পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS8 প্রবাসী SN988 দিন কালো। এক দিন মেয়েমানুষটা বেরিয়ে যেতেই আমি পেছন পেছন গেলাম। কাশের জঙ্গলের মধ্যে কোথায় পালিয়ে গেল, টের পেলাম না। ফিরে এসে দেখি ছেলে আমার যেন খুব ঘুমের ভান ক’রে পড়ে রয়েছে, ডাকতেই ধড়মড় ক’রে ঠেলে উঠল, যেন সদ্য ঘুম ভেঙে উঠল। এ রোগের ওষুধ কাছারি ভিন্ন হবে না বুঝলাম, তাই হুজুরের কাছে— ছেলেটিকে আড়ালে লইয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম— এ সব কি শুনছি তোমার নামে ? ছেলেটি আমার পা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল-আমার কথা বিশ্বাস করুন হুজুর । আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি না । সমস্ত দিন জঙ্গলে মহিষ চরিয়ে বেড়াই—রাতে মড়ার মত ঘুমুহ, ভোর হ’লে তবে ঘুম ভাঙে। ঘরে আগুন লাগলেও আমার হুশ থাকে না । বলিলাম—তুমি কোন দিন কিছু ঘরে ঢুকতে দেখ নি ? —ন, হুজুর । আমার ঘুমুলে ছশ থাকে না। এ-বিষয়ে আর কোনো কথা হইল না। বৃদ্ধ খুব খুশী হইল, ভাবিল আমি আড়ালে লইয়া গিয়া ছেলেকে খুব শাসন করিয়া দিয়াছি। দিন-পনর পরে এক দিন ছেলেটি আমার কাছে আসিল । বলিল—হুজুর, একটা কথা আছে । সেবার যখন আমি বাবার সঙ্গে কাছারিতে এসেছিলাম, তখন আপনি ও-কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন যে আমি কোনও কিছু ঘরে ঢুকতে দেখেছি কি না ? — কেন বল ত ? —হুজুর, আমার ঘুম আজকাল খুব সজাগ হয়েছে। বাবা ওই রকম করেন ব’লে আমার মনে কেমন একটা ভয়ের দরুনই হোক বা যার দরুনই হোক। তাই অাজ ক-দিন থেকে দেখছি, রাত্রে একটা সাদা কুকুর কোথা থেকে আসে—অনেক রাত্রে আসে, ঘুম ভেঙে এক-এক দিন দেখি সেটা বিছানার কাছেই কোথায় ছিল—আমি *জেগে শব্দ করতেই পালিয়ে যায়—কোনও দিন জেগে উঠলেই পালায়। সে কেমন বুঝতে পারে যে এইবার আমি জেগেছি। এ-রকম ত ক-দিন দেখলাম—কিন্তু কাল রাতে হুজুর, একটা ব্যাপার ঘটেছে। বাপজী জানে না, কেউ জানে না—আপনাকেই চুপি চুপি বলতে এলাম। কাল অনেক রাতে ঘুম ভেঙে দেখি কুকুরটা ঘরে কখন ঢুকেছিল দেখি নি—আস্তে আস্তে ঘর থেকে বার হয়ে যাচ্ছে । সেদিকের কাশের বেড়ায় জানালার মাপে কাটা ফাক। কুকুর বেরিয়ে যাওয়ার পরে—বোধ হয় পলক ফেলতে যতটা দেরি হয় তার পরেই, আমার সামনের জানালা দিয়ে দেখি একটি মেয়েমানুষ জানালার পাশ দিয়ে ঘরের পেছনের জঙ্গলের দিকে চলে গেল । আমি তখুনি বাইরে ছুটে গেলাম—কোথায় কিছু না। বাবাকেও জানাই নি, বুড়ে মানুষ ঘুমুচ্ছে। ব্যাপারটা কি হুজুর বুঝতে পারছি নে। আমি তাহাকে আশ্বাস দিলাম ও কিছু নয় চোখের ভুল, বলিলাম, যদি তাহাদের ওখানে থাকিতে ভয় করে তাহারা কাছারিতে অসিয়া শুইতে পারে। ছেলেটি নিজের সাহসহীনতায় বোধ করি কিঞ্চিং লজ্জিত হইয়া চলিয়া গেল। কিন্তু আমার অস্বস্তি দূর হইল না, ভাবিলাম এইবার কিছু শুনিলে কাছারি হইতে দুই জন সিপাহী পাঠাইব রাত্রে ওদের ঘরে শুইবার জন্য । তখনও বুঝিতে পারি নাই জিনিষটা কত সঙ্গীন। দুর্ঘটনা ঘটিয়া গেল অতি অকস্মাং এবং অতি অপ্রত্যাশিত ভাবে | সকালে সবে বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়াছি, খবর পাইলাম কাল রাত্রে বোমাইবুরু জঙ্গলে বৃদ্ধ ইজারাদারের ছেলেটি মারা গিয়াছে । ঘোড়ায় চড়িয়া আমরা তখনি রওনী হইলাম। গিয়া দেখি তাহার যে-ঘরটাতে থাকিত তাহারই পিছনে কাশ ও বনঝাউ জঙ্গলে ছেলেটির মৃতদেহ তখনও পড়িয়া আছে । মুখে তাহার ভীষণ ভয় ও আতঙ্কের চিহ্ন—কি একটা বিভীষিকা দেখিয়া আঁতকাইয় যেন মারা গিয়াছে। বুদ্ধের মুখে শুনিলাম শেষ রাত্রির দিকে উঠিয়া ছেলেকে সে বিছানায় নীদেখিয়া তখনি লণ্ঠন ধরিয়া খোজাখুজি আরম্ভ করেকিন্তু ভোরের পূৰ্ব্বে তাহার মৃতদেহ দেখিতে পাওয়া যায় নাই। মনে হয় সে হঠাৎ বিছানা হইতে উঠিয়া কোনো কিছুর অনুসরণ করিয়া বনের মধ্যে ঢোকে—কারণ