পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীৰূপেন্দ্রনাথ রায় টাটুর চোখের আলো কে চুরি করলে ? চোখেতে যেন মেঘলা সন্ধ্যা নেমেছে। . মন্তবড় বাদামী ছুটি চোখ থেকে ক্ষণে ক্ষণে যখন তখন আলো বকুমকিয়ে উঠত। মাথার কটা রেশমী চুলের চেয়ে ঢের গাঢ় রঙের স্বীর্ঘ পহ্মপুট যেন অবসন্ন হয়ে আনত হয়েই আছে। গোলাপী পাতলা দুটি ঠোঁটের ঝকৃঝৰে হান্তরূপের উপর তার করুণ ছায়া পড়েছে। বাড়ীর সামনের ছোট বাগানে পোলু হরিণটা তেমনি চুপ করে শুয়ে কেমন নিষ্কদেশের পানে চেয়ে আছে; রুমী কুকুরটাকে তার নূতন ছানাগুলো তেমনি পাগল ক’রে তুলেছে , তার বন্ধু টাটু ঘোড়াটা দানা খেতে খেতে পেছনের পা ছোড়া শেষ ক'রে সামনের পা ঠুকৃছে। টাটু তার ছোট মুঠো ভৰ্ত্তি করে বন্ধুকে চিনি খাওয়াতে দৌড়বে না; বারাণ্ডায় রেল পাতা, রেলগাড়ীর ষ্টেশন দাড়িয়েই আছে, গাড়ী বুঝি আর ষ্টেশনকে ফেলে দৌড়বে না, কেউ ব্যস্ত হয়ে ঘণ্টাও দিচ্ছে না, কেউ হইসিলও দিচ্ছে না ; ভেলভেটের ‘মহারাণ'-হাতিটার পিঠে চড়ে ডিগ বাজী খাবার জন্ত সারা সকাল নূতন মেমসাহেব দাড়িয়েই আছে। টাটু আজ ক-দিন এই নিঝুম পুরীর সোনার কাঠি তার বাবার একবারও দেখা পায় নি। বলিষ্ঠ প্রকাও দুটো হাত দিয়ে কেউ তাকে উচুতে দোলা দিতে দিতে নিজের একটুখানি খচখচে দাড়িতে টাটুর নরম তুলতুলে গাল চেপে ধরে নি ; তাকে পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়িয়ে বাড়ীর পেছনে গোয়ালঘরের পাশে তেপান্তরের মাঠের দিকে নিয়ে যায় নি; তার রেলের যাত্রীও হয় নি, যাত্রাও হয় নি, একখানা টিকিটও কাটা হয় নি। বিস্কুটে বেশী বেশী জেলি দিলে কি হবে ? শুধু শুধু মাখালেণ্ড দিলেই হয় বুঝি। জল পড়ে না, তৰু চোখ ছলছল করতেই থাকে, কোন বিরুদ্ধ কথা না শুনেও ঠোট কেমন উণ্টে ষা, গলায় কিসের ডেলা যেন আটকে যায়। বাবা না এলে কেমন ক’রে খেলব—কি করে থাকব । পিসীমা কই আর ত কলরব করেন না, কেমন চুপ, চোখ সব সময়েই লাল, জিজ্ঞাসা করলে বলেন–সন্ধি হয়েছে ; কিন্তু, দুপুর বেলা ত ভাত খেলেন। ছোট খুড়ীমা তার উণ্টে, যখন তখন কেমন অনির্দেশের পানে চোখ তুলে, কে একটা হতভাগা বাউণ্ডুলে পাজী কোন এক লক্ষ্মীপ্রতিমাকে অঙ্কুলে ভাসিয়ে দিল সে কথাই কি যেন বলতে গিয়ে থেমে যাচ্ছেন। টাটুর বডড ইচ্ছে করছিল জানতে— দুইটাই বা কে, লক্ষ্মীটিই বা কে ? প্রশ্ন করলে, ছোট খুড়ীমা তাকে জড়িয়ে ধরে ফোপাতে আরম্ভ করলেন— হীরে, অবোধ শিশু ! বলেন, আর সে কি ফোপানি । সে ষে কি বিত্রই লাগল ! সে মরলেও আর কোন কথা জিজ্ঞাস করবে না । বাবার কথা জানতে গেলে কোথা থেকে মেন একটা অদৃপ্ত দৈত্যের হাত মুখ চেপে ধরে। পিসীমা কেন, বাড়ীর আর সবাইয়েরও কেমন চোখ লাল । টাটু দেখেছে, সে একটু অন্ত দিকে ফিরলে, তার দাই কেমন ক'রে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখে যেন জলের আভাস দেখা যায়। বাড়ীর বুড়ে দরওয়ান আখলু কেমন কাম-কাজ হয়ে তাকে খোকাবাবা ব’লে দু-বার জড়িয়ে ধরেছে। আর এই ক-দিন দিজু এসেছে ; এসে পৰ্য্যস্ত এক ঘরে একাই ব’লে আছে ; আর প্রথমে এসে ত মা-মণিকে বুকে জড়িয়ে ঝরঝর কান্না। টাটু দিছুকে বাবার কথা জিজ্ঞাসা না ক’রে পারলে না, আর বাবার কথা বলতেই জিছু তার দিকে কেমন ক’রে একটুক্ষণ চেয়ে থেকে কোন কথা না ব'লে সোজা উঠে গেল । এক দিনও দিছ তাকে বায়োস্কোপে নিয়ে গেল না, পুতুলের দোকানে না, চিড়িয়াখানায় না—সেই যেখানে ঝকঝকে টেবিলে বসে কেক খায়, আইস্ক্রীম খায়, টাটু কবার খেয়েছে, আরও সব কত টেবিলে সাহেব-মেষ আর তাদের পুতুলের মত সুন্দর ছেলেমেয়েরা খায়—কোথাও নয় । বাবার নাকি কি ভয়ানক চিঠি এসেছে। সারাদিনে মা-মণি একবারও তার ঘর থেকে বেরুল না। টাটু লুকিয়ে. - ; : i wo 鬣 !. - *. “”. v.