পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b=RR প্রবাসী । $N933 একটু পরে একটি বালক একখানা বড় থালা লইয়া স্বামার সামনে ধরিল। তাহাতে কিছু আবীর, কিছু ফুল, কয়েকটি টাকা, গোটাকতক চিনির এলাচ-দানা ও মিছরিখণ্ড, এক ছড়া ফুলের মালা। রাসবিহারী সিং আমার কপালে কিছু আবীর মাখাইয়া দিল, আমিও তাহার কপালে আবীর দিলাম, ফুলের মালাগাছি তুলিয়া লইলাম আর কি করিতে হইবে ন-বুঝিতে পারিয়া আনাড়ী ভাবে থালার দিকে চাহিয়া আছি দেখিয়া রাসবিহারী সিং বলিল—আপনার নজর, হুজুর। ও আপনাকে নিতে হবে। আমি পকেট হইতে আর কিছু টাকা বাহির করিয়া থালার টাকার সঙ্গে মিশাইয় বলিলাম—সকলকে মিষ্টিমুখ করাও এই দিয়ে। রাসরিহারী সিং তার পর আমাকে তাহার ঐশ্বৰ্য্য দেখাইয় লইয়া বেড়াইল । গোয়ালে প্রায় ষাট-পয়ষট্রিাট গরু । সাত-আটটি ঘোড়া আস্তাবলে—দুটি ঘোড়া নাকি অতি সুন্দর নাচিতে পারে, এক দিন নাচ আমায় সে দেখাইবে । হাতী নাই কিন্তু শীঘ্র কিনিবার ইচ্ছা আছে । এ-দেশে হাতী না-থাকিলে সে সন্ত্রান্ত লোক হয় না। আট-শ মণ গম চাষে উৎপন্ন হয়, দু-বেলায় আশী-পচাশী জন লোক খায়, সে নিজে সকালে নাকি দেড় সের দুধ ও এক সের বিকানীর মিছরি স্বানান্তে জলযোগ করে। বাজারের সাধারণ মিছরি সে কখনও খায় না, বিকানীর মিছরি ছাড়া । মিছরি থাইয়া জলযোগ যে করে, সে এ-দেশে বড়লোক বলিয়া গণ্য হয়— বড়লোকের উহা আর একটি লক্ষণ । তার পর রাসবিহারী একটা ঘরে আমায় লইয়া গেল, তার ঘরের আড়া হইতে দু-হাজার আড়াই-হাজার ছড়া ভুট্টা ঝুলিতেছে। এগুলি ভুট্টার বীজ, আগামী বৎসরের চাষের জন্য রাখিয়া দেওয়া হইয়াছে। একখান লোহার কড়া আমায় দেখাইল, লোহার চাদর গুল্-বসানো পেরেক দিয়া জুড়িয়া কড়াখানা তৈরি, তাতে দেড় মণ দুধ একসঙ্গে জাল দেওয়া হয় প্রত্যহ । তাহার সংসারে প্রত্যহই ঐ পরিমাণ দুধ খরচ হয়। একটা ছোট ঘরে লাঠি, ঢাল, সড়কি, বর্ণ, টাঙি তৰোয়ার এত বেশী যে সেটাকে রীতিমত অস্ত্রাগার বলিলেও চলে। " রাসবিহারী সিংয়ের ছয় জন ছেলে—জ্যেষ্ঠ পুত্রটির বয়স ত্ৰিশের কম নয়। প্রথম চারটি ছেলে বাপের মতই দীর্ঘকায়, জোয়ান, গোফ ও গালপাটার বহর এরই মধ্যে বেশ । তাহার ছেলেদের ও তাহার অস্ত্রাগার দেখিয়া মনে হইল, দরিদ্র, অনাহারশীর্ণ গাঙ্গোত প্রজাগণ ষে ইহাদের ভয়ে সঙ্কুচিত হইয়া থাকিবে, ইহা আর বেশী কথা কি ? রাসবিহারী অত্যন্ত দাম্ভিক ও রাসভারী লোক । তাহার মানের জ্ঞানও বিলক্ষণ সজাগ। পান হইতে চূণ খসিলেই রাসবিহারী সিংয়ের মান যায়, সুতরাং তাহার সহিত ব্যবহার করিতে গেলে সৰ্ব্বদা সতর্ক ও সন্ত্রস্ত থাকিতে হয় । গাঙ্গোত প্রজাগণ ত সৰ্ব্বদা তটস্থ অবস্থায় আছে, কি জানি কখন মনিবের মানের ক্রটি ঘটে। বৰ্ব্বর প্রাচুর্য্য বলিতে যা বুঝায়, তাহার জাজল্যমান চিত্র দেখিলাম রাসবিহারীর সংসারে । যথেষ্ট দুধ, যথেষ্ট গম, যথেষ্ট ভূট্টা, যথেষ্ট বিকানীর মিছরি, যথেষ্ট মান, যথেষ্ট লাঠিসোটা। কিন্তু কি উদ্দেশ্বে ? ঘরে একখানা ভাল, ছবি নাই, তাল বই নাই, ভাল কোঁচ কেদার দূরের কথা, ভাল তাকিয়া-বালিস-সাজানো বিছানা নাই। দেওয়ালে চুণের দাগ, পানের দাগ, বাড়ীর পিছনের নর্দমা অতি কদৰ্য্য নোংরা জল ও আবর্জনায় বোজানো, গৃহস্থাপত্য অতি কুত্ৰ, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে না, নিজেদের পরিচ্ছদ ও জুতা অত্যন্ত মোটা ও আধময়লা । গত বৎসর বসন্ত রোগে বাড়ীর তিন-চারটি ছেলেমেয়ে এক মাসের মধ্যে মারা গিয়াছে। এ বৰ্ব্বর প্রাচুর্ধ্য তবে কোন কাজে লাগে ? নিরীহ গাঙ্গোত প্রজা ঠেঙাইয়া এ প্রাচুর্য্য অর্জন করার ফলে কাহার কি সুবিধা হইতেছে ? অবশ্য রাসবিহারী সিংয়ের মান বাড়িতেছে। ভোজ্যদ্রব্যের প্রাচুর্য্য দেখিয়া কিন্তু তাক লাগিল। এত কি এক জনে খাইতে পারে ? হাতীর কানের মত বৃহদাকার পুরী খান-পনর খুরিতে নানা রকম তরক্লারি, দই, লাড, মাহুপোয়, চাটনি, পাপর। আমার তো এ চার বেলার খোরাক । রাসবিহারী সিং নাকি একা এর দ্বিগুণ আহার্ষ্য উদবুস্থ করিয়া থাকে এক বারে । আহার শেষ করিয়া বাহিরে যখন আসিলাম, তখন