পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्वकांड्छब्र গ্রামের লোকে স্বাস্থ্যের নিয়ম একেবারে জানে না । একটি মাত্র পুকুর, সেই পুকুরেই কাপড় কাচে, সেখানেই স্নান করে। স্বান করা আর জল পান করা যে একই কথা ইহা কিছুতেই তাহাদের বুঝাইতে পারিলাম না। কত লোক কত লোককে ফেলিয়া পলাইয়া গিয়াছে। একটা ঘরের মধ্যে একটা রোগী দেখিলাম, সে বাড়ীতে আর লোক নাই। রোগগ্ৰস্ত লোকটি ঐ বাড়ীর ঘর-জামাই, স্ত্রী আর-বছর মারা গিয়াছে। তাচ লোকটার অবস্থা খারাপ বলিয়াই হউক বা ষে কারণেই হউক, শ্বশুরবাড়ী ছাড়িয়া সে কোথাও যায় নাই । সম্প্রতি তাহার অসুখ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বশুরবাড়ীর লোকে তাহাকে ফেলিয়া পলাইয়াছে। রাজু তাহাকে দিনরাত সেবা করতে লাগিল। আমি ঔষধপথ্যের ব্যবস্থা করিয়া দিলাম। লোকটা শেষ পৰ্য্যস্ত বঁচিয়া গেল। বুঝিলাম, শ্বশুরবাড়ী থাকিলে তাহার অদৃষ্টে এখনও অনেক দুঃখ আছে । রাজুকে থলি বাহির করিয়া চিকিৎসার মোট উপার্জন গণনা করিতে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম—কত হ’ল, রাজু ? রাজু গুণিয়া গাথিয়া বলিল—এক টাকা তিন আনা । ইহাতেই সে বেশ খুশী হইয়াছে। এদেশের লোক একট পয়সার মুখ সহজে দেখিতে পায় না, অতি গরিব দেশ। এক টাকা তিন আনা উপার্জন এখানে কম নহে। কিন্তু অর্থ উপার্জন করিতে আসিয়া রাজুকে আজ পনরযোল দিন ডাক্তারকে ডাক্তার, নাসকে নাস, কি খাটুনিটাই খাটিতে হইয়াছে। যত ঔষধের দাম পাইয়াছে, তাহার তিন গুণ ঔষধ বিলি করিতে হইয়াছে বিনামূল্যে ও ধারে । , অনেক রাত্রে গ্রামের মধ্যে কান্নাকাটির রব শোনা গেল। আবার এক জন মরিল । রাত্রে ঘুম হইল না। গ্রামের অনেকেই ঘুমায় নাই, ঘরের সামনে বড় বড় কাঠ জ্বালাইয়া আগুন করিয়া গন্ধক পোড়াইতেছে ও আগুনের চারি ধার ঘিরিয়া বসিয়া গল্পগুজব করিতেছে। রোগের গল্প, মৃত্যুর খবর ছাড়া ইহাদের মুখে অন্ত কোন কথা নাই—সকলেরই মুখে একটা ভয়, আতঙ্কের চিহ্ন পরিস্ফুট। কখন কাহার পালা আসে। অণরণ্যক శ్రీ$మె দুপুর রাত্রে সংবাদ পাইলাম ওবেলার সেই সন্তোবিধবা বালিকাটির কলেরা হইয়াছে। গিয়া দেখিলাম, তাহার স্বামীগৃহের পাশের এক বাড়ীর গোহালে সে গুইয়া আছে। ভয়ে নিজের ঘরে আসিয়া গুইতে পারে নাই, অথচ তাহাকে কেহ স্থান দেয় নাই সে কলেরার রোগী ছুইয়াছিল বলিয়া । গোয়ালের এক পাশে কয়েক আটি গমের বিচালির উপর পুরনো চট্‌ পাতা, তাতেই বালিকা গুইয়া ছটফট করিতেছে। অামি ও রাজু বহু চেষ্টা করিলাম হতভাগিনীকে বাচাইবার। একটি লণ্ঠন, একটু জল কোথাও পাওয়া ধায় না। উকি মারিয়া কেহ দেখিতে পৰ্য্যন্ত আসিল না। আজকাল এমন আতঙ্কের সৃষ্টি হইয়াছে গ্রামে, যে, কলেরা কাহারও হইলে তাহার ত্ৰিসীমানায় লোকে ঘেষে না । রাত ফরসা হইল । রাজুর খুব নাড়ীজ্ঞান, হাত দেখিয়া বলিল—এ হুজুর স্ববিধে নয় গতিক। আমি আর কি করিব, নিজে ডাক্তার নই, স্যালাইন দিতে পারিলে হইত, এ অঞ্চলে তেমন ডাক্তার কোথাও নাই । সকাল ন’টায় বালিকা মারা গেল । আমরা না থাকিলে তাহার মৃতদেহ কেহ বাহির করিতে আসিত কি না সন্দেহ, আমাদের অনেক তদ্বির ও অনুরোধে জন-দুই আহীর চাষী বঁাশ লইয়া আসিয়া মৃতদেহ বাশের সাহায্যে ঠেলিতে ঠেলিতে নদীর দিকে লইয়া গেল । রাজু বলিল—ও বেঁচে গেল হুজুর। বিধবা বেওয়া অবস্থায়, তাতে ছেলেমানুষ, কি খেত, কে ওকে দেখত ? বলিলাম—তোমাদের দেশ বড় নিষ্ঠুর, বড় হতভাগা দেশ, রাজু। আমার মনে কষ্ট রহিয়া গেল যে আমি তাহাকে তাহার মুখের অত সাধের তাত দুটি খাইতে দিই নাই। ( > ) e •. নিন্তৰ দুপুরে দূরে মহালিখাৰুপের পাহাড় ও জঙ্গল অপূৰ্ব্ব রহস্যময় দেখাইত। কতবার ভাবিয়াছি একবার গিয়া পাহাড়টা ঘুরিয়া দেখিয়া আসিব, কিন্তু সময় হইয়া,