পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র মল্পিকাহিনী চোকরিলজীর একটু গভীর হইয়া বলিলেন, “এই খবর? আমি বলি আর কিছু।” বউ বলিল, “শুধু এই নয়, আরো কথা আছে গে। মিনিকে কোলকাতায় কোথায় কোথায় যেন দেখেছে, বড় নাকি সাহেবী চালচলন, হটুইট্‌ ক’রে রাস্তায় জুতো পায়ে দিয়ে স্থাটে, টেরামে চাপে, এই সব আমাদের ছেলের পছন্দ নয় । আমাদের ঘরের রকম ত জান দিদি, সেই রকমই শিক্ষা না হ’লে পরে কষ্ট পাবে।” মল্পিক-গৃহিণী তেল মাথা শেষ করিয়া বলিলেন, “সর দেখি, দুটাে ডুব দিয়ে নি।” তাহার মুখ বড় বেশী গম্ভীর দেখিয়া কুসুম-বউ আর কথা বাড়াইল না। মৃণাল যে নিঃসম্পর্কিত যুবকের সঙ্গে গল্প ক’রে সেটার আভাস দিতেও পঞ্চানন ক্রাট ক'রে নাই, কিন্তু সেটা আর বলা হইয়া উঠিল না । মল্লিক-গৃহিণী স্নান সারিয়া, ভিজা কাপড় কৌশলে পবিবর্তন করিয়া, শাড়ী-গামছা কাচিয়া বাড়ী ফিরিয়া চলিলেন । কাহারও সঙ্গে গল্প করিতে আর ইচ্ছা করিল না। পঞ্চাননের চিঠির কথা শুনিয়া মনটী তাহার বিরক্তিতে ভরিয়া উঠিয়াছিল । মেয়েটাও বোকা, যতই কলিকাতায় থাক, পাডাগায়ের মেয়ে ত, বিবাহও হইবে পাডাগায়ে, তাহার অত বিবিয়ানা করিতে যাওয়া কেন ? তা আবার পঞ্চাননের সাম্নে। নিন্দ ত হইবেই ? পাড়াগায়ের লোক কি একটা কথা পাইলে কখনও ছাড়ে ? তাও আবার মেয়েমানুষের নামে । পঞ্চাননেরও বাড়াবাড়ি । বিবাহ হইবে কি না তাহার কিছুরই ঠিক নাই। ইহারই মধ্যে পরের মেয়ের জন্য অত মাথাব্যথা কেন ? তাহারই না-হয় মেয়ে পছন্দ হইয়াছে, তাহার জ্যাঠার ত পণের টাকা পছন্দ হয় নাই ? আর কুমিও বজাত কম নয়। কি বা কথার ছিরি। “সোমন্ত বয়স, দিব্যি গড়নপেটন”, আ মর, বীটা মার মুখে ” রাগে গজগজ, করিতে করিতে গৃহিণী গিয়া রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠিলেন। টিনি, চিনি তখনও চারিদিকে ভাত ছড়াইতেছে আর পরম্পরকে মিষ্ট স্বম্ভাষণে অভিষিক্ত করিতেছে। তাহাদের মা ঘরে ঢুকিয়াই নড়া ধরিয়া মাটির বাস। ^మము তাহাদিগকে উঠাইয়া ঘরের বাহির করিয়া দিলেন । রাধী বলিল, “খোকাকে ধর গে৷ ” গৃহিণী বলিলেন, “রোস, ধরছি, আগে এ অস্তিাকুড় ঝেটিয়ে নিকিয়ে নিই।” এটো বাসন বাহির করিয়া, খাবার জায়গা গোবরস্তাত দিয়া নিকাইয়া, তিনি বাহির হইয়া আসিলেন : ঘুমন্ত খোকাকে রাধীর কোল হইতে তুলিয়া লইয়া ঘরে শোয়াইয়া দিলেন, কাপড়-গামছা উঠানে মেলিয়া দিলেন । ইতিমধ্যে মল্পিক-মহাশয়ও বাহিরের কাজ সারিয়া, স্বান করিয়া বাড়ী ফিরিয়া আসিলেন । গৃহিণী খাবার জায়গা করিতে করিতে বলিলেন, ‘মিনির বিয়ের কথাটা ঠিক ক’রে ফেল বাপু ।” কৰ্ত্তা বলিলেন, “হঠাৎ সে কথা মনে হ’ল কেন ?” গৃহিণী বলিলেন, “মস্ত ডাগর মেয়ে হ’ল, পাচ জনে পাচ কথা বলছে, শুনতে ভাল লাগে না । আর বেশী লিথিপড়িতে কাজ নেই, এর পর ঘর-সংসার করুক।” মল্পিক-মহাশয় বল্লিলেন, “বিয়ের কথা ত এক রকম হয়ে রয়েছে, টাকাটার যোগাড় হ’লেই হয়। বড় যে থাই ওদের, হাজার টাকার কমে রাজী হবে ব’লে মনে হয় না ". গৃহিণী ভাত বাডিয়া আনিয়া পিড়ির সামনে নামাইয়া রাখিলেন। স্বামীর জন্য থালা, বাটি, গেলাস কিছুর কম্‌তি নাই, নিজের ভাত বাডিয়াছেন একখানা কাশী-উচু বড় কাসিতে, ডাল তরকারি তাহারই উপর ঢালিয়া দিয়াছেন। মাছের ঝোলেব কড়াহুদ্ধ টানিয়া আনিয়া কঁাসির ধারে রাখিয়াছেন, দরকারমত ঢালিয়া লইবেন । মল্পিক-মহাশয় হাসিয়া বলিলেন, “তোমার কি হাড়িকুড়ি নিয়ে খেতে বসা এ জন্মে যুচবে না ? ঘরে দুই সিন্ধুক ভত্তি যে পিতল-কাসার বাসন সে কার জন্তে জিইয়ে রাখছ ?” . গৃহিণী হাসিয়া বলিলেন, “ভাত জুডুচ্ছে খাও এখন, আমার থালা ঘটির ভাবনা ভাবতে হবে না।" ও আমার দিব্যি অভ্যেস হয়ে গেছে, ঐ রকম ক’রে খেতেই ভাল লাগে। সে কথা স্থা, গে। আজ কুমির কাছে