পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆRరి প্রবাসী SNS28宮 উঠে নাই। শুনিতাম মহালিখারূপের পাহাড় দুর্গম বনাকীর্ণ, শঙ্খচূড় সাপের আড্ডা, বনমোরগ, দুপ্রাপ্য বন্ত চন্দ্রমল্লিক, বড় বড় ভাল্লুক ঝোড়ে ভৰ্ত্তি। পাহাড়ের উপরে জল নাই বলিয়া বিশেষত: ভীষণ শঙ্খচূড় সাপের ভয়ে এ অঞ্চলের কাঠুরিয়ারাও কখনও ওখানে যায় না। দিক্‌চক্রবালে দীর্ঘ নীলরেখার মত পরিদৃশ্যমান এই পাহাড় ও বন দুপুরে, বিকালে, সন্ধ্যায় কত স্বপ্ন আনে মনে । একে ত এদিকের সারা অঞ্চলটাই আজকাল আমার কাছে পরীর দেশ বলিয়া মনে হয়, এর জ্যোৎস্না, এর বন বনানী, এর নির্জনতা, এর নীরব রহস্য, এর সৌন্দৰ্য্য, এর মানুষজন, পার্থীর ডাক, বন্ত ফুলশোভা সবই মনে হয় অদ্ভুত, মনে এমন এক গভীর শাস্তি ও আনন্দ জানিয়া দেয়, জীবনে যাহা কোথাও কখনও পাই নাই । তার উপরে বেশী করিয়া অভূত লাগে ওই মহালিখারূপের শৈলমালা ও মোহনপুর রিজার্ভ ফরেষ্টের সীমারেখা। কি রূপলোক যে ইহারা ফুটাইয়া তোলে দুপুরে, সন্ধ্যায়, বৈকালে, জ্যোৎস্নারাত্রে—কি উদাস চিন্তার স্বষ্টি করে মনে ! এক দিন পাহাড় দেখিব বলিয়া বাহির হইলাম। ন-মাইল ঘোড়ায় গিয়া দুই দিকের দুই শৈলশ্রেণীর মাঝের পথ ধরিয়া চলি । দুই দিকের শৈলসান্স বনে ভরা, পথের ধারে দুই দিকের বিচিত্র ঘন বনঝোপের মধ্য দিয়া স্বড়ি পথ অকিয়া বাকিয়া চলিয়াছে, কখনও উচু নীচু, মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাৰ্ব্বত্য ঝরণা উপলদ্ভূিত পথে বহিয়া চলিয়াছে, বন্য চন্দ্রমল্পিক ফুটিতে দেখি নাই, কারণ তখন শরৎকাল, চন্দ্রমল্পিকা ফুটিবার সময়ও নয়, কিন্তু কি অজস্র বন্ত শেফালিবৃক্ষ বনের সর্বত্র, ফুলের খই ছড়াইয়। রাখিয়াছে বৃক্ষতলে, শিলাখণ্ডে, ঝরণার উপলাকীর্ণ তীরে। আরও কত কি বিচিত্র বন্যপুষ্প ফুটিয়াছে বর্ষাশেষে, পুষ্পিত সপ্তপর্ণের বন, অর্জুন ও পিয়াল ; নানাজাতীয় লতা ও অর্কিডের ফুল—বহুপ্রকার পুষ্পের স্বগন্ধ একত্র মিলিত হইয়া মৌমাছিদের মত মানুষকেও নেশায় ‘মাতাল করিয়া তুলিতেছে। এত দিন এখানে আছি, এ সৌন্দৰ্য্যভূমি আমার কাছে অজ্ঞাত ছিল। মহালিখারূপের জঙ্গল ও পাহাড়কে দূর হইতে ভয় করিয়া আসিয়াছি, বাঘ আছে, সাপ আছে, ভালুকের নাকি লেখাজোখা নাই—এ পর্য্যন্ত ত একটা ভালুকঝোড় কোথাও দেখিলাম না। লোকে যতটা বাড়াইয়া বলে, ততটা নয়। ক্রমে পথটার দু-ধারে বন ঘনাইয়া পথটাকে যেন দু-দিক হইতে চাপিয়া ধরিল । বড় বড় গাছের ডালপালা পথের উপর চন্দ্রাতপের সৃষ্টি করিল । ঘনসন্নিবিষ্ট কালো কালো গাছের গুড়ি, তাদের তলায় কেবলই নানাজাতীয় ফার্ণ, কোথাও বড় গাছেরই চারা । সামনে চাহিয়া দেখিলাম পথটা উপরের দিকে ঠেলিয়া উঠিতেছে, বন আরও কৃষ্ণায়মান, সামনে একটা উত্তঙ্গ শৈলচুড়, তাহার অনাবৃত শিখরদেশের অল্প নীচেই যে সব বন্যপাদপ, এত নীচু হইতে সেগুলি দেখাইতেছে যেন ছোট ছোট শেওড়া গাছের ঝোপ । অপূৰ্ব্ব গভীর শোভা এই জায়গাটায়। পথ বাহিয়৷ পাহাড়ের উপরে অনেক দূর উঠিলাম, আবার পথটা নামিয়া গড়াইয়া গিয়াছে, কিছু দূর নামিয়া আসিয়া একটা পিয়ালতলায় ঘোড়া বাধিয়া শিলাখণ্ডে বসিলাম,— উদ্দেশ্য, শ্রাস্ত অশ্বকে কিছুক্ষণ বিশ্রামের অবকাশ দেওয়া। সেই উদ্ভুজ শৈলচুড়া হঠাৎ কথন বাম দিকে গিয়া পড়িয়াছে, পাৰ্ব্বত্য অঞ্চলের এই মজার ব্যাপার কতবার লক্ষ্য করিয়াছি, কোথা দিয়া কোনটা ঘুরিয়া গিয়া আধ রশি পথের ব্যবধানে দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্যের স্বষ্টি করে, এই যাহাকে ভাবিতেছি খাড়া উত্তরে অবস্থিত, হঠাৎ দু-কদম ঘাইতে-ন-যাইতে সেটা কখন দেখি পশ্চিমে ঘুরিয়া দাড়াইয়াছে। চুপ করিয়া কতক্ষণ বসিয়া রহিলাম। কাছেই বনের মধ্যে কোথায় একটা ঝরণার কলমৰ্ম্মর সেই শৈলমালাবেষ্টিত বনানীর গভীর নিস্তব্ধতাকে আরও বাড়াইয়া তুলিয়াছে। অামার চারি ধারেই উচু উচু শৈলচুড়া, তাদের মাথায় শরতের ঘন নীল আকাশ। কত কাল হইতে এই বন পাহাড় এই এক রকমই আছে। সুদূর অতীতে অর্ধ্যেরা থাইবার গিরিবত্ম পার হইয়া প্রথম যেদিন পঞ্চনদে প্রবেশ করিয়াছিলেন এই বন তখনও এই রকমই ছিল, বুদ্ধদেব মববিবাহিতা তরুণী পত্নীকে ছাড়িয়া যে-রাত্রে গোপনে গৃহত্যাগ করেন, সেই অতীত রাত্রিটিতে এই গিরিচুড়া