পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চকোক্তিদের বড় বউ তোমাকে শীগগির নাইতে যেতে বলেছে।” মাতাহাদের খাইবার জায়গা করিতে করিতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন লা ? কুসমি আবার আমাকে যেতে তাগাদা দেয় কেন ?” চিনি বলিল, “তার ষে একটা কথা আছে।” টিনি বলিল, “তুমি না গেলে সে মোটে যাবেই না ঘাট থেকে ।” মল্লিক-গৃহিণী বলিলেন, “আচ্ছ, আচ্ছা, তোরা এখন খেতে বোস দেথি । নে বাছা রাধী তুই থোকাকে ধর ।” খোকাকে রাধীর কোলে দিয়া, তিনি হেঁসেল গুছাইয়া নিজের শাড়ী, গামছা, তেলের বাটি লইয়া বাহির হইয়া গেলেন। দিনের ভিতর এই সময়টুকু মাত্র তাহার অবসর ঘাট হইতে আসিতে একটু দেরিই হইয়া যায়। মানুষজনের সঙ্গে দেখা করিবার, কথা কহিবারও এই সময় । তবে তিনি খুব বেশী গল্পের ভক্ত নন এই যা রক্ষা, না হইলে এক এক বাড়ীর বেী-ঝি স্নান করিতে ঘাটে আসে বারোটায়, বেলা গড়াইয়া যাওয়ার আগে বাড়ী ফিরিবার নাম করে না । নিতাস্ত দজাল শাশুড়ী ঘরে থাকিলে দুই-এক জন ফিরিয়া যায়। শীত-গ্রীষ্ম-নির্বিচারে পুকুরঘাটের মাধ্যাহিক 'ক্লব সমান জোরে চলিতে থাকে । - মল্লিক-গৃহিণী ঘাটে পৌছিয়া দেখিলেন, মহিলা-সমাগম ইহারই ভিতর মন্দ হয় নাই। পঞ্চাননের জ্যাঠাইমাও আসিয়া পৌঁছিয়াছেন, এক ধারে বসিয়া পূজার বাসন মাজিতেছেন । ইহার মেজাজের গরিমায় বড় কেহ ইহার কাছে ঘেঁষে না । প্রৌঢ়ার আচার-নিষ্ঠ এবং সমালোচনাপ্রিয়তার জন্ত পল্লীবধূদের কাছে তিনি একটি মূৰ্ত্তিমতী বিভীষিকা । তাহার বউ কুসুম তখন ঘোমটা টানিয়া মন দিয়া নিজের শাড়ী কাচিতেছে। পাড়াগায়ে ধোপার পয়সা যথাসম্ভব বাচাইয়া চলাই নিয়ম। ময়লা কাপড় পরিলে কাহারও চোখে বড় সেটা লাগে না, ফরশ কাপড় পরিলেই সমালোচনা বেশী হয়। কুস্কমের একটু সাজসজ্জার দিকে ঝোক বেশী, কাজেই,প্রায় রোজই তাহাঁকে ১৩৪৪ সাবান-জলে সিদ্ধ করিয়া শাড়ী, জামা, মেয়ের জামা সব কাচিতে হয় । মল্পিক-গৃহিণী সিড়ির উপরের বাধানো চাতালে বসিয়া চুল খুলিয়া তেল মাখিতে বসিলেন। পাশে বসিয়া একটি মহিলা দাত মাজিতেছিলেন, তিনি বলিলেন, "চুল উঠে যাচ্ছে যে গে৷ ” . . মল্লিক-গৃহিণী বলিলেন, “বয়স ত হচ্ছে, চুলের আর দোষ কি ? এখনও যে মাথা হাতের তেলোর মত শাদা হ’য়ে যায় নি সেই ঢের ।” মহিলাটি বলিলেন, “আহ, কিবা কথার ছিরি । তোমার আবার বয়স কি ? আমাদের লতি বেঁচে থাকলে তোমার মতই হ’ত, কতই বা বয়স তা হ’লে ? এখনও ত তৰু বউজামাইয়ের মুখ দেখ নি।” মল্লিক-গৃহিণী হাসিয়া বলিলেন, “এইবার দেখব গো । তাই আগেভাগে ন্যাড়ামুড়ো হয়ে শাশুড়ীর চেহারা ধরছি।” ঘাটের নীচের ধাপ হইতে কুসুম-বউ ঘোমটা উচু . করিয়া হাতছানি দিয়া মল্পিক-গৃহিণীকে কাছে আসিতে ইঙ্গিত করিতে লাগিল । মল্পিক-গৃহিণী নীচে নামিয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি লা কুমি, ডাকি কেন ? খবরটা কি ?” বউ ফিশফিশ করিয়া বলিল, “ব’স না বলছি । এখান থেকে চেচালে ঠাকুরুণ শুনতে পাবেন যে ?” মল্লিক-গৃহিণী তাহার কাছ ঘেষিয়া বসিয়া বলিলেন, “কি কথা শুনি ?” কুসুম নীচু গলায় বলিল, “ঠাকুরপে চিঠি দিয়েছে।” মৃণালের মামীম কৌতুহলী হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি লিখেছে ? তোকে চিঠি দিয়েছে, না জ্যাঠাকে ?” কুসুম বলিল, “জ্যাঠাকে নয় গে, আমাকে, ও সব কথা কি গুরুজনের কাছে লেখা যায় ?” মল্লিক-গৃহিণী একটু গম্ভীর হইয়া জিজ্ঞাসা করিয়েন, “কি এমন কথাটা ?” বউ ফিশফিশ কুরিয়া বলিল, “তোমাদের মিনিকে তার খুব পছন্দ হয়েছে লো। হবেই বা না কেন ? দিব্যি সোমন্ত মেয়ে, দিব্যি গড়নপেটন, চোখে ত ধরবেই।”