পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন্ধ্যা শ্ৰীব্রজমাধব ভট্টাচার্য্য বহু সাধ্যসাধন করা হইল, কত দেবতার কাছে মানত, কত সাধু-সন্ন্যাসীর দেওয়া মাদুলি, আর নিজেদের মধ্যে যে যা বলে সে-সব তুক্তাক্ ত আছেই—কিন্তু মলয়ার বন্ধ্যা নাম আর ঘুচিল না। ছোট জা অঞ্জলিরই বেশী উৎসাহ এই সব দৈব ব্যাপার লইয়া চিন্তা করায় । যেখানে যাহার কাছে যা-কিছু শোনে অমনি অঞ্জলি ভাবে “এইবার নিশ্চয়ই দিদির ছেলে হইবে,” কিন্তু পরে যখন আর কিছু হয় না তখন তাহার বিষগ্ন মুখ দেখিয়া মলয়া বলে, “যা; তুই যেন কি মেয়ে । যেমন তোর সখ তেমনি তোর দুঃখু বলে ‘যার বিয়ে তার মনে নেই পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই তোর হ’ল যেন তাই,” কিন্তু কিছুতেই বেচার অঞ্জলিকে আর বুঝ মানান যায় না। আবার কামরূপ হইতে নবাগত কোন সন্ন্যাসীর দৈব মাদুলি কিনিবার জন্য সে আসিয়া বলে, “এবারটি দাও দিদি, আর চাইব না। টুমুর মা বলছিল মাদুলিটা নাকি একেবারে পেত্যক্ষি’ । ওর দেখা । মৃদ্ধ এই বারটির জন্যে পাচ সিকে দাও, আর চাইব না।” মলয়ার প্রথম প্রথম এই নিঃসস্তান হওয়ার জন্য যে দুঃখ হইত না তা নয়, কিন্তু এখন তাহার ওসব কথা ভাবিবার আর অবসর নাই। অঞ্জলির বার বার এই চেষ্টার পর প্রতিবারই যে তাহার মান মুখখানি দেখিতে হয় ইহাতেই তাহার ভয় ছিল বেশী । সে যে কিছু বলিবে তাহার উপায়ও নাই—অঞ্জলি বড় অভিমানিনী । বারণ করিতে গিয়া সে প্রতিবারই বিফল হইয়াছে। তাহার সেই বারণটাও যে খুব জোরের হইত তা নয়, কারণ অঞ্জলির সেই ঐকান্তিক অনুরোধ ছাড়াও কে যেন তাহার মনে অঞ্জলির কথার সুর টানিয়া বলিত, ‘এবার হয়ত ফল ফলিতেও পারে। তাই এই সব প্রক্রিয়ার পরে প্রতিবারের ব্যর্থতায় তাহার মনটা যেন কেমন হইয়া Գե-Ծ যায়। ভবিষ্যতের একটি চিরাকাঙ্ক্ষিত স্নেহময় ছবি তাহার চোখের সম্মুখে ভাসিয়া উঠে, কিসের একটা স্রোত তাহার কণ্ঠের কাছে আসিয়া একটা রহস্যময় রুদ্ধতার স্বষ্টি করে, বুকটা যেন কিসের আবেগে দুলিয়া উঠে, নিশ্বাস কেন যেন জোরে বহিতে থাকে, বুকের নীচেটা হঠাৎ য়েন টনটন করে । আঁচল দিয়া তাড়াতাড়ি সে উদগত অশ্রুকে চাপিয়া ধরে। শেষ পৰ্য্যন্ত তাই অঞ্জলির কাছে প্রতিবারেই তার পরাভব। চাবির গোছাটা খুলিয়া ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া সে বলে, “নিয়ে যাও পয়সা—যা ইচ্ছে করগে যাও । এ বাতিক শাস্তি হবে কত দিনে তাও আমি দেখি ” হেঁট হইয়া নিঃশবে চাবির গোছাটি তুলিয়া লইয়া অঞ্জলি চলিয়া যায়, মলয়া চাহিয়া দেখে। একটি দীর্ঘশ্বাস তাহার অসীম শূন্ততার ভার সাময়িক একটু লাঘব করিয়া শূন্যেই মিলাইয়া যায়। দুটি জায়ের কত মধ্যাহ্ন এই সব কথায় বার্তায় কাটিয়া যায়, রাত্রে দু-জনকেই বিছানায় সে-কথাগুলি আকুল করে। অঞ্জলি স্বামীকে বলে, “ওগো গুনছ, হৃষীকেশের পাহাড়ে নাকি কে এক জন সাধু আছেন—” দেবেশ ওদিকে মুখ করিয়াই বলে, “আবার তোমার সেই সব লাগালে এই রাতে। কিছু বোঝ না, কেবল মাদুলি আর পূজো আর সন্ন্যাসী নিয়েই আছ। ওসব হয় না ছাইও, কেবল অর্থনষ্ট আর তার ওপর মনঃকষ্ট, যা থাকবার তা ত অাছেই ।” এ ত আর দিদি নয়, তাই অঞ্জলি আর কিছু বলে না, একটু পাশ ফিরিয়া গুইয়া থাকে। কিন্তু এ ভান বেশী ক্ষণ রক্ষা করা কঠিন। খানিক বাদে আঁবার সে ফিরিয়া বলে, “আমায় একটা সাদু পায়রা কিনে দিতে পার ?”. 尊