পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਟੈਥਭ। সভ্যতার অভিব্যক্তি Aa^ ভরানদীর কল্পোলিত জলধারে আপন হৃদয়ের স্তর মিলাইয়া দেয় ; বসম্ভের নবপল্লবের মর্শ্বরচন্দে, গন্ধবিধুর সমীরণের মৃদুমন্দ হিল্লোলে, পার্থীর আনন্দ-কুজনের সুপারসে, গ্রীষ্মের ও শরতের জ্যোৎস্না-স্নাত রাত্রির শান্ত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্যে ইহার উচ্ছসিত আনন্দে নব নব স্রোতে জীবন-রসধারা পান করে ও এই বিশ্বমেলার আস্তরালে যে বিরাট বিশ্বনৃত্য নিয়ত চলিতেছে তাঙ্গার ছন্দে যোগ দিবার জন্য, আমাদের চতুর্দিকে যে বিশ্বগীতি নিরস্তুর ধ্বনিত হইতেছে তাহার স্তরের আভাস আপন জীবন-বীণায় ক্ষণিকের জন্যও ধরিবার প্রয়াস পায় । ইহাদের জীবনের এই ক্ষণিক উচ্ছম্বল আনন্দ ও আত্মতার উল্লাস লক্ষ্য করিয়া রবীন্দ্রনাথ আবেগভরে উচ্ছসিত কণ্ঠে বলিয়াছেন – কতবার ইচ্ছ। করে সেক্ট প্রাণ-ঝড়ে ছুটিয়া চলিযু নষ্ট পূর্ণ পাল হবে, লঘূতী সম । কিন্তু পর্বেই ললিয়াছি, আদিম মানবের প্রাণের এই উদ্বেল, উদাম, মুক্ত ভাবের বর্ণনায় কবি তাহাদের জীবনের কেপলমাত্র একটি ক্ষণিক ভাবের ছবি আঁকিয়াচেন । তা গদের জীবনের সমগ্ৰ চিত্ৰ ঠাকিতে গেলে স্বামীদের ধারণায় হাসির অপেক্ষ কান্নার ভাগ, আলোর অপেক্ষ আধারের ভাণু বেশী আঁকিতে হয় । সমাজের ও বাধাবন্ধের উৎপত্তি আর তাহাদের সম্বন্ধে কবির চিত্রের অবশিষ্ট অংশ-— অর্থাৎ, তাহাদের নাষ্টি কোন ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম, নাহি কোন প্রথা, নাহি কোন বাধাবন্ধ, নাহি কোন দ্বিধা-দ্বন্দু, নাহি ঘর পর । এই উক্তি পৃথিবীর বর্তমান কোনও অসভ্য জাতির সম্বন্ধে সম্পূর্ণ প্রযোজ্য নহে। তুষারযুগের পশুভাবাপন্ন প্রাথমিক মানবের বা Homo Primigenousএর সম্বন্ধে হয়ত অনেকটা খাটিলেও, বর্তমান মানব জাতির বা Homo Sapiensএর সম্বন্ধে এ উক্তি সম্পূর্ণ গাটে না। বস্তুত: বর্তমান অসভ্য জাতিদের ‘বাধাবন্ধ’ বা ‘taboo’র ফৰ্দ্দ অযথারূপ দীর্ঘ। এই বাধাবন্ধ বা “tafooই সমাজবন্ধনের প্রথম উপায় ; পশুত্ব হইতে মনুষ্যত্বে উন্নীত হইবার সোপানের প্রথম ধাপ | অবাধ যৌনপ্রবৃত্তির ও অন্যায় দৈহিক প্রবৃত্তির সংযমের উপায় স্বরূপই বাঘুরিন্ধের প্রথম স্মৃষ্টি । যে সমস্ত জাতিকে আমরা অসভ্য-পদবাচ্য করিয়াছি তাহারাও বহু যুগ হইল সভ্যতা-সোপানের নিম্নতম স্তরে পদক্ষেপ করিয়াছে । ইতাদের মধ্যে যে-সব জাতি সাময়িক নিশ্চলতা, রুদ্ধগতি ও পশ্চাদগমন সত্ত্বেও প্রতিকূল প্রাকৃতিক অবস্থার প্রভাবে ও কোথাও কোথাও তথাকথিত সভমন্য জাতির সংস্পর্শে বিনষ্ট বা মৃমূযু না-হইয়াছে তাহারা ক্রমোন্নতির পথে অতীব মস্থর গতিতে থাকাবাক পথে চলিয়াছে । এই সব তথাকথিত অসভ্য জাতির মধ্যেও বহুকাল তুষ্টতে অল্পবিস্তর ‘প্রথা' ও নিয়ম, “বাধাবন্ধ ও আচার-বিচার ও ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের প্রচলনের যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। আর তাতাদের আপন জনের অর্থাৎ স্ব স্ব পরিবার, স্বগোত্র ও স্বজাতির ও হিতার্থীদের প্রতি প্রীতি ও আতিথেয়তা সুবিদিত হলেও, তাহারা পর’কে অর্থাৎ অপরিচিত ও অপর জাতীয় লোককে বিশেষ সন্দেহ ও ভীতির চক্ষেষ্ট দেখে, এবং তাহাদিগকে শত হস্ত দরে রাখিবার চেষ্টা করে । বস্তুতঃ, তাহাদের ঘর-পর’বোধ অতিরিক্ত মাত্রায় বর্তমান । ইহার প্রমাণ ছোটনাগপুর ও সাওতাল পরগণার আদিম জাতিদের অপর জাতীয় সাদান’ বা ‘দিকুর’ প্রতি বিদ্বেষ-ভাব এবং তন্নিবন্ধন মধ্যে মধ্যে 'উল গুলান’ বা বিদ্রোঙ্গ ও হাঙ্গামা । এই অপরিচিতের প্রতি অবিশ্বাস ও সন্দেহ সম্ভবতঃ মানবের সুদূর পূর্বপুরুষাগত বৈশিষ্ট্য। “অজ্ঞাতকুলশীলস্ত বাস দেয় ন কস্যচিং”--তামাদের এই নীতিবাক্য সম্ভবতঃ কতকটা সেই আদিম মনোভাবের পরিচায়ক । বস্তুতঃ যে সমাজনীতি, শাসনতম্ব ও ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের উপর মানবসভ্যতা প্রতিষ্ঠিত, তাহীর বীজ এই সমস্ত তথাকথিত অসভ্য সমাজেই উপ্ত হইয়াছে , তাহার মূলপত্তন আদিমমানবই করিয়াছে । সেই ভিত্তি কিরূপ ছিল এবং তাহার عصعص عجية • অভিব্যক্তি ও পরিণতি কিরূপে হইল সময়াভাবে তাহার ইঙ্গিত মাত্র দেওয়া এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য । মুনিবসমাজের প্রাক্কাল হইতে বর্তমান কাল পৰ্য্যস্ত সভ্যতার ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখা যায়