পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कोङ्घन्। অণরণ্যক WE&位 মৃতদেহের কাছেই একটা মোটা লাঠি ও লণ্ঠন পড়িয়া ছিল, কিসের অনুসরণ করিয়া সে বনের মধ্যে রাত্রে এক আসিয়াছিল তাহা বলা শক্ত, কারণ নরম বালি মাটির ওপরে ছেলেটির পায়ের দাগ ছাড়া অন্য কোনো পায়ের দাগ নাই—না মানুষ, না জানোয়ারের। মৃতদেহেও কোনো রূপ আঘাতের চিহ্ন ছিল না। বোমাইবুরু জঙ্গলের এই রহস্যময় ব্যাপারের কোনো মীমাংসাই হয় নাই, পুলিস আসিয়া কিছু করিতে না-পারিয়া ফিরিয়া গেল, লোকজনের মনে এমন একটা আতঙ্কের হুষ্টি করিল ঘটনাটি যে সন্ধ্যার বহু পূৰ্ব্ব হইতে ও-অঞ্চলে আর কেহ যায় না । দিনকতক ত এমন হইল যে কাছারিতে একলা নিজের ঘরটিতে শুইয়া বাহিরের ধপধপে শাদা, ছায়াহীন, উদাস, নির্জন জ্যোৎস্না-রাত্রির দিকে চাহিয়া কেমন একটা অজানা আতঙ্কে প্রাণ র্কাপিয় উঠিত, মনে হঠত কলিকাতায় পালাই, এ-সব জায়গা ভাল নয়, এর জ্যোৎস্নাতরা নৈশ প্রকৃতি রূপকথার রাক্ষসী রাণীর মত, তোমাকে ভুলাইয় বেঘোরে লইয়া গিয়া মারিয়া ফেলিবে । বেন এ-সব স্থান মানুষের বাসভূমি নয় বটে, কিন্তু ভিন্ন লোকের রহস্যময়, অশরীরী প্রাণীদের রাজ্য, বহুকাল ধরিয়া তারাই বসবাস করিয়া আসিতেছিল, আজ হঠাৎ তাদের সেই গোপন রাজ্যে মানুষের অনধিকারপ্রবেশ তাহারা পছন্দ করে নাই, সুযোগ পাইলেই প্রতিহিংসা লহঁতে ছাড়িবে না । মাঝে মাঝে রাজু পাড়ের সঙ্গ আমার বড় ভাল লাগিত। রাজুর মত মানুষ এ-সব অঞ্চলে বড় বেশী দেখা যায় না। প্রথম রাজু পাড়ের সঙ্গে যেদিন আলাপ হইল, সেদিনটা আমার বেশ মনে হয় আজও । কাছারিতে সিয়া কাজ করিতেছি, একটি গৌরবর্ণ স্থপুরুষ ব্রাহ্মণ আমাকে নমস্কার করিয়া দাড়াইল । তাহার বয়স পঞ্চায়উাপান্ন হইবে, কিন্তু তাহাকে বৃদ্ধ বলিলে ভুল করা হয়, কারণ তাহার মত মুগঠিত দেহ বাংলা দেশে অনেক যুবকেরও নাই । কপালে তিলক, গায়ে একখানি সাদা চাদর, হাতে একটা ছোট পুটুলি। আমার প্রশ্নের উত্তরে লোকটি বলিল সে বহুদূর হইতে আসিতেছে, এখানে কিছু জমি বন্দোবস্ত লইয়া চাষ করিতে চায় । অতি গরিব, জমির সেলামী দিবার ক্ষমতা তাহার নাই, আমি সামান্য কিছু জমি ষ্টেটের সঙ্গে আধা বখরায় বন্দোবস্ত দিতে পারি কি না ? এক ধরণের মাহুষ আছে, নিজের সম্বন্ধে বেশী কথা বলিতে জানে না, কিন্তু তাহাদের মুখের ভাব দেখিলেই মনে হয় যে সত্যই বড় দুঃখী। রাজু পাড়েকে দেখিয়া আমার মনে হইল এ,অনেক আশা করিয়া ধরমপুর পরগণা হইতে এত দূর ਬਾਂ জমির লোভে, জমি না পাইলে কিছু না বলিয়াই ফিরিয়া যাইবে বটে, কিন্তু বড়ই আশাভঙ্গ ও ভরসাহারা হইয়া ফিরিবে । রাজুকে দু-বিঘা জমি লবটুলিয়া বহহারের উত্তরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে বন্দোবস্ত দিলাম, এক রকম বিনামূল্যেই। বলিয়া দিলাম জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া সে আবাদ করুক, প্রথমে দু-বৎসর কিছু লাগিবে না, তৃতীয় বৎসর হইতে চার আনা বিধাপিছু খাজনা দিতে হইবে। তখনও বুঝি নাই কি অদ্ভূত ধরণের মাহুষকে জমিদারীতে বসাইলাম ! রাজু আসিল ভাদ্র কি আশ্বিন মাসে, জমি পাইয়া চলিয়াও গেল, তাহার কথা বহু কাজের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ভুলিয়া গেলাম। পর বৎসর শীতের শেষে হঠাৎ এক দিন লবটুলিয়া কাছারি হইতে ফিরিতেছি, দেখি একটি গাছতলায় কে বসিয়া কি একখানা বই পড়িতেছে । আমাকে দেখিয়া লোকটি বই মুড়িয়া তাড়াতাড়ি উঠিয় দাড়াইল । আমি চিনিলাম, সেই রাজু পাড়ে। কিন্তু অার-বছর জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার পরে লোকটা এক বারও কাছারিমুখে হইল না, এর মানে কি ? বলিলাম— কি রাজু পাড়ে, তুমি আছ এখানে ? আমি ভেবেছি তুমি জমি ছেড়ে ছুড়ে চলে গিয়েছ বোধ হয় । চাষ কর নি ? দেখিলাম ভয়ে রাজুর মুখ শুকাইয়া গিয়াছে। আমতাআমতা করিয়া বলিল—ই, হুজুর—চাষ কিছু—এবার হুজুর— 餐 আমার কেমন রাগ হইয়া গেল। এই সব লোকের মুখ বেশ মিষ্টি, লোক ঠকাইয়া গায়ে হাত বুলাইয়া কাজ ।