পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہواه প্রবাসী Sべつ88 এইরূপ বিবিধ উপায়ে প্রকৃতির সহিত মিলন বা ‘যোগসঞ্জন দ্বারা প্রকৃতিকে ইচ্ছান্তবর্তী করিবার প্রয়াস পায় । প্রকৃতির সহিত যোগযুক্ত বা একাত্ম হইয়া প্রকৃতির কাৰ্য্য নিয়ন্ত্রিত করা আয়াসসাধ্য এই ধারণায় মানব অসভ্য ও অৰ্দ্ধসভ্য অবস্থায় দলবদ্ধ হইয়া বৃষ্টির আমন্ত্রণ প্রভৃতি নানাবিধ অঙ্গুষ্ঠানের উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করিয়াছে। সভ্য সমাজেও এইরূপ যাদুমিশ্রিত ধৰ্ম্মানুষ্ঠানের দৃষ্টাস্ত বিরল নহে । প্রাণশক্তি-বৰ্দ্ধন মানসেই সম্ভবতঃ প্রত্যেক অসভ্য দলের এক বা একাধিক দলপতি মনোনীত করিবার প্রথা প্রথম প্রবর্তিত হয় । আদি-মানব “প্রাণশক্তি’কে বাস্তব পদার্থ বিশেষ ( soul substance ) afood to #3 stoftwa ধারণা এই যে, এই প্রাণশক্তির হ্রাসবৃদ্ধি, সঞ্চারণ ও নিষ্কাশন এবং একাধার হইতে আধারাস্তরে সঞ্চালন শক্তিমান ব্যক্তিবিশেষের আয়াসসাধ্য। তাহার বিশ্বাস করে যে বিভিন্ন দ্রব্যে ও বিভিন্ন জীবে বিভিন্ন পরিমাণে এই প্রাণশক্তি নিহিত আছে ; এবং জীব বা বস্তুবিশেষের প্রাণশক্তির পরিমাণ বা মাত্রা অনুসারে তাহাদের সংস্পর্শে অপরের প্রাণশক্তির হ্রাস বা বৃদ্ধি সম্ভব । পলিনেসিয়ার অসত্যের এই প্রাণশক্তিকে 'মান' নামে অভিহিত করে এবং নৃতত্ত্ববিদেরা এই 'মান' নামটি ঐৰূপ বিশিষ্ট ‘প্রাণশক্তি অর্থে পারিভাষিক শব্দ রূপে গ্রহণ করিয়াছেন । হিন্দুর তন্ত্রসাধনায়ও এই জাতীয় বিশ্বাস ও আচরণ কোথাও কোথাও এখনও প্রচলিত আছে । প্রবল প্রাণশক্তির বলে এবং মনোময় কোষের উন্মেষের সাহায্যে কোন কোন বিশেষ শক্তিমান ব্যক্তি ধথোপযুক্ত অনুষ্ঠান ও শব্দ-শক্তি বা মন্ত্রতম্বের সাহায্যে এই শক্তি সঞ্চরণ, বৰ্দ্ধন ও স্থানান্তরীকরণে সমর্থ, এইরূপ বিশ্বাস কেবল আদিম-জাতিদের মধ্যে নয়, সভ্যতর জাতিদের মধ্যেও দেখা যায়। এই বিশ্বাসেই এইরূপ প্রবল প্রাণশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিই দলের প্রধান বা ‘নায়ক' অর্থাৎ পুরোহিত ও দলপতি মনোনীত হইত। মুণ্ড, ওঁরাও প্রভৃতি কোন কোন জাতি ইহাকে ‘পাহান' বা প্রধান আখ্যা দেয় ; আর সাওতাল ভূইয়া প্রভৃতি কোনও কোনও জাতি ইহাকে “লায়া” নায়া’ বা নায়ক আখ্যা দেয় । যেখানে বিশেষ কোনও শুঙ্খলাবদ্ধ অনুশাসনের স্বচনাও হয় নাই, সেখানেও প্রাণশক্তি , বৰ্দ্ধনের ও পোষণের প্রচেষ্টায় এই দলপতির নেতৃত্বে ধৰ্ম্মক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় ; এইরূপে দলবদ্ধ সমাজ সংগঠনের মূল পত্তন হয়। ইহারই ক্রমবিকাশ ও প্রসার বুদ্ধিতে সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতির উদ্ভব ও পরিণতি হয় । এই ক্রমবিকাশের একটি প্রধান সহায়ক বিভিন্ন জাতির পরম্পরের সংস্পর্শ কিংবা সংমিশ্রণ । মানব স্বভাবত: অভ্যাসের দাস । অবস্থা ও কাল বিশেষের উপযোগী বাধাবন্ধ বা বিধিনিষেধ একবার প্রবর্তিত ও প্রচলিত হইলে, আমরা গতানুগতিক ভাবে সেগুলি সনাতন প্রথাজানে অতুসরণ করি । মহাপুরুষের প্রভাব দীর্ঘকাল যাবৎ কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা প্রণালীতে অভ্যস্ত মানব-সমাজ অবস্থার পরিবর্তনের অনুযায়ী বিধিনিষেধের পরিবর্তন করিতে স্বভাবত পরাখুথ। এই মানসিক জড়ত বা রক্ষণশীলতার প্রতিষেধ দুই প্রকারে ঘটে। বিভিন্ন জাতি বা সংস্কৃতির আনীত নূতন ভাবচিন্তা ও সংস্কারের সংস্পর্শে আমাদের গতানুগতিক ভাব ও চিস্ত আঘাতপ্রাপ্ত হয় ও আমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা জাগ্রত বা পরিপুষ্ট হয় এবং আমাদের অভ্যস্ত কোনও কোনও পুরাতন বিধিনিষেধের অনুপযোগিতার প্রতি আমাদের দৃষ্টি সবলে আকৃষ্ট হয়। কোন কোন প্রচলিত বিধিনিষেধ গতানুগতিকভাবে অন্তষ্ঠিত হইয়া মূল উদ্দেশ্য ভ্রষ্ট ও ক্রমে হীনবল হয়। আবার সকল জাতির মধ্যেই কখনও কখনও কোন মনীষাশালী ব্যক্তি প্রচলিত বাধাবন্ধ বিধি-নিষেধ’ জীর্ণ ও অসাময়িক বোধে সময়োপযোগী করিবার জন্য উহা শ্লথ কিংবা পরিবর্তিত করিয়া দেন, এবং কোনও বিষয়ে বা নূতন বাধাবন্ধের প্রবর্তন করিয়া জাতি ও সমাজের উন্নতির,গতি উন্মুক্ত ও বেগ বৰ্দ্ধিত করিয়া দেন । এইরূপে সমাজিক জীবন তরঙ্গের ন্যায় উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়া চলিতে থাকে। সকল জাতির মধ্যেই এইরূপ শক্তিমান পুরুষের আবির্ভাব কখনও কখনও দেখা যায়।