পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ö5歪 - কহিলাম “ন মীরা আজ আমি *ঘুমুব না, তোমার কাছেই থাকব ? মীরা কহিল, “তুমি আমাকে ছেড়ে আর যাবে না ? আমার জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত থাকবে ?” সহসা কিছু জবাব দিতে পারিলাম না। আমাকে নিৰ্ব্বাক দেখিয়া মীর করুণ কণ্ঠে কহিল, “তুমি কথা বলছ না, তুমি নিশ্চয় আবার আমায় ছেড়ে চলে যাবে !” এ-পয্যন্ত অনেকগুলি মিথ্যা কথা বলিয়াছি, আর একটি মিথ্যায় দোসের মাত্রা বিশেষ কিছু বাড়িবে না। তবু এই কথাটি বলার সময় গলা কঁাপিয়া গেল, বলিলাম, “না মীর, আমি চলে যাব না, তোমার জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যস্ত থাকব ।” মীরা আশ্বস্ত হইল । কিন্তু আমি জানি, আমি মীরার শেষ মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত থাকিব না। দিনের আলোয় তাহার চোখের সম্মুখে সুাষ্মপ্রকাশ করিবার সাহস আমার নাই। শুধু অকল্পিত মুখস্বপ্নের মত আসিয়া তাহাকে ক্ষণিকের মত সীমাহীন আনন্দের অধিকারিণী করিয়া রাত্রি-প্রভাতেই মুখস্বপ্নেরই মত মিলাইয়া যাইব । কিন্তু এই ক্ষণিকের মুখ তাহার জীবনের বাকী কয়টি দিন মধুর করিয়া রাখিবে। আমাদের জীবনে আলোকের আবির্ভাব অহরহ হয় না, দুঃখের অন্ধকার রাত্রির মধ্যে ক্ষণিক তড়িতের মত সমস্ত দুঃখ রাঙাইয়া তুলে । সেই আনন্দের মুহূৰ্ত্তটুকু আমরা বহু দিনের সম্বল করিয়া রাখি আর একটি বিদ্যুৎ-চমকের প্রতীক্ষা করিয়া। মীরার জীবনে বিদ্যুতের আবির্ভাব আর হইবে না। কিন্তু যাহা সে পাইল, তাহার মূল্য তাহার জীবনের মসীলিপ্ত বাকী দিনগুলির চেয়ে অনেক বড়। বাহিরে চাদ উঠিয়াছে। একটি লাল রঙের ভাঙা টুকরা মাত্র, কিন্তু কৃষ্ণপক্ষের ঘোর কালো সাধার তাহার আগমনে পলায়ন করিয়াছে। o সমস্ত রাত্রি প্রেমের অভিনয় করিলাম। ভোরের দিকে মীরা ঘুমাইয়া পড়িল। মনে মনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করিলাম, সে-ঘুম খেন তাহার না ভাঙে। - অভিনেতা ጫማኡo বাড়ী যখন ফিরিলাম, তখন বেল প্রায় আটটা । শুনিলাম, সারা রাত ধরিয়া তিন-চার জন আমার খোজ1 করিয়াছে, এবং তাহাদের খুজিয়া আনিবার জন্য আরও তিন-চার জনকে পাঠানো হইয়াছিল, কিছু ক্ষণ আগে তাহারা সকলে ফিরিয়াছে । বাবা ও জ্যেঠামহাশয় কথা কহিলেন না। মা, খুড়ী ও জ্যেঠার দল, সকলে মিলিয়া যে-পরিমাণ গালাগালি ও লাঞ্ছনা করিলেন, তাহা শুনিলে চোরেও অপমানিত বোধ করে । আমি সমস্ত রাত যেখানে ছিলাম, সেখানেই যেন থাকি, এবং আমার দগ্ধ আনন যেন আর র্তাহাদিগকে, বিশেষ করিয়া মাকে, দর্শন করিতে না হয়, ইত্যাদি। আমি স্থাণুর মত নিশ্চল, ও গীতায় উক্ত মহাপুরুষের মত নিৰ্ব্বিকার ভাবে সমস্ত শুনিয়া গেলাম। কারণ, বলিবার মত কথা তাহাদের অনেক ছিল, এবং আমার একটিও ছিল না। রাঙাদা তর্জন করিয়া কহিল, “তোর জন্তে কালকের রিহাস-লিট মাটি ।” গম্ভীরভাবে কছিলাম, “রাঙাদা, অভিনয় দু-রকমের আছে । এক রকম অভিনয়, যা তোমরা বাঁশের খুঁটির উপর ভাঙা খাট পেতে, ছেড়া সিন টাঙিয়ে ছয় ফুট লম্বা পুরুষমানুষকে মেয়েমানুষ সাজিয়ে গেয়ে অডিয়েন্সের সামনে কর, যেখানে অভিনেতা জানে সে অভিনয় করছে, দর্শকও জানে, অভিনয়ই—আর কিছু নয়। আর এক রকম—” রাঙাদা চটিয়া কহিল, “ও: ! কতবড় আমার পাবলিক ষ্টেজের অ্যাক্টর রে " “—আর এক রকম, যেখানে অভিনেতা জানে সে অভিনয় করছে, কিন্তু শ্রোতা তার প্রত্যেকটি কথা ধ্রুবসত্য ব’ল: মনে করে, অবিশ্বাস করার কল্পনাও তার মনে আসে না ।” আমার সম্পাদক-খুল্লতাত মুখবিকৃত করিয়া কহিলেন, “থাক, আর জ্যাঠামো করতে হবে না।” জমিদারী এষ্টেটের ম্যানেজার ( আড়ালে নায়েব ) খুল্লতাত সহানুভূতির স্বরে বলিলেন, “কাল তোর কি কুক্ষণেই সকাল হয়েছিল রে!” অম্বুমনস্ক ভাবে জবাব দিলাম, “কুক্ষণে না পরম শুভক্ষণে, তা আপনি কেমন ক’রে জানলেন ?”