পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৯৬ উপর দিয়া মানুষগুলি যেমন স্থাটিয়া যাইতেছে, তাহাকেও অমনি যাইতে হইবে নাকি ? বাপ রে, ঐ কাদার ভিতর যদি সে পড়িয়া যায় ? কিন্তু হাটিয় তাহাকে যাইতে হইল না। হুম্ হুম করিতে করিতে একখানি পালকী আসিয়া হাজির হইল। মালতী ও বর তাহাতে চড়িয়া বসিল, আর সকলে হঁটিয়া চলিল । কয়েক মিনিটের মধ্যই তাহারা বাডী আসিয়া পৌছিল। বাড়ীতে গৃহিণী কেহ নাই, তবে শুভকৰ্ম্ম নিয়ম মত সম্পন্ন করিতে লোকের অভাব হইল না। পাড়-পড়শী সকলে আসিয়া জুটিল, রীতিমত বরণ করিয়া বউ ঘরে তোলা হইল। বুড়ে জ্যাঠা মহাশয় এক জোড়া মকরমুখো বালা দিয়া মালতীর মুখ দেখিলেন । দেখিতে দেখিতে সন্ধ্যা হইয়া আসিল । এখানে ত বিজুলীর বাতি নাই, মিটমিটে হারিকেন লন্ঠনে যতদূর আঁধার দূর হয় ততটাই হইল। মালতীর মনের ভিতরটাও কাল হইয়া আসিতে লাগিল। খড়ের চাল, মাটির দেওয়াল, ইহার ভিতর মানুষ থাকে কি করিয়া ? তবু ভাল যে উঠানে দরমার বেড়া দিয় ঘিরিয়া নূতন বউয়ের জন্য একটা স্বানের ঘর হইয়াছে। বরের যে এতটুকু বিবেচনা আছে তাহাতে মালতীর মন একটু কৃতজ্ঞ না হইয়া থাকিতে পারিল না। পাড়াপড়শী ক্রমে চলিয়া যাইতে আরম্ভ করিল, খালি রহিয়া গেলেন একজন বুদ্ধ। ইনি বর স্বরেন্দ্রের দূর সম্পর্কের মাসাম, বউকে একটু দেখাইয়া শুনাইয়া গৃহিণীপদে অধিষ্ঠিত করিয়া দিয়া তবে যাইবেন । আজ রাতটা ইহারই সঙ্গে শুষ্টয়া মালতীর কাটিয়া গেল। দুই-তিন দিনের গোলমালে সে ক্লান্ত হইয়াছিল যথেষ্টই, কাজেই নূতন ঘরে শোওয়া সত্ত্বেও সে ঘুমাইয়ু পড়িল । পরদিন সাদাসিধা ভাবে একটা বৌভাতও হইয়া গেল। মালতীকে পরিবেশন করিতে হইল, তা সে ভাল ভাবেই করিল। কলিকাতায় থাকিয় এত বড় হইয়াছে বলিয়া কি সে কাজ জানে না ? কাজ যথেষ্টই তাহাকে করিতে হইয়াছে। বৌভাতে উপহার পাইল সে খানকতক তাতের শাড়ী, কাঠের লাল সি দুর-কেীট এবং গোট কতক টাকা । তাহার সঙ্গিনীদের কাছে যে কত রকম গল্প শুনিয়াছিল, তাহার সঙ্গে কিছুই মিলিল না। SN988 রাত্রে ফুলশয্যা। এইবার বরের সঙ্গে খানিক আলাপপরিচয় হইল। মালতী মনে করিয়াছিল খুব শক্ত হইয়৷ থাকিবে, এই পাড়াগেয়ে লোকটার কাছে একেবারেই ধরা দিবে না। কিন্তু হঠাৎ দেখিল মানুষটার মিষ্ট কথাবার্তায় আর আদরে তাহার মন যথেষ্টই নরম হইয়া আসিয়াছে, বেশ ভাল ভাবেই সে ববের সঙ্গে কথা বলিতেছে । সুরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা লক্, পাড়াগায়ে থাকতে তোমার খুব কষ্ট হবে না ? জন্মে কখনও ত শহর ছেড়ে নড় নি ?” মালতী বিজ্ঞভাবে বলিল, “কষ্ট হ'লেহ আর কি করছি বল ? নিজের ঘর ত আর ফেলে দেওয়া ধায় ন! ? আচ্ছ, তুমি আমার ডাকনাম জানলে কি ক’রে ?” r সুরেন্দ্র বলিল, “কেন জানব না ? আমার কি কান নেই ? বাসরে সবাহ লতি লতি ক’রে কথা বলছিল না ?” মালতী বলিল, “ও তাই ।” কথাবাৰ্ত্ত সে-রাত্রে আর খুব বেশ অগ্রসর হইল না । সকালে তাহদের যেমন সময় উঠা অভ্যাস তাহার ঢের আগে সুরেন্দ্র তাহাকে জাগাইয়া দিল । বলিল, “গায়ের মানুষ খুব ভোরে ওঠে, বিশেষ ক'রে মেয়েরা। মাসীমা পাশের ঘরে খুটু খুটু করছেন, শুন্‌ছ না ? তোমার আর শুয়ে থাকলে ভাল দেখাবে না।” তা মালতীর ভোরে উঠতে ভালই লাগে, সে উঠয়। পড়িল। মসীমা অবশ্ব সেইদিনই তাহাকে কাজের ঘাণিতে জুতিয়া দিলেন না। বলিলেন, “এর পর সবই ত করতে হবে তোমায় মা, তবে দুচার দিন যাকু।” কাজ না করিলেও সারাদিনের ভিতর মালতীর সঙ্গে আর স্বরেন্দ্রের দেখা হইল না। মালতীকে পাড়ার যত বোঝি আসিয়া ছাকিয়া ধরিল । তাহদের পাল্লায় পড়িয়া মালতীকে পুকুরে স্নান স্বদ্ধ করিয়া আসিতে হইল। ভয়ে তাহার হাত পা ঠকৃঠক করিয়া কঁাপিতেছিল, এই বুঝি একেবারে ডুবিয়া মরে । কিন্তু প্রাণে বঁচিয়াই সে ফিরিয়া আসিল, অবশ্য দুই-এক ঢোক জল যে না থাইল তাহা নয়। নানাদিকে অসুবিধা যে তাহার যথেষ্টই হইবে তাহা সে বুঝিতে পারিল। কিন্তু সহ করা ছাড়া উপায় কি ? সে ত আর বড়মানুষের মেয়ে