলা থেকে বেরিয়ে পালাতে গেল—দোরের কাছে লণ্ঠনের আলোটা বাক৷ ভাবে পড়েছিল, সেই আলোতে দেখলাম একটা বড় কুকুর, কিন্তু তার আগাগোড়া সাদা, হুজুর, কালোর চিহ্ন কোথাও নেই তার গায়ে । আমীন সাহেব জেগে বললেন—কি, কি ? বললাম—ও কিছু নয়, একটা শেয়াল কি কুকুর ঘরে ঢুকেছিল। আমীন সাহেব বললেন-কুকুর ? কি রকম কুকুর ? বললাম—সাদ কুকুর । আমীন সাহেব যেন একটা নিরাশার সুরে বললেন—সাদা ঠিক দেখেছ ? না কালো ? বললাম—না সাদাই হুজুর। আমি একটু বিস্মিত যে না হয়েছিলাম এমন নয়-- সাদা না হয়ে কালো হ’লেই বা আমীন বাবুর কি স্থবিধে তাতে হবে বুঝলাম না। উনি ঘুমিয়ে পড়লেন-- কিন্তু আমার যে কেমন একটা ভয় ও অস্বস্তি বোধ হ’ল কিছুতেই চোখের পাত বুজাতে পারলাম না। খুব সকালে উঠে থাটের নীচেট একবার কি মনে ক’রে ভাল ক’রে খুজতে গিয়ে দেখি সেখানে একগাছা কালো চুল পেলাম। এই সে চুলও রেখেছি, হুজুর। মেয়েমানুষের মাথার চুল। কোথা থেকে এল এ চুল ? দিব্যি কালে কুচকুচে নরম চুল। কুকুর-বিশেষতঃ সাদা কুকুরের গায়ে এত বড়, নরম কালো চুল হয় না। এ হ’ল গত রবিবার অর্থাৎ আজ তিন দিনের কথা । এই তিন দিন থেকে আমীন সাহেব ত এক রকম উন্মাদ হয়েই উঠেছেন । আমার ভয় করছে হুজুর—এবার আমার পালা কিনা তাই ভাবছি। গল্পটা বেশ আষাঢ়ে-গোছের বটে। সে চুলগাছি হাতে করিয়া দেখিয়াও কিছু বুঝিতে পারিলাম না। মেয়েমামুষের মাথার চুল, সে-বিষয়ে আমারও কোনো সন্দেহ রহিল না। আসরফি টিগুেল ছোকৃরা মানুষ, সে যে নেশাভাং করে না, একথা সকলেই একবাক্যে বলিল । • জনমানবশূণ্ঠ প্রান্তর ও বনঝোপের মধ্যে একমাত্র তাৰু এই আমীনের । নিকটতম লোকালয় হইতেছে