পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कांड्छन्। ৰাম। ধনপতি ও শ্রপতির জাখ্যার জুড়িয়া ভক্তির ফন্তু ধারা নিরস্তুর প্রবহমান । চণ্ডীমঙ্গলকাব্যে হরি-কথার ছড়াছড়ি ও ভাবোচ্ছাসের প্রাবল্য দেখিয়া মনে হয়, সেই কালের উপর বৈষ্ণব ধর্মেরও প্রভাব ছিল । শ্রমস্ত চণ্ডীর ব্রতদাসীর বরপুত্র হইয়াও চণ্ডীর কীৰ্ত্তন না করিয়া হরি সঙ্কীৰ্ত্তন করিতেছেন। ইহা তৎসময়ে বৈষ্ণব-প্রাধাস্তের পরিচায়ক । বাঙালী জীবনের সেই নবাগত প্রেম-ভক্তির ধারাই উৎসারিত হইয়া খুলনার চরিত্রকে অনুপম মাধুর্ঘ্যে মণ্ডিত করিয়াছে । তখনকার লোকদের মধ্যে গণেশ-বন্দনী, স্বৰ্য্য-বন্দনা, চৈতন্ত-বন্দন, মহাদেব-বন্দন, চণ্ডীবন্দন, লক্ষ্মীবন্দন এবং সরস্বতী-বন্দন! প্রচলিত ছিল । তখনও আশ্বিন মাস আসিলে বঙ্গের পল্লীতে পল্লীতে শারদীয়া পূজার সাড়া পড়িয়া যাইত। মাৰ মাসে প্রাতঃস্নানাস্তে সকলে স্বপাঠকের নিকট ভক্তিপুতচিত্তে পুরাণের কাহিনী গুনিত। আবার ফাঙ্কন মাসে দোল-পূর্ণিমার অভিনব আনন্দ আসিয়া বাঙালীর প্রাণকে দোলা দিয়া যাইত। সৰ্ব্বত্র দোলমঞ্চ নিৰ্ম্মিত হইত। সকলে হরিদ্রা, ु এবং চুয়ার দ্বারা অঙ্গ-প্রসাধন রচনা করিত। "হোলি উপলক্ষ্যে নানা রকম নৃত্যগীতের মধ্য দিয়া উৎসবটিকে প্রাণবান করিয়া তুলিত। বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মণকে দান করিয়া সকলেই পুণ্য সঞ্চয় করিত। পাঠক-ঠাকুরের রামায়ণ ও পুরাণ পাঠের মধ্য দিয়া শাস্ত্রের অতি নিগুঢ় তত্ত্বও নিম্নশ্রেণীর লোকদের কাছে সহজবোধ্য হইয়াছিল। এই ভক্তি ও পূজাপ্রসঙ্গের পরেই সামাজিক বিধিব্যবস্থা নিরতিশয় চিৰ্ত্তাকর্ষক । সামাজিক বিধিব্যবস্থা আমাদের সমাজের বিধিব্যবস্থা চিরকাল ধরিয়া সমাজের লোকেরাই করিয়া আসিতেছেন। প্রাচীন সমাজেও জন্ম, বিবাহ এবং শ্রাদ্ধাদি সম্বন্ধে বিবিধ আচার-অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল । বিবাহ-বিধি § তখনকার দিনে ছেলেমেয়েদের বিবাহের জঙ্ক মাবাপকেই মাখা ঘামাইতে হইত। ঘটকালিয় ভার পড়িত ইল-পুরোহিতের উপর। কস্তার পিতার লক্ষ্য ছিল বরটি কৰিকঙ্কণ-চণ্ডীতে প্রাচীন বাংলার চিত্র ՆԵա:Ջ যেন কুলে শীলে নির্দোষ হয় । তখন ব্রাহ্মণ-সমাজে বল্লাল সেনের কৌলিঞ্চপ্রথার প্রাধান্ত ছিল। ইহাতে অনেক কুফল ফলিয়াছিল। ছেলেমেয়েদের বিবাহ হইত খুব অল্প বয়সে। বেশী বয়সের কন্যা ঘরে রাখিয়া কেহ নিশ্চিন্থ থাকিতে পারিত না। সমাজে ইহা লইয়া কাণাঘুষ হইত। পচিশ বৎসরেও ছেলেদের বিবাহ না হওয়ার মত বিস্ময়কর ব্যাপার আর কিছুই ছিল না। নীচের ছত্র দুইটির মধ্যে সেই বিশ্ব পরিস্ফুট। ভাড়র এক ভাই ছিল, নাম তার শিবা । পচিশ বৎসবের হৈল নাহি হয়, বিভা ৷ কালকেতু ও ফুল্পরার বিবাহ হইয়াছিল অল্প বয়সে। বর ও কঙ্গ উভয়েরই ছিল পণ পাওয়ার অধিকার । কিন্তু এই নিয়ম সকল শ্রেণীর লোকে মানিত না । উচ্চ সমাজে পুরুষেরা একাধিক বিবাহ করিতে পারিত। ধনপতি ও ঐমস্তুের ছিল দুই দুই স্ত্রী। ধৰ্ম্মকেতু ও কালকেতুর এক এক বিবাহ ছিল, বিবাহের আগের দিন নিরামিষ আহারের বিধি ছিল । স্ত্রী-আচারও বাদ পড়িত না । মেয়েকে একখানি পিড়ির উপর বসাইয়া অপরে তাহ বহন করিয়া বর প্রদক্ষিণ করাইত, আর কঙ্গাপাত্রের শুভদৃষ্টি হইত। বিবাহের সময় শাশুড়ী জামাতার চরণে দধি ঢালিয়া দিতেন। ইহার পরে যাহা ঘাহা ঘটিত, তাহ ধনপতির বিবাহ-চিত্রে অতি সহজভাবে বর্ণিত হইয়াছে । মওপে বাজনা বাজিয়া উঠিল। লক্ষপতি বসিলেন কগু সম্প্রদান করিতে । শুভক্ষণে তিনি কল্প ও বরের পাণি গ্রহণ করিয়া তাহদের উভয়ের কর একত্র করিলেন। উচ্চস্বরে বেদ পঠি হইল। আত্মীয়স্বজনে ঘরবাড়ী ভরিয়া গিয়াছে। ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, কাড়া এবং মঙ্গল শঙ্খ বাজিতেছে, মাঝে মাঝে দামামার গুরুগম্ভীর ধ্বনি। তাহার সহিত বাজিম উঠিল সানাই, ভেরী, শিক্ষা আর কত্র বীণা ৷ সঙ্গীত-মন্দির হইতে গানের রেশ ভাসিয়া আসে। লক্ষপতি জামাতাকে নানা রত্ন দান করিলেন। ভোজনের খাল, বেড়াইবার জন্ত ঘোড়া এবং শয়নের নিমিত্ত দিলেন খাট, চানো আর ক্ষিতার মশারি। আর দিলেন বারি, ধুরি, তাস্থল-সীগুড়া, শস্তপূর্ণ ভূমি, এবং বসিবার চলন-চৌম্বর —কিছুই বাদ পড়িল না।