পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6 بيمسون প্রবাসী । SN983 ঘর গরম করা হয় নি ব’লে দুটো কম্বলে নাক পৰ্যন্ত টাকা দিয়েও মনে হচ্ছিল নাক-মুখ দিয়ে গায়ের ভিতর ঠাও। হাওয়া ঢুকে যাচ্ছে। জাহাজে বোধ হয় ঘর গরম করার মত গরম পোষাক পরারও নিদিষ্ট দিন আছে। সেই তারিখের আগে শীত লাগলেও স্বতোর কাপড় পরে নাবিক ও কর্মচারীরা ঘোরে। এসব বিষয়ে এখানে “অচলায়তনে”র মত 62 তার পরদিন ১০টা আন্দাজ শুনলাম লুচু দ্বীপপুঞ্জের কাছ দিয়ে চলেছি। কাল সমুদ্র যেমন শান্ত ছিল আজ তেমনই উন্মত্ত নুত্যে মেতেছে। আকাশ মেঘে ঢাকা, ফেন-ভূষণ তরঙ্গগুলি বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের বুকে দাপাদাপি জুড়ে দিয়েছে। হাওয়ার তাড়নায় চূর্ণ ফেনা সাদা ধোয়ার মত উড়ে মেঘের বুকে গিয়ে লাগছে। জাহাজ দুলছে যেন একবার স্বর্গের দরজায় ধাক্কা দিয়েই আবার পাতালের গহ্বরে ছুটে নেমে যাচ্ছে । রেলিং না ধ’রে এক পা হাটা যায় না। ডেকে নদীর মত জলস্রোত বয়ে চলেছে । হাওয়া যেমন ভীষণ জোরালো, শীত তেমন নেই। অসংখ্য ক্রুদ্ধ দানব যেন কেশর দুলিয়ে মুখে ফেনা তুলে সগর্জনে যুদ্ধে নেমেছে। বঙ্গোপসাগর কিংবা চীন সাগরও এতটা ক্ষেপে নি। কেউ কেউ বলছেন এইটা এখানকার সব চেয়ে ঝোড়ো সময় (roughest time) তাই শাংহাইয়ের ঝোড়ো পথ ছেড়ে দিয়ে ওরই মধ্যে একটু ভাল পথে এরা সোজা কোবের দিকে চলেছে। মাঝ রাত থেকেই এই সাগর-তাগুব মুরু হয়েছিল বোধ হয় । রাত্রে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছি অকস্মাৎ বরুণদেবের এক অনুচর ঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে আমার গায়ে এক কলসী জল ঢেলে দিয়ে গেলেন। শীতের দিনে যা আরাম লেগেছিল বলবার নয়। বরুণের এই অনুচরগুলি যখন ক্ষেপে সত্যি মনে হয় তাদের প্রাণ আছে। জাহাজের মুখের কাছটায় উন্ট হাওয়া আর এঞ্জিনের ঠেলার সংঘর্ষে সারাক্ষণ শুভ্র ফেনা এবং ফেনচুর্ণে মেঘলোক হয়ে আছে। সমুদ্রমন্থনে এই রকম ক’রে মাখন তোলা হয়েছিল বোধ হয় । জাপান পৌছতে আর বেশী দেরি নেই। দু-তিন দিন মাত্র বাকী। মালে ধে জাহাজের পেট বোঝাই । সেই সব ত কোবের্তে নামাতে হবে । কাজেই জাহাজে নানা রকম কাজের ঘটা লেগে গিয়েছে । জাপানে ডেকপ্যাসেঞ্জার যেতে আসতে দেয় না। সুতরাং ডেকগুলো একেবারে খালি । সেখানে দড়ি কাছি পাকানো চলছে, ছুতোরেরাও কাজ করছে । খোলা ডেক পেয়ে যাত্রীরাও খুব ডেক-গাল্ফ খেলায় মন দিয়েছেন। আমি আগে বিশেষ খেলি নি, কিন্তু এখন দেখলাম একটু চেষ্টা করলেই প্রথম হওয়া যায়। ৩১শে আমরা জাপান দ্বীপমালার পায়ের কাছে এসেছি। সকাল থেকেই অনেক পাহাড় দেখা যাচ্ছে । এগুলি সব অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের পাহাড়। অধিকাংশের নাম জাপানের ম্যাপে নেই। বেলা দশটায় আমরা একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরির খুব কাছে এসে পড়লাম। তার নাম কুচিনো য়্যারাবু সীমা । জীবন্ত ব’লে অবশু স্পষ্ট বোঝা যায় না। মাথার উপর এত মেঘ যে কোনটা ধোয়া আর কোনটা মেঘ বোঝা শক্ত। তবে মনে হচ্ছে পায়ের কাছ দিয়ে একটা সরু ধোয়ার রেখা বেঁকে বেঁকে চলেছে— রং তারও মেঘের মত, তবে সেটা স্থির নয়, চলন্ত । সাড়ে দশটার পর থেকে দুই দিকেই পাহাড় দেখা যাচ্ছে । জাহাজের ম্যাপে এইখানকার দ্বীপগুলির নাম আছে । নিজেদের দেশ সম্বন্ধে সব মানুষেরই উৎসাহ বেশী হয়, জাপানীদের ত কথাই নেই। দেশের কাছে আসতেই এরা নিজের নূতন ক’রে বড় ম্যাপ একে জাহাজের পথ একে কটায় কোন দ্বীপের কাছ দিয়ে যাচ্ছি সব লিখে টাঙিয়ে দিয়েছে। অন্য দেশের সম্বন্ধে এরকম আঁকা কি লেখা কোনও দিন টাঙাতে দেখি নি। জাহাজের পথের দুপাশেই অনেক আগ্নেয়গিরির নাম ম্যাপে লেখা আছে। তবে চোখে দেখে কোন পাহাড়টা কি কিছুই বোঝা যায় না। সব পাহাড়ের মাথায় মাথায়ই মেঘ ভাসছে । সমুদ্র বেশ শাস্ত, শীত খুব বেশী নয়। যাত্রীরা সব হোটেল, জাহাজু ইত্যাদির তালিকা নিয়ে পরামর্শে ব্যস্ত। কে কোথায় নামবে, কোথায় থাকলে কম খরচ হয়, জাহাজে ক'দিন ঘুমোতে পেলে কত পয়সা হোটেল ভাড়া বঁচোন যায় ইত্যাদি নানা আলোচনা চলেছে।