পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V ভীমরুলের রাহাজানি স্ত্রীগোপালচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য জ্যৈষ্ঠের অপরাস্তুে এক দিন বেলগাছিয়া রোড দিয়া যাইতে যাইতে দেখিতে পাঠলাম, রাস্তার এক পাশ্বে এক দল কালো রঙের ক্ষুদে পিপীলিকা সার বাধিয়া চলিয়াছে। নিকটেই রাস্তার উপর রেল-লাইনের পুল। পিপীলিকার এই রেল পুলের বাধের নীচেই একটা গর্ভের মধ্যে ঢুকতেছিল। একটু লক্ষ্য করতেই দেখিতে পাইলামু-মাঝারিগোছের একটা কুণে ব্যাং পিপড়ের লাইনের প্রায় তুষ্ট তিন ইঞ্চি তফাতে ও পাতিয়া বসিয়া আছে । ব্যাংটাকে এই ভাবে নিরিবিলি চুপচাপ বসিয়া থাকিতে দেখিয়৷ বড়ই কৌতুহল হইল—দেখা যাক কি করে। অনেক ক্ষণ কিছুই কপিল না--কেবল মাঝে মাঝে অদ্ভুত উপায়ে গলার নীচের পর্দাটাকে কঁপাইতে লাগিল । চলিয়। যঠিব ভাবিতেছি—এমন সময় একটা পিপীলিক দল ছাড়িয়া ব্যাংটার একটু ধার ঘেষিয়া অগ্রসর হইব মন্ত্রই চক্ষের নিমেযে সে তাহকে গলাধঃকরণ করিয়ু ফেলিল। কেবল টক্‌ করিয়া একটু শব্দ হইল মাছ । কোম্‌ ফীকে যে জিবে ঠেকাইয়৷ পিপড়েটাকে মুখে পূরল তাহ। লক্ষ্যই চটল না। এতক্ষণে বুঝিতে পরিলাম-পিপড়ে খাইবার জন্যই ব্যাংটা ওং পাতিয়া বসিয়া আছে । অল্প সময়ের মধ্যেই সে আরও দুইটি পি পড়েকে টক্‌ টক্‌ করিয়৷ গিলিয়া ফেলিল । পিপড়ের সারির মধ্যে মাথা-মোটা খুব বড় বড় সৈন্তাজাতীয় পিপড়ের মাঝে মাঝে আনাগেনা করেতেছিল । হঠাৎ ঐরাপ একটা সৈনিক-পিপড়ে লাইন ছাড়িয়া ব্যাংটার সম্মুখীন হইবামাত্রই সে টক্‌ করিয়া তাহকে মুখে পুরিয়া ফেলিল এবং সঙ্গে সঙ্গে কল কল শব্দে একটা করুণ আৰ্ত্তনাদ শুনিতে পাইলাম। ব্যাংট। ছটফট করিয়৷ এদিক ওদিক লাফাইতেছে আর এক প্রকার অদ্ভূত শব্দ করিতেছে । বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিয়৷ দেখিতে পাইলাম— পিপড়েটা তাহার মুখে অদ্ধেক বাহির হইয়া রহিয়াছে। বোধ হয় জিব ঠেকাইয়া তাহাকে গিলিবার সময় সে ব্যাঙের জিব কামড়াইয়৷ ধরিয়াছে। যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া ব্যাংটা ইতস্ততঃ লাফালাফি করিতেছিল। পকেটে একটুখানি 'কঙ্গে-রেড ছিল । হাতের কাছে কিছু না পাইয় তাহাই খানিকট ব্যাংটার গায়ের উপর ছড়াইয়া দিলাম। চিহ্ন রাখিবার উদ্দেশ্য এই যে, এই ভাবে জব্দ 5ইয়াও সে আবার পিপড়ে-শিকারের জন্য কালও এই স্থানে আসে কি না। ব্যাংট। কিছুক্ষণ ছটফট করিয়া মুখ মষিয়া পিপড়েটাকে ছাড়াইবার ব্যর্থ চেষ্টা করিল ; অবশেষে ৰাধের পাশেই একটা গৰ্ত্তের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল । তার পর দিন বেলা প্রায় সাড়ে দশটার সময় সেখানে গিয়া সখি-পিপড়ের সার পূর্বমতই রহিয়াছে ; কিন্তু ব্যাঙের দেখা নাই । ( পৰ্য্যবেক্ষণের ফলে পরে জানিতে পারিয়াছি যে, ব্যাঙের সাধারণতঃ দিনের আলোতে আহারান্বেষণে বাহির হয় না । পড়ন্তু বেলায় এবং অন্ধকারেক্ট ইহারা শিকার অনুসন্ধান করিয়া থাকে । ) যাহা হউক, ব্যাঙের আগমনের অপেক্ষায় বসিয়া আছি । প্রায়ু দশ-বার হাত দূরে ঘাসের উপর এক খণ্ড শুষ্ক প্যাকাটি পড়িয়া ছিল— একটা ভীমরুল সেষ্ট প্যাকাটি হইতে মুখ দিয়া কুরিয়া কুরিয়৷ কি যেন সংগ্ৰহ করিতেছিল। মনে হইল যেন বাস "নিৰ্ম্মাণ করিবার উপকরণ সংগ্ৰহ করিতেছে । একমনে তাহাই দেখিতেছি । ইতিমধ্যে দেখি-সওয়া ইঞ্চি কি দেড় ইঞ্চি লম্বা একটা সাদা রঙের শুয়োপোক, কখনও বা ঘাসের উপর দিয়া কখনও বা নীচে দিয়৷ দিশাহারা ভাবে অতি দ্রুতবেগে ছুটয় চলিয়াছে। একট। হলুদে রঙের বোলত। তাছাকে তাড়া করিয়াছে। শুয়োপোকাটা বোলতার কাছ হইতে প্রায় সতর-আঠার ইঞ্চি দূরে ঘাসের নীচে দিয়া চলিয়। গিয়াছিল বলিয়াই সোলতার লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছিল । সে একবার ঘাসের নীচে চুকিয়, এক বার উপরে উঠয়া মরিয়া হইয়.ধেন শুয়োপোকার সন্ধান করিতেছিল । শুয়োপোকাট। যদি এক স্থানে চুপ করিয়া বসিয়া থাকত, তবে বোধ হয় বোলত সহজে তাহার সন্ধান পাইত না ; কিন্তু প্রাণভয়ে ছুটিবার ফলেই এবার বোলত তাহাকে দেখিয়া ফেলিল এবং তৎক্ষণাং উড়িয়া আসিয়৷ তাহার ঘাড় কামড়াইয়া ধরিল । তখন একটা ভীষণ ওলটপালট কাণ্ড । শুয়োপোকাট। প্রাণপণে ছুটিতেছে, আর বোলতা তাহাকে ধরিয়া রাখবার চেষ্টা করিতেছে—ইহার ফলে একবার বোলতা নীচে পড়িতেছে, শুয়োপোকাটা উপরে উঠিতেছে, আবার শুয়োপোক। নীচেপড়িতেছে, বোলত পিঠের উপর চাপিয়া বলিতেছে। এইরূপ ধ্বস্তাধস্তি করিতে করিতে তাঙ্গার প্যাকাটিটার খুব কাছে আসিয়া পড়িল । শুয়োপোকার আর ঢলিবার সামর্থ্য নাই— বোলতার পুনঃ পুন: দংশনে একেবারে নিজীব হইয়া আসিতেছিল। তথন বোলত তাহার পেটের দিকের খানিকট অংশ চিরিয়া ফেলিল । সবুজ রঙের নাড়ীভূ ড়ি বাহির করিয়া সে তাহ কুরিয়া কুরিয়া খাইতে লাগিল । খানিক ক্ষণ পরেই আবার উপরে উঠিয়া শুয়েপোকার দেহ দ্বিখণ্ডিত করিয়া লেজের দিকের বড় অংশ হুইতে কুরিয়া কুরিয়া খাইতে লাগিল ৷ ভীমরুলটার অবস্থা দেখিয়া মনে হইল সে যেন ইতিপূর্বেই কিছু একটা ঘটনার অচ পাইয়াছিল, কিন্তু ব্যাপারটা ভালরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে নাই । কারণ ইতিমধ্যেই সে কাজ বন্ধ রাখিয়া মাথা উচাইয়া চুপ করিয়া যেন কিছু একট। অনুধাবন করিবার চেষ্টা করিতেছিল। এইবার ঘুরিয়া বসিতেই বোলতাটার উপর তাহার নজর পড়িল এবং তৎক্ষণাৎ উড়িয়া গিয়া বোলতাকে আক্রমণ করিল। বোলুত। এইরূপ একটা প্রবল শত্রুর আচমকা আক্রমণে বিভ্রান্ত হইয়া শিকার ছাড়িয়া উড়িয়া গেল ; কিন্তু বেশী দূর না গিয়া আবার ঘুরিয়া আসিল । ভীমরুলটা ততক্ষণ শিকারটা খাইবার উদ্যোগ করিতেছিল । বোলতাটাকে পুনরায় আদিত্ত্বে দেখিয় শিকার ছড়িয়া সে আবার