পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oسوmه বাংলা সংস্করণ একখানি যে র্তাহাদের প্রকাশ করিবার "সঙ্কল্প আছে, মূল কাৰ্য্য সমাপ্ত হইলে সেই কাৰ্য্যে যেন অষধ বিলম্ব না হয়। প্রায় দশ বৎসর হইল, ডক্টর ঐযুক্ত রমেশচন্দ্র মজুমদার, ডক্টর শ্ৰীযুক্ত রাধাগোবিন্দ বসাক এবং পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ত্রয়ের সম্পাদনে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি হইতে রামচরিতের এক অভিনব সংস্করণ প্রকাশিত করিবার উদ্যোগ হয়। সম্পাদকগণের মধ্যে মতভেদের দরুন উহার কার্ষ্য সমাপ্ত হইয়াও প্রকাশ স্থগিত ছিল। প্রায় বৎসরেক পূৰ্ব্বে ডক্টর বসাকের নিকট উহার মুদ্রিত কয়েক ফৰ্ম্ম দেখিয়াছি। উহার মুদ্রণকাৰ্য্য শীঘ্রই সমাপ্ত হইবে, আশা করা যায়। সকলেই জানেন রামচরিত স্ব্যর্থ কাব্য— অত্যন্ত দুরূহ। দ্বিতীয় সর্গের কতকাংশ পর্য্যস্ত উহার টীকা পাওয়া গিয়াছে, তাহারই সাহায্যে রামপাল-পক্ষের ঐতিহমূলক বাক্যাবলীর অর্থ বুঝা যায়। অভিনব সংস্করণের পণ্ডিত সম্পাদকত্ৰয় বহু পরিশ্রমে সটীক অংশের টীকা এবং ব্যাখ্যা প্রণয়ন করিয়াছেন। কাজেই বাংলা দেশের প্রত্নপ্রেমিক মাত্রেই এই পুস্তক প্রকাশের পথ চাহিয়া বসিয়া আছেন । ডক্টর বসাকের অধ্যবসায়বলে আশা করি শীঘ্রই এই পুস্তক লোকলোচন-গোচর হইবে। ইতিহাস-চর্চার আদর্শ - যাহাদের পুস্তকাবলী পাঠ করিয়া আমরা ইতিহাসের ক খ শিথিয়াছি, আমাদের সৌভাগ্যক্রমে অদ্যাপি সেই বিশ্ৰুতকীৰ্ত্তি ঐতিহাসিকগণের দুই-তিন জন বাচিয়া আছেন এবং সক্রিয় আছেন । ইতিহাস-চর্চায় যে কঠিন আদর্শ র্তাহারা আজীবন অনুসরণ করিয়াছেন, সেই আদর্শই তাহারা জীবনের শেষদিন পৰ্য্যন্ত অনুসরণ করিয়া যাইবেন, ইহাই আমরা তাহাদের নিকটে প্রত্যাশা করি। বিশেষ মত বা বিশেষ পক্ষ সমর্থন যে কৌশলী লোকগণের উদ্দেশু, বড় বড় ঐতিহাসিকগণকে স্বপক্ষভুক্ত করিয়া যেন তেন প্রকারেণ মোকদ্দমায় জয়লাভ করাই তাহাদের আকাজক্ষ থাকে সেই কৌশলী স্বার্থপর লোকগণের মিষ্টবাক্যে বা খোসামোদে ভুলিয়া জজের আসন ছাড়িয়া ঐতিহাসিকগণ উকীলের গাউন পরিয়া বিশেষ বিশেষ পক্ষ সমর্থনে নিযুক্ত হইয়া যদি প্রবাসী SNరిg8 আত্মহত্যা করেন, তবে ইন অপেক্ষা শোচনীয় আর কি হইতে পারে ? বাংলার ইতিহাসচক্ষার ক্ষেত্রে সম্প্রতি এইরূপ কয়েকটি ঘটন ঘটিয়াছে। যে দৃঢ়তা ও সত্যনিষ্ঠা আমরা ব্যক্তিবিশেষের সহিত আজীবন যুক্ত করিয়া আসিতেছি, সহস দেখি কৌশলী স্বার্থপর পক্ষসমর্থকগণের মিষ্টবাক্যে তাহা ভূমিসাং হইয়াছে! এই কুহকীগণের কুহকে ভুলিয়া তাহারা অসত্যের পক্ষ সমর্থনে লাগিয়া গিয়াছেন এবং নিজেদের অধুন্য খ্যাতিদুর্গ বালকেরও বেধ্য করিয়া তুলিয়াছেন। ইমাস ন বলিয়াছেন, আমরা কাচের জগতে বাস করি, পাপ করিয়া লুকাইবার স্থান এখানে নাই । যে কারণে, যে দুর্বলতায়ই হউক, অসত্যের পক্ষ সমর্থন করিবামাত্র লোকের নিকট তাহা ধরা পড়িয়া যায়, এই অমোঘ নিয়ম হইতে কেহই অব্যাহতি পায় না। র্যাহারা মনে করেন, প্রোপাগাণ্ড দ্বারা অসত্যকে সত্য বলিয়া চালাইয়া দেওয়া যায়, তাহারা অবিশ্বাসী নাস্তিক,—জগংনিয়ন্ত, জীবের, জাতির, কালপ্রবাহের নিয়ন্ত যে এক জন আছেন, এই অতি স্বচ্ছ সত্য র্তাহারা উপেক্ষা করেন । বাংলায় বাউল গাহিয়াছে-- দেখ আমার গুরু গোসাঞী সাই – সে যে যুগ যুগাস্তে ফুটায় মুকুল তাড়াহুড়া নাই । সত্যের মুকুলই যে এই ভাবে যুগযুগাস্তে ফোটে তাহা নহে, অসত্যের মুকুলও ক্রমশঃ ধীরে ধীরে বিকশিত হইয়া যদুবংশধ্বংসী মূষলে পরিণত হয়। যে-দেশ বা যে-জাতি বা যে-ব্যক্তি মনে করে যে চালাকি করিয়া আজ ত মোকদ্দমা জিতিয়া লই, পরের ভাবনা পরে করিব,— সেই মুহূৰ্ত্তে সে আত্মবিধ্বংসী মুঘলের বীজ বপনকরে। চট্টগ্রামের কবি শশাঙ্ক সেন গাহিয়াছেন,—কীৰ্ত্তিমন্দিরের স্বারে কুলাহন্তে ধূমাবতী পাহারা দিতেছেন, ফাকা শস্তের সেথায় প্রবেশের অধিকার নাই—বিরাট কুলার ভীষণ বাত্যায় ফাক শস্ত কালের নস্তে পরিণত হইতেছে । সত্যের মন্দির সম্বন্ধেও সেই কথা খাটে। প্রোপাগাণ্ডা স্বায়া অসত্য সেথায় প্রবেশ করিতে পারে না। বুঝিবার ভুলে যে অসত্যসমর্থন উদ্ভূত, তাহা ক্ষমার্হ। কিন্তু দুৰ্ব্বলতায় যাহার জন্ম তাহা ক্ষমার একেবারেই অযোগ্য *

  • কৃষ্ণনগরে ৷ বঙ্গীয়-সাহিত্য-সম্মিলনের একবিংশ অধিবেশনে ইতিহাস-শাখার সভাপতির অভিভাষণের প্রথমাংশ ।