পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆN9డి প্রবাসী $Nరి88 দেখিতে পায় নাই। হাতের মোট তাগাটা ছিড়িবার সময় শব্ব করিতেই অঞ্জলি বলিল, “কি করছ দিদি ?” মলয়া বলিল, “কিছু নয়—কতকগুলো জঞ্জাল সাফ করছি। আজ ভাল ক’রে পরিষ্কার হব।” অঞ্জলি দেখিয়া শিহরিয়া উঠিল, শঙ্কিত কণ্ঠে সে বলিয়া উঠিল, “ও কি করলে দিদি, মাদুলিগুলো সব ছিড়ে ফেললে ? ও যে দেবতার জিনিষ দিদি ! ঠাকুরদেবতার জিনিষ নিয়ে কি খেলা নাকি ?” মলয় একটু হাসিয়া বলিল, “হ্য অঞ্জলি, ঠিক বলেছ —ঠাকুরদেবতার জিনিষ নিয়ে খেলা আর করব না ব’লেই আজ এগুলিকে ভালয় ভালয় বিদায় দিচ্ছি। নইলে আরও দিন গেলে যখন খেলার সময় কেটে যাবে, তখন এ জিনিষের দিকে কেউ চাইবেও না। তখনই এর প্রকৃত অপমান হবে। কি আর হবে কুঁড়ে-ঘরে এ মাণিক নিয়ে খেলা করে ?” - অঞ্জলি আর বলিতে পারিল না। শুধু একটু স্বর নামাইয়া বলিল, “জান না তো দিদি কিসে কি হয় ? হয়ত কিছু হ’ত তা আর হবে না, হয়ত যা হচ্ছে তাও থাকবে नां ।** শেষের কথাটায় মলয়ার অন্তর কঁাপিয়া উঠিল। সে. বলিল, “চুপ কর অঞ্জলি, ওকি অলক্ষুণে কথা। কোন কথা কোন দেবতার ‘জো’য় পড়ে তা ত কেউ জানে না । যাট যাট। ব্যাপারটা এমনই হইয়া গেল আর কেহই কোন কথা বলিল না । মাদুলিগুলি তুলিয়া লইয়া সে একটা কাঠের কোঁটায় ভরিয়া রাখিল । সেগুলি সে আর যেখানে-সেখানে ফেলিতে পারিল না । কাল অন্নপ্রাশন। আজ বৃদ্ধির ধান ভানা হইবে। বৈকালে পাড়ার বহু সধবা-সীমস্তিনী আসিয়াছেন । অঞ্জলি বলিল, “হ্যা দিদি, আমি নাকি খোকার ভাত দেখতে পাব না।” মলয়, বলিল, “আমি ত নিয়ম কিছু জানি না। কাকীমাকে জিগগেস্ কর গে যাও।” বলিতে বলিতেই ‘ স্থখদামুন্দরী সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি বলিলেন, “ওমা সে কি কথা ! মা কি আবার ছেলের ভাত দেখে নাকি । তোমাদের বাপু সবই দেখছি কেমন যেন নূতন। এসব চালচলন আমরা জানি নে বাবা । একটা কল্যাণ-অকল্যাণ নেই, যা হোক একটা করলেই হ’ল। যা ইচ্ছে কর গে যাও ” মলয়া বলিল, “আমরা আবার কি জানি কাকীমা, যে করব । ছেলেমানুষ বই ত নই। আপনার নাতির কাজ আপনিই ত সব করবেন । আমরা হলাম হুকুমের বাদী ঘরের বউ । আমরা কি ছাই কিছু জানি।” গলার স্বর একটু খাটো করিয়া সুখদাম্বন্দরী বলিলেন, “তা আর জানবেই বা কোথেকে বউমা । তোমার ত আর দোষ নেই বাছা । ঘরে শাশুড়ী নেই যে ব’লে দেবে। তবে আমরা ছেলেবেলা থেকেই এ-সব কাজ দেখছি শুনছি। আমরা জানি। তোমরা ভাল বউ তাই মেনে চল। আবার অনেকে ত মানেও না। দেখি আবার বিদ্ধির কি হ’ল।” বলিয়া তিনি চলিয়া গেলেন । অঞ্জলি বলিল, “হ্যা দিদি, তুমি ত উপোস ক’রে রয়েছ বিদ্ধির ধান ভানবে বলে। কই গেলে না ? যাও ” মলয়া চুপ করিয়া রহিল দেখিয়া অঞ্জলি বলিল, “ও কি, কথা কইছ না যে ?” • মলয়ার দুই চক্ষু ছল ছল করিয়া উঠিল, সে বলিল, “ন, ঐ কাকীমা উপোস ক’রে আছেন উনিই করবেন। আমি আর যাব না। উনি বড় ।” অঞ্জলি বলিল, “না দিদি তুমি যাও । তুমি আমায় কত আগে থেকে ব’লে রেখেছ, এখন তুমি কেন করবে না। তুমি করলে খোকার কত মঙ্গল। যাচ্ছি, মাকে গিয়ে আমি বলছি।” হায় রে মঙ্গল-অমঙ্গল । সরল হৃদয়ে অঞ্জলি মঙ্গল বলিয়া যাহাকে বরণ করিবার জন্য ছুটিয়া যাইতেছিল, ঠিক তাহাকেই খোকার ভবিষ্যতের জন্য সৰ্ব্বাপেক্ষ বড় অমঙ্গল বিবেচনা করিয়া সংস্কার তাড়াইয়া দিয়াছে । পুত্রহীনার রচিত প্রত্যেকটি উপচার অমাঙ্গল্যের বাম্পে কলুষিত হইয়া খোকার ভবিষ্যৎ জীবনকে মাঙ্গল্যহীন করিয়া তুলিবে ।