পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণষণচ - অলখ-ঝেণরণ 8$'s লাগে, আর সকলের তা ন লাগতে পারে। অবশ্ব, আমি যে সকলের মন জানি না সেটাও ঠিক কথা ।” মিলি বলিল, “গানই ধে করতে হবে এমন কথা আমি বলি নি। ইচ্ছে করলে স্নেকুল এণ্ড ল্যাডাস কিম্বা আগডুমবাগডুম খেলতেও পারেন । আমি কেবল কাজ বন্ধ করতে চেয়েছিলাম। সেইটুকু মাত্র আমার উদ্দেশ্য ।” মহেন্দ্র আর কিছু বলিল না । তাহার মনের ভিতর মস্ত একটা তোলপাড় চলিতেছিল । বহুদিন ধরিয়া এই যে প্রিয় চিন্তাটিকে ধীরে ধীরে সে পরিণতির দিকে আনিতেছিল, তাহ যে এমন একটা বাধার গায়ে আসিয়া ঘ খাইবে ইহা সে আশা করে নাই । তাহার বলিবার ভাষা মোলায়েম লয়, ধরণধারণ সুকোমল নয়, কিন্তু মনে যে তাহার প্রচণ্ড একটা বড় উঠিয়াছে ইহা নিশ্চয়ই সে হৈমষ্ঠীকে বুঝাইতে পারিয়াছে। ভালবাসার এতখানি আবেগকে মেয়ের অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করিতে পারে না বলিয়াই মহেন্দুর বিশ্বাস, যদি না ইতিমধ্যে তাহার মনে আর কেহ আসন পাতিয়া বসিয়া থাকে । তা ছাড়া, উনিশ-কুড়ি বংসরের মেয়ের মন একেবারে শূন্য, বালিকার খেলার খেয়ালে সে দিন কাটাইতেছে, হগও মহেন্দ্র বিশ্বাস করে না। হুৈমন্তী কেন বলিল, তাহার সময় আসে নাই ? যে এসব কথা এমন গুছাইয়া বলিতে পারে তাহার মনে এ-চিস্তা নিশ্চয়ই প্রবেশ করিয়াছে। নিশ্চয় সে আর কাহারও দিকে মনের মোড় ফিরাইতেছে । সেই ত্রয়োদশী বালিক হৈমন্তীকে মহেন্দ্র যখন প্রথমে দেখে তখন ত ইহার কেহ তাহার ধারেকাছে ছিল না । তাহার এতদিনের পরিচয় এতকালের প্রভাবকে অনায়াসে ডিঙাইয়া গেল কে, জানিবার জন্য মহেন্দ্রের মন ছটফট করিতে লাগিল । সভ্য সমাজে সৰ্ব্বত্রই সভ্য হইয়া চলিতে হয়, ন হইলে তাহার মাথাটা সে একবার অন্তত দেয়ালে কিয়া দিয়া কিছু আনন্দ সংগ্ৰহ করিত। মুর্থ মাহুষগুলার ভিতর ত সব মরুভূমি, কিন্তু বাহিরে মমতার নিঝর ছুটাইয়া অনভিজ্ঞ মেয়েগুলিকে হাত করিয়া লইতে তাহাদের পাণ্ডিত্যের অভাব দেখা যায় না ! সত্যকার যোগ্যতা অর্জন করিবার দিকে মন না দিয়া মহেন্দ্রও যদি এই ভূয়া পালিশের দিকে মন দিত তাহা হইলে হয়ত তাহাকে আজ এমন করিয়া প্রত্যাখ্যাত হইতে হইত না । সংস্কৃত সাহিত্যে তাহার বয়সে এতখানি অধিকার আজকালকার কোন ছেলের নাচ, ইংরেজী সাহিত্যের খোজই বা তাহার সমান কে রাথে ? কিন্তু বিধাতা তাহার কথার সঙ্গে সঙ্গে কণ্ঠটাও করিয়াছেন কর্কশ, পথে ঘাটে সরু ওয়ান্টার র্যালির মত গায়ের জমি খুলিয়া প্রেয়সীর পদতলে পাতিয়া দিবার বিদ্যাও সে আয়ত্ত করে নাঙ্গ, এই সব অপরাধেই হয়ত তাহাকে অধোগ্যতার শাস্তি মাথায় বহিয়া ফিরিতে হস্তবে । ( २७ ) বেলতলার দিকে প্রকাণ্ড একট ময়দানওয়াল বাড়ী । বহুকাল পূৰ্ব্বে তপনের পিতামহ তাহারই কোন মক্কেলের নিকট ইষ্টতে মাটির দরে এই জমিট কিনিয়াছিলেন । বাড়ীর অৰ্দ্ধেকট তিনিই করিয়াছিলেন, বাকি অৰ্দ্ধেকট তপনের পিতা । তপনের পিতার বাগানের সখ ছিল বলিয়৷ বাড়ীটার দিকে খুব বেশী ঝোক তিনি দেন নাই, জমি বেচিয়া লক্ষপতি হইবার চেষ্টfও করেন নাই । তাহার সথ ছিল বড় বড় গাছের ; কৃষ্ণচুড়, সোনাল, বিলাতী নিম, বকুল, কাঠচাপ, কনকচাপ। ইত্যাদি সব রকম বড় ফুলের গাছ পথের দুই ধারে তিনি লাগাইয়াছিলেন । আম, কাঠাল, দেবদারু, ইউকালিপটসের অভাবও সেখানে ছিল না। বাড়ীটার বেশীর ভাগ একতলা, দাতলায় খান তিনেক মাত্র ধর । একদিকে চওড়া ঢাকা বারাগু, অন্যদিকে মস্ত চৌকা গাড়ীবারাণ্ডার ছাদ লোহার রেলিং দিয়া ঘেরা। দক্ষিণের এই গাড়ীবারান্দার দিকে মুখ করিয়ু তপনের ঘর। ঘরে খাট নাই, পুরু গদির উপর পাতা বিছানা মস্ত একটা সুচিত্রিত কথা দিয়া ঢাকা, আর একদিকে হাত খানিক উচু একটা টেবিলের সামনে বড় একটা পিড়ির উপর সালুর তৈরি ঐ মাপের ছোট একটি তোষক। পাশে একটা কাচীন বই রাখিবার তাক, দেখিলেই বোঝা যায় বইগুলি সৰ্ব্বদা নাড়াচাড়া হয় । সংস্কৃত ও বাংল রামায়ণ মহাভারত ছাড়া রবীন্দ্রনাথের সমস্ত কাব্যগ্রন্থ ও গানের বই তাহাতে সাজানো । টলষ্টয়, মহাত্মা গান্ধী, শ্ৰীঅরবিন্দ প্রভৃতির দুই-চারিখানা করিয়া বই তাহাতে আছে আর আছে গীতা ও উপনিষদ । নীচের