পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাত্তন তাহাকে যাইতে দেখিয়া মলয়া হাত ধরিয়া বলিল, “ন মেজ যাস নে ভাই। কাকীমা বলেছেন আমায় কিছু করতে নেই। আমি কিছু করলে সেটা খোকার অমঙ্গল হবে।” চোখের জল মলয়া আর ধরিয়া রাখিতে পারিল না। ঝর ঝর করিয়া তাহার দু-চোখ বাহিয়া জল পড়িতেই সে চোখটা চাপিয়া ধরিল। ঠিক সেই সময়ে মুখামুন্দরী সেখান হইতে ভাড়ারের দিকে যাইতেছিলেন। র্তাহার হাতে একটা বিশেষ কিছু ভারী জিনিষ থাকায় তখন আর সেখানে অপেক্ষা নাকরিয়া চলিয়া গেলেন । অঞ্জলি বলিল, “সে কি দিদি, তোমার হাতে খোকার অমঙ্গল ! মঙ্গল তবে হবে কার কাজে । আমিও থোকার আত মঙ্গল চাই না যে দিদি। তোমার কাছ থেকে খোক যদি অমঙ্গলের পসরা পায়, তবে অমঙ্গল মাথায় ক’রেই সে বেঁচে থেকে দিগ্বিজয় করবে।” মলয়া তাড়াতাড়ি অঞ্জলির মুখটা চাপিয়া ধরিয়া বলিল, “ছিঃ বোন, তুই ষে মা, তোর মুখে ও-সব কথা বলতে নেই। ওতে অকল্যাণ হবে খোকার, চুপ কর। আমি ত আর মা নই।” বলিয়া তাড়াতাড়ি সে-স্থান ছাড়িয়া মলয়া উপরের দিকে চলিয়া গেল । অঞ্জলি ব্যাপারটা ভাল করিয়া বুঝিবার পূর্বেই মুখদামুন্দরী সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অঞ্জলি একবার তাহার দিকে চাহিয়া চোখ নামাইয়া লইল, তাহার পর তাহার চোখ দুইটাও জলে ভরিয়া আসিল । কি বলিবে-বলিবে করিয়া তাহার আর কিছু বলা হইল না । আবেগে ঠোঁট দুইটা একটু কাপিয়া উঠিল মাত্র। মুখদাম্বন্দরী কিন্তু বলিতেই আসিয়াছিলেন তাই তিনি বলিলেন, “হ্য অঞ্জলি, তোর জ৷ আমন চোখের জল ফেলছিল কেন ? ওকি তুইও ত কাদছিল। তোদের ই'ল কি ? যত সব অলক্ষুণে কাও ! খোকার ভাত হবে তা তর যেন আর সইছে না। জন্মে ছেলের মুখ দেখলে সী, উনি গেছেন কল্যাণের কাজে হাত দিতে। তার উপর চোখের জল ফেলা। ও কি চায় ” অঞ্জলি বলিল, “চুপ কর মা, চুপ কর। দিদি গুনতে পেলে বিষ খেয়ে মরলেও তার দুঃখু যাবে না। তুমি বলছ क्छन्दको శ్రీNS কি ! আমার খোকার অমঙ্গল হবে দিদির থেকে ? তুমি छन नीं भीं--' অঞ্জলি আরও কি বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু সুখদা বাধা দিয়া বলিলেন, “তোমার আস্কার না পেলে আর এমনতর হয় ! আমি বলি কি হ’ল ! ওলো গতরখাগী জানিস না লো বাজার ছোয়া জিনিষ কুকুরেও খায় না— তা দিয়ে আবার ছেলেমেয়ের শুভকৰ্ম্ম করতে হবে! কি লা ? ছেলের মাথা খেতে চাও তো যত বাজা নিয়েকাজ কর গে স্বাও ।” অঞ্জলি আর সেখানে দাড়াইতে পারিল না। সে দ্রুতপদে সরিয়া গেল । ঘরের মধ্যে গিয়া সে শিকল দিয়া দিল । তার পর চলিল তার মনের মধ্যে যুদ্ধ। এও কি সম্ভব ! ষে-দিদি খোকাকে এত ভালবাসেন, ষেদিদির খোকাগত প্রাণ, তার হাতে হইবে খোকারই অমঙ্গল ! আর তার কোনই কারণ নাই। একমাত্র কারণ দিদির আমার এ বুকছুড়ান মাণিক নাই। তার বক্ষ বাহিয়া ষে দীর্ঘশ্বাস আসে সে কি এতই তপ্ত ! তার চোখ বাহিয়া যে জল আসে, সে কি এতই অকল্যাণকর ! সে কিছুতেই মনকে বুঝাইতে পারিল না। সন্ধ্যার সময় সেই উৎসবমুখর ভবনে শঙ্খ ধ্বনিত হইয়া উঠিল, হুলুধ্বনিতে প্রাঙ্গণ গুঞ্জিত হইয়া উঠিল। নানা কণ্ঠের বিচিত্র লোকসমাগমের কলহাস্তের মধ্যে কেহ অমুসন্ধান করিল না—মলয়া কই, অঞ্জলি কোথায় ? অঞ্জলি বাহিরে আসিয়া দেখিল মুখদাসুন্দরী কয়েকটি বর্মীয়সীর সহিত কি কথা গোপনে কহিতেছেন। সে সেদিকে লক্ষ্য না করিয়া খোকার খোজ করিতেছিল। ঈশ্বরের বিধানে মায়ের দেহ এমন ভাবেই নিৰ্ম্মিত যে শত বিপ্লবের মধ্যেও জননী টের পায় তাহার সন্তানের ক্ষুধা পাইয়াছে কি না । সে সব জায়গা খুজিয়াও খোকাকে পাইল না। মলয়ার ঘরে সে আর যাইতে পারিতেছিল না । তাহার বড় লজ্জাবোধ হইতেছিল । শেষ পৰ্যন্ত লে মলয়ার ঘরে গেল। ঘরের মধ্যে তখন অন্ধকার। সে আলোটা জালিল। তার পর সে দেখিল, পালন্ধের উপর শুভ্ৰ শয্যায় মলয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে আর তাহার হাতের উপর তাহার বুকের উপর হাত দিয়া