পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

あ5百 বেলা আর নাই । গাঙ্গোত, প্রজার দল উঠানে পাতা পাতিয়া দই ও চীনা ঘাসের ভাজা দানা মহা আনন্দে খাইতে বসিয়াছে । সকলের কাপড় লাল রঙে রঞ্জিত, সকলের মুখে হাসি । রাসবিহারীর ভাই গাঙ্গোতাদের খাওয়ানোর তদারক করিয়া বেড়াইতেছে। ভোজনের উপকরণ অতি সামান্ত, তাতেই ওদের খুশী ধরে না। অনেক দিন পরে এখানে সেই বালক-নৰ্ত্তক ধাতুরিয়ার নাচ দেখিলাম। ধাতুরিয়া আর একটু বড় হইয়াছে, নাচেও আগের চেয়ে অনেক ভাল । হোলি-উৎসবে এখানে নাচিবার জন্য তাহাকে বায়না করিয়া আনা হইয়াছে, রাসউল্লাস সিংয়ের মুখে শুনিয়াছিলাম । ধাতুরিয়াকে কাছে ডাকিয়া বলিলাম—চিনতে পার ধাতুরিয়া ? ধাতুরিয়া হাসিয়া আমায় সেলাম করিয়া বলিল—জী হুজুর । আপনি ম্যানেজার বাবু। ভাল আছেন হুজুর ? ভারী সুন্দর হাসি ওর মুখের। আর ওকে দেখিলেই মনে কেমন একটা অমুকম্পা ও করুণার উদ্রেক হয় । ংসারে আপন বলিতে কেহ নাই, এই বয়সে নাচিয়া গাহিয়৷ পরের মন যোগাইয়া পয়সা রোজগার করিতে হয়। তাও রাসবিহার, সিংয়ের মত ধনগৰ্ব্বিত অরসিকদের গৃহপ্রাঙ্গণে । জিজ্ঞাসা করিলাম—এখানে তো অৰ্দ্ধেক রাত পৰ্য্যস্ত নাচতে গাইতে হবে, মজুরি কি পাবে ? ধাতুরিয়া বলিল—চার আনা পয়সা হুজুর আর খেতে দেবে পেট ভ’রে । —কি খেতে দেবে ? —মাঢ়া, দই, চিনি। লাডও দেবে বোধ হয়, আরবছর তো দিয়েছিল । আসন্ন ভোজ খাইবার লোতে ধাতুরিয়া খুব প্রফুল্প হইয়া উঠিয়াছে। বলিলাম—সব জায়গায় কি এই মঞ্জুরি ? ধাতুরিয়া বলিল—না হুজুর, রাসবিহারী সিং বড়মানুষ, তাই চার আন দেবে আর খেতেও দেবে। গাঙ্গোতাদের বাড়ী নাচলে দেয় দু-জানা, খেতে দেয় না, তবে আধ সের মকাইয়ের ছাতু দেয়। - আরণ্যক Ե-ՋՀC) —এতে চলে ? —বাবু, নাচে কিছু হয় না, আগে হ’ত । এখন লোকের কষ্ট, নাচ দেখবে কে ? যখন নাচের বায়ন নী থাকে, ক্ষেতে খামারে কাজ করি। আর-বছর গম, কেটেছিলাম। কি করি হুজুর, খেতে তো হবে। এত সখ করে ছক্করবাজি নাচ শিখেছিলাম গয়া থেকে । কেউ দেখতে চায় না, ছক্করবাজি নাচের মজুরি বেশী । ধাতুরিয়াকে আমি আর এক দিন কাছারিতে নাচ দেখাইবার নিমন্ত্ৰণ করিলাম। ধাতুরিয়া শিল্পী লোক— সত্যিকার শিল্পীর নিষ্ঠ ও নিম্প,হতা ওর মধ্যে আছে। পূর্ণিমার জ্যোংস্কা খুব ফুটিলে রাসবিহারী সিংয়ের নিকট বিদায় লইলাম । রাসবিহারী সিং পুনরায় দুটি বন্দুকের আওয়াজ করিল, আমার ঘোড়া উহাদের উঠান পার হইবার সঙ্গে সঙ্গে, আমার সম্মানের জন্য । রাসবিহারী সিংয়ের বাড়ী হইতে যখন বাহির হইয়াছি দোল-পূর্ণিমার শুভ্ৰ জ্যোৎস্না উদার, মুক্ত, প্রাস্তরের মধ্যে তাহার ইন্দ্রজাল রচনা করিয়াছে, ফাঙ্কনের মাঝামাঝি হইলেও বেশ শীত, দীর্ঘ ঘাসের বন এরই মধ্যে শিশিরে ভিজিয়া উঠিয়াছে, আগাগোড়া সাদা বালির রাস্তা জ্যোৎস্নাসম্পাতে চিকচিক্‌ করিতেছে। দূরে একটা সিল্লি পাণী জ্যোংস্কারাতে কোথায় ডাকিতেছে—যেন এই বিশাল, জনহীন প্রান্তরের মধ্যে পথহারা কোনো বিপন্ন নৈশ পথিকের আকুল কণ্ঠস্বর। পিছন হইতে কে ডাকিল—হুজুর ম্যানেজার বাবু— চাহিয়া দেখি ধাতুরিয়া আমার ঘোড়ার পিছু পিছু ছুটিতেছে । ঘোড়া থামাইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম—কি ধাতুরিয়া ; ধাতুরিয়া হাপাইতেছিল। একটুখানি দাড়াইয়া দম লইয়া, একটু ইতস্তত: করিয়া পরিশেষে লাজুক মুখে বলিল—একটা কথা বলছিলাম, হুজুর— তাহাকে সাহস দিবার স্বরে বলিলাম—কি বল না । —হজুরের দেশে কলকাতায় আমায় একুবার নিয়ে যাবেন ? —কি করবে সেখানে গিয়ে ? —কখনো কলকাতায় লুই নি, শুনেছি সেখানে গাওনা