পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপান ভ্রমণ ঐশান্তা দেবী হংকং থেকে হুড়োছড়ি ক’রে জাহাজে ফিরে এসে দেখলাম সহযাত্রী ও ষাক্রিণীর কেউ ফিরে আসেন নি। রাত ১১টা পৰ্য্যস্ত র্তাদের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে । আমরা সেটা আগে জানতে পারি নি, কাজেই আমাদের অনেকটা সময় জাহাজের খোলে মাটি হ’ল । খানিক পরে দেখি আশেপাশের কেবিনে কুলির সব আলমারির মত বড় বড় কাঠের বাক্স এনে ঢোকাচ্ছে । রে এক-একটা বাক্সতে এক-একটা কেবিনের সব উত্ত জায়গাটুকুই ভরে যায়। মনে করলাম হয়ত বড় রকম কেউ যাত্রী আসছেন। পরে জানা গেল হংকঙের বাজারে চীনাদের কাঠের কাজ খুব সস্তায় পাওয়া যায়, তাই মেমসাহেবরা বান্ধ কিনে তাকে আবার অন্য বাক্সে প্যাক ক’রে জাহাজে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাল্পর ডালায় এবং চার পাশে সুন্দর কারুকার্ষ্য । অনেক রাত্রে পাশের কেবিনের মেমসাহেবরা ফিরে এসে আমাদের দরজায় ধাক্কা দিতে সুরু করলেন । বেরিয়ে শুনলাম তারা চাবির অভাবে নিজেদের ঘরে ঢুকতে পারছেন না। ভূত্যদের কাছে চাবি জমা দেওয়া ছিল, তারা বোধ হয় সেগুলো পকেটে ক’রেই ডাঙায় হাওয়া খেতে বেরিয়ে গেছে । আমাদের চাবি দিয়ে দরজা খুলতে অনেক চেষ্টা ক’রেও খোলা গেল না । বেচারীর সারাদিনের শ্রান্তির পর খাবার ঘরের চেয়ারে খাড়া হয়ে ব’সে কতক্ষণ থাকবে ? অকস্মাৎ একজন কার শুভ বুদ্ধির উদয় হ’ল। সে নিজে থেকে এসে বলল যে চাকরেরা তার কাছে চাবি রেখে গিয়েছে, এরা এসেছেন জানয়ে সে আগেই চাবি নিয়ে আসত। ২৮ শে জানুয়ারী আমরা ফরমোসা দ্বীপপুঞ্জের কাছে এসে পড়লাম। এখানেও সমুদ্র আবার মলাস্ক প্রণালীর মত স্থির, ঠিক যেন তেলের উপর ,জাহাজ ভাসছে। বোধ হয় আমরা ফরমোসা প্রণালীর ভিতর দিয়ে যাচ্ছি । প্রণালীতে এলেই বুঝি সমূদ্র নদীর কি হ্রদের মত স্থির হয়ে যায় । জলের রং এখানে ফিকে সবুজ। আকাশে এত মেঘ করেছে যে কোথাও একটু ফাক দেখা যায় না। মনে হচ্ছে সমুদ্রের উপর কে বড় একটা ঢাকনা-বাটি উণ্টে দিয়েছে। পরিষ্কার দিনে আকাশের স্বচ্ছতায় এরকম মনে হয় না । বেলা ২টার পর ডেকে এসে দেখলাম আবার নৌকায় নৌকায় সমুদ্র ছেয়ে গেছে। বেশীর ভাগ পাল ব্রাউন রঙের। কয়েকটা কমলা রঙেরও আছে। এক-এক নৌকায় তিনটে ক’রে পাল। পালের হাওয়ার ভরে নৌকা দুলে দুলে চলেছে। জাহাজের চেয়ে কত বেশী সুন্দর দেখতে । মনে হয় যেন মস্ত মস্ত সব জলচর জীব মাছ কি পার্থী সমুদ্রের উপর গা ভাসিয়ে ছুটে চলেছে। পাশ দিয়ে একটা জাহাজ গেলে যাত্রীরা খাওয়া-দাওয়া ফেলে ছুটে দেখতে আসে, কিন্তু এমন সুন্দর নৌকা ঝাক বেঁধে চলেছে, কেউ একবার দেখতে আসে না । শীতের হাওয়া না থাকলে ডেকে বসে সারাদিন এদের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। এরা মানুষের মন এমন ক’রে টানে যেন এদেরও প্রাণ আছে । হংকঙের চেয়ে এখানে শীত কম। কিন্তু জাহাজের আইনমত আজকের তারিখ থেকে বোধ হয় ঘর গরম করা নিয়ম। তাই পাইপের ভিতর দিয়ে গরম হাওয়া চালিয়ে সব ঘর গরম কর। মুরু হয়েছে । ভিতরে এখন ঠাণ্ডা প্রায় লাগেই না। আমাদের কেবিনের ভিতর দিয়ে বড় পাইপটা গিয়েছে ব’লে রাত্রে ঘরে এমন গরম আর গন্ধ হয়ে উঠেছিল যে ঘরে ঢুকেই মাথা ধরে গেল। এমন গরমের চেয়ে শীত ঢের ভাল । শেষে বয়কে ডেকে পাইপ বন্ধ করিয়ে আধ ঘণ্টা বাইরে বসে থেকে তবে গুতে পেলাম। তবুও এত গরম ছিল যে কম্বলটা পায়ের উপর ফেলে রেখেই কাজ চলে গেল। তার আগের রাত্রে