পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*S*. প্রবাসী SNB88 কাল এই খনি সোরা জোগাইতে পারিবে না। কিন্তু তার পর ? এই প্রশ্নই সৰ্ব উইলিয়ামকে চঞ্চল করিয়া তুলিয়াছিল। তার পর কি হইবে ? সোর-সার যখন নিঃশেষ হইবে, তখন মাতা বস্থঙ্কর নিঃস্ব হইবেন ; তখন তিনি কি উপায়ে মানবসমাজের খাদ্য জোগাইবেন ? সরু উইলিয়াম দিব্যচক্ষে দেখিলেন, যদি বৈজ্ঞানিকগণ ইহার কোন উপায় উদ্ভাবন করিতে না পারেন, তবে অভাব-অনটন চারি দিকে ছড়াইয় পড়িবে, নিশ্চিত মৃত্যু প্রাণীবৰ্গকে গ্রাস করিবে, সৰ্ব্বত্ৰ হাহাকার পড়িবে। তাই তিনি সমস্ত বৈজ্ঞানিক সমাজের মনোযোগ ইহার প্রতি আকর্ষণ করিলেন— র্তাহাদিগকে আহবান করিয়া বলিলেন, আপনারা অবহিত হউন, তৎপর হউন, এই সমস্যার সমাধানে যত্নবান হউন— নতুবা ত্বরায় পৃথিবী প্রাণীশূন্ত হইবে। তিনি কেবল এই ভীষণ সম্ভাবনার স্বচনা করিয়া, মানবমনে এই ত্রাস জন্মাইয়াই ক্ষান্ত হন নাই— মুখাৰ্থ বৈজ্ঞানিকের স্থায় এই আসন্ন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হইতে অব্যাহতির উপায়ুও আলোচনা করেন। তিনি বলিলেন, রাসায়নিকগণের দ্বারা রসায়ন-সার হইতেই উহার সমাধান সম্ভব । কি উপায়ে উহার সমাধান হইতে পারে তাহার একটি পন্থা, যাহা সৰ্ব উইলিয়াম আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাহ আলোচনা করিয়াই এই প্রবন্ধ শেষ করিব। সোর সাররূপে ব্যবহৃত হয় । সোরা একটি যৌগিক পদার্থ। উহার মূল উপাদান যবক্ষারজান, আমজানও একটি ধাতব পদার্থ। ইহাদের মধ্যে ধবক্ষারজান ও অম্লজান বায়ুরাশিতে বিদ্যমান। বায়ুর ঃ অংশ যবক্ষারজান ও ঃ অংশ অম্লজান । কিন্তু বিপদ এই যে, এই ষবক্ষারজান মুক্ত। পূৰ্ব্বে বলিয়াছি, যুক্ত-যুবক্ষারজানই উদ্ভিদের খাদ্য, মুক্ত-ধবক্ষারজান নহে। এই যুক্ত-যুবক্ষারজানের জন্যই হাহাকার, উহাই লোকে পয়সা দিয়া কিনিতে প্রস্তুত। মুক্তযবক্ষারজান বায়ুরাশিতে সৰ্ব্বত্র বিদ্যমান, প্রতি নিশ্বাসে মানব ও উদ্ভিদ উহা গ্রহণ করিতেছে, কিন্তু মানব বা উদ্ভিদ “উহা হজম করিতে পারে না বলিয়া উহ। তাহদের কোন কাজেই লাগে না। যদি মুক্ত-যুবক্ষারজান মানবের আহার্ষ্য রূপে ব্যবহৃত হইতে পারিত, তবে মানবের অনেক দুঃখেরই হ্রাস হইত। মারামারি, ੇ, ডাকাতি, সব দূর হইত, অভাব-অনটন লোপ পাইত, ঘরে বসিয়া বায়ুরাশি নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করিত এবং ছুই-চার বার নিশ্বাস গ্রহণ করিয়া নিশ্চিস্ত মনে নিদ্রা যাইতে পারিত—আহার্ষ্য সংগ্রহের জঙ্ক এই যমঘন্ত্রণ ভোগ করিতে হইত না । কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই মুক্ত-যুবক্ষারজান কোন কাজেই লাগে না। এনশেন্ট মেরীনার যেমন সমূত্রে ভাসিয়াও তৃষ্ণাৰ্ত্ত হইয়াছিল, চারি দিকে জলের মধ্যে থাকিয়াও পানীয় জলের অভাবে শুষ্কতালু হইয়াছিল, প্রাণিগণও তেমনি যবক্ষারজানসমুদ্রে বাস করিয়াও তাহা হইতে বিশেষ কোন উপকার পাইতেছে না। ধবক্ষারজানের বড় একেশ্বর ধাত । উহা অন্য পদার্থের সঙ্গে সহজে যুক্ত হইতে চাহে না । ইহাকে উত্তেজিত করিতে হইলে, মিশুক করিতে হইলে, তড়িতের সহযোগ আবশ্যক । যদি তড়িৎ প্রবেশ করান যায়, তবে তাহার আমিগুক ভাব দূর হয় ও পার্শ্বস্ব জমজানের সহিত যুক্ত হয় এবং তখন আরও সী খোজে। এই ভাবে প্রথমতঃ নাইটিক অক্সাইড ও পরে নাইট্রোজেন পেরোক্সাইড নামক যৌগিক পদার্থে পরিণত হয়। অতঃপর বৃষ্টির জলে গলিয়া নাইটিক এসিড রূপে পৃথিবীতে পতিত হয় ও মৃত্তিকাতে অবস্থিত সোডা বা পটাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হইয়া ক্রমে সোরার আকার ধারণ করে। মূলের সাহায্যে উদ্ভিদ এই সোরাকে প্রবণীয় অবস্থায় গ্রহণ করে । উহা উদ্ভিদ-দেহে প্রবিষ্ট হইয়া নানাবিধ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে ক্রমে প্রোটিন-জাতীয় পদার্থে পরিণত হয় । প্রাণিগণ উদ্ভিদ-দেহ হইতে প্রোটিন সংগ্ৰহ করে এবং নিজদেহ পরিপুষ্ট করে। তার পর যখন প্রাণিদেহ ংস হয় তখন ঐ যবক্ষারজনসংযুক্ত প্রোটিন নানাবিধ আণুবীক্ষণিক কীটাৰুর সাহায্যে বিশ্লিষ্ট হয় এবং কতকাংশ মুক্ত-যবক্ষারজান অবস্থায় আকাশে প্রত্যাবৰ্ত্তন করে। সর উইলিয়াম প্রস্তাব করিলেন যে, পরীক্ষাগারে বিদ্যুতের সাহায্যে যদি যবক্ষারজান ও অম্লজানকে এই ভাবে সংযুক্ত করা সম্ভৰ হয়, তবে এই প্রক্রিয়া দ্বারা পূৰ্ব্বোল্লিখিত উপায়ে সোরা প্রস্তুত হইতে পরিবে, এবং আমাদিগকে চিলি প্রদেশের সোরার খনির জন্য অপেক্ষা করিতে হুইবে না।