আশষণচ হইবে। স্বর্গগত অথবা স্বৰ্গত বলিলে ভুল হয় না এবং সাবধান লেখকের তাহাই লিথিয় থাকেন। কাহারও মৃত্যু হইলে, বিশেষতঃ পিতা অথবা মাতার মৃত্যুর পর, কয়েক দিন বাঙ্গল দেশের হিন্দুরা স্বীয় বিশ্বাস অনুসারে অতি শুচি ভাবে থাকেন, মাছ-মাংস খান না, নিম্নজাতীয় লোককে স্পর্শ করেন না, যেখানে সেখানে আহার করেন না অথচ সেই সময়টিকে বলেন অশৌচ—ইহাও একটা মস্ত ভুল। এই বিষয়ে আমি স্থানাস্তরে বিস্তৃত ভাবে আলোচনা করিয়াছি । এক প্রদেশেরই ভিন্ন ভিন্ন স্থানে কোন কোন শব্দ সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত হইয়া থাকে। আমরা কন্যাকে বলি মেয়ে, কিন্তু রাঢ়ে মেয়ে বলে স্ত্রীকে । অনেক সময়ে লোকে নিজের দেশের কথা ভুলিয়া যায় এবং সেই সকল কথার নুতন অর্থ করিয়া থাকে। অবিবাহিত বালক-বালিকাকে আইবড় ব। আইবুড় বলিত। কিন্তু পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে বিবাহের নিমন্ত্রণ-পত্রে আইবুড়-ভাত স্থলে আয়ুবুদ্ধান্ন লেখা হইত, “আইবুড়’ শব্দটা যে অব্যুঢ় শব্দের অপভ্রংশ তাহাতে সন্দেহ মাত্র মাঠ এবং তাহার অর্থ অবিবাহিত । এত বড় ঘর বড় আইবড় ঝি বিবাহ না হ’লে পরে লোকে কবে কি । এই কবিতার “আইবড়' শব্দের অর্থ যে অবিবাহিত তাহ সম্পূর্ণ স্পষ্ট। আবার ‘ঝি’ শব্দের অর্থ যে কন্যা তাহাঙ এখানকার অনেক বাঙ্গালী ভুলিয়া গিয়াছেন । কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে এক জন বাঙ্গালী ষ্টেট্স্ম্যান পত্রে, ঝিকে মেরে বেীকে শেখান, এই কথাটার অর্থ করিতে গিয়া ঝি শব্দের অতুবাদ করিয়াছিলেন maid-servant । বাঙ্গালীর বাড়ীর চাকরাণীকে ঝি বলিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন যেহেতু চাকরাণীর প্রতি কন্যার মত ব্যবহার করা উচিত বলিয়৷ তাহারা মনে করিতেন । এই শব্দটিতে বাঙ্গালীদের মনের উচ্চ ভাবই প্রকাশ পায়। ‘অহল্যাঞ্জার' ইন্দ্রের একটা নাম । কালে হিন্দুরা এই বৈদিক নামের অর্থ ভুলিয়া গিয়াছিলেন । পৌরাণিকেরা ইন্দ্রের নামে এক জঘন্য কলঙ্ক আরোপ করিয়া এক গল্প স্বষ্টি করিলেন। সেই গল্প এখন সকলেই বিশ্বাস করে। ভাষারহস্য w9ww9 মহাপণ্ডিত কুমারিলভট্ট দেখাইয়াছেন যে “অহল্যা’ শব্দের অর্থ রাত্রি এবং পরম ঐশ্বৰ্য্য জ্ঞাপক হদ ধাতু হইতে নিম্পন্ন ইন্দ্র শব্দ সূর্য্যেরই নামান্তর। সেই স্থধ্য রাত্রিকে জীর্ণ অর্থাৎ ক্ষয় করেন বলিয়া তাহার এক নাম অহল্যাজার । পূৰ্ব্বকালে মাংস দিয়া শ্রাদ্ধ হইত। কলিকালে পলপৈত্রিক অথবা মাংসাশ্রাদ্ধ নিষিদ্ধ, এই জন্য বাঙ্গল দেশে মাংসের বিকল্প করিয়া কলা পোড়াইয়া দেওয়া হয় । সুতরাং তোমার গুষ্ঠির শ্রাদ্ধ করছি, তোমার পিণ্ডি চটকাচ্ছি প্রভৃতি গালাগালি যে পৰ্য্যায়ের, কলা পোড়া খাও গালাগালিও সেই পধ্যায়ের । বাঙ্গালীর অনেকেই এই শেষ গালাগালিটার ব্যুৎপত্তি জানেন না। সংস্কৃতের যে কত শব্দের অর্থ বিশ্বত হওয়ায় সেঙ্গগুলির নূতন এবং অসম্ভব ব্যুৎপত্তি করা হইয়াছে তাহার ইয়ত্ত নাই । এ প্রবন্ধে আর অধিক দুষ্টান্ত দিবার স্থান নাই, এই জন্য আমি ভাষা-বিষয়ে আর একটি মাত্র কথা বলিয়। এই প্রবন্ধের উপসংহার করিব । কয়েক বৎসর হইতে মধ্যে মধ্যে শুনা যাইতেছে যে আমাদের বাঙ্গলা ভাষা ত্যাগ করিয়া হিন্দী ভাষা অবলম্বন করা উচিত, এমন কি অন্ততঃ রাজনীতিবিষয়ক আলোচনার জন্য সমস্ত ভারতে ইংরেজীর পরিবর্তে একমাত্র হিন্দী ভাষার প্রচলন হওয়া উচিত। এইরুপ চেষ্ট কংগ্রেস হইতে ইতিমধ্যেই আরম্ভ হইয়াছে । এই চেষ্টাটা কেবল যে কখনও সফল হইবার সম্ভাবনা নাই এমন নহে, এইরূপ চেষ্ট হওয়া উচিত বলিয়াও আমি মনে করি না । ইচ্ছায় হউক বা অনিচ্ছায় হউক আমরা সকলেই ইংরেজী শিক্ষা করিয়া থাকি। ইহা যে কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য করি তাহী নহে, জ্ঞান শিক্ষার জন্যও করি । কেননা ইংরেজী সাহিত্য ভারতের যেকোন ভাষার সাহিত্য অপেক্ষ সৰ্ব্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠ । ইহা সমুদ্রসদৃশ বিশাল এবং গভীর। ইংরেজী ত্যাগ করিলে আমাদের জ্ঞানলাভের পথ রুদ্ধ হইয়া আমাদের সর্বনাশ হইবে। আমাদের উভয় কূলই নষ্ট হইবে। ষো ধ্রুবানি পরিত্যজ্য অধ্রুবানি নিষেবতে ইত্যাদি শ্লোকটা সকলেই জানেন। কেবল ভাষাবিষয়ক উৎকৰ্ষ অপকর্ষের কথাই ধরা যাউক । হিন্দীতে বাঙ্গলা ভাষা অপেক্ষ বিভক্তির সংখ্যা অনেক,অল্প, এই জন্য বাঙ্গল অপেক্ষ হিন্দীর প্রাধান্ত
পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯১
অবয়ব