পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوي86 প্রবাসী ১৩৪৪ বঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন হইতেছে, তাহার মূলে সমাজতন্ত্রবাদী ও সাম্যবাদীদের চেষ্টা থাকিতে পারে ; কিন্তু সাম্প্রদায়িকতাও আছে। কারণ, বঙ্গে অধিকাংশ জমীদার হিন্দু, অধিকাংশ কৃষক ও রায়ত মুসলমান। বঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন হইতেছে, কিন্তু পঞ্চাবে খাজনার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যাহাতে হয়, তাহার চেষ্ট হইতেছে। তাহার একটা কারণ বোধ হয় এই, যে, বঙ্গে জমাদাররা (অধিকাংশ স্থলে হিন্দু) খাজনা আদায় করে, পঞ্চাবে গবন্মেণী খাজনা আদায় করে ও মধ্যে মধ্যে বাড়ায় । বৃত্তিগত শ্রেণীবিভাগ ও ধৰ্ম্মমূলক সম্প্রদায়ভেদ ধৰ্ম্মের এই একটা নিন্দ সমাজতন্ত্রবাদী ও সাম্যবাদীরা করিয়া থাকে, যে, ভিন্ন ভিন্ন ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের মধ্যে ঝগড়বিবাদ খুনখুনি দাঙ্গা যুদ্ধ প্রভৃতি বহু দেশে হইয়াছে ও হয়। তাহারা বলে, যে, মানুষ যদি বৃত্তি অনুসারে, আয়ের উপায় অনুসারে, শ্রেণী ও দল বাধে, তাহা হইলে এক এক শ্রেণী ও দলে নানা ধৰ্ম্মের লোক থাকিবে, সুতরাং তাহাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থাকিবে না। ইহা হইতে পারে না বলিতেছি না। কোন কোন স্থলে ইহা হইয়াছে । কিন্তু স্থলবিশেষে আবার ভিন্ন ভিন্ন ধৰ্ম্মের কৃষকের বা কারখানার মিলের মজুরেরা বা অন্য বৃত্তির লোকেরা কি আলাদা আলাদা দল বাধে নাই ? সাম্প্রদায়িকতার আগুনে শ্রেণীগত বিদ্বেষ ইন্ধন জোগাইয়াছে, বা শ্রেণীগত বিদ্বেষের আগুনে সাম্প্রদায়িকতা ঘি ঢালিয়াছে, ইহার দৃষ্টাস্ত ভারতবর্ষে বিরল নহে। মহাজন ও খাতক আলাদা আলাদা শ্রেণী। পঞ্জাবে ও বঙ্গে অনেক স্থলেই মহাজম হিন্দু এবং ঋণী কৃষক মুসলমান। মহাজন ও থাতকে উভয় প্রদেশে যে অসদ্ভাব, তাহার মধ্যে শ্রেণীগত বিদ্বেষ এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দুই-ই থাকায় বিরোধের ভীষণতা বৃদ্ধি পায়। পঞ্চাবে মহাজন খুন অনেক হয়। বঙ্গে মধ্যে মধ্যে যাহা হইয়া থাকে, তাহা বাঙালীর অবিদিত নহে। বৃত্তিগত শ্রেণীবিভাগ যে ধৰ্ম্মমূলক সম্প্রদায়ভেদ অপেক্ষা পৃথিবীতে শাস্তিস্থাপনের প্রকৃষ্টতর উপায়, ইতিহাস ত এরূপ বলিতেছে না। ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লব এরূপ সাক্ষ্য দেয় না। রুশিয়ার অভিজাত ও ধনিকদের বিরুদ্ধে সাধারণ লোকদের কৃষকদের ও মজুরদের যুদ্ধের চেয়ে কোন ধৰ্ম্মমতভেদমূলক যুদ্ধ কোথাও ব্যাপকতর ও নিদারুণতর হইয়াছিল বলিয়৷ অবগত নহি । রুশিয়ায় এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীকে একেবারে নিমূল বা নির্বাসিত করিয়াছে। স্পেনে দুই শ্রেণীতে অতি নিষ্ঠুর যুদ্ধ চলিতেছে। জামেনীতে, ইটালীতে নিষ্ঠুর উপায়ে এক শ্রেণী অন্য এক শ্রেণীর উপর প্রাধান্য স্থাপন করিয়াছে । কিন্তু যাহারা এখন প্রভু তাহারা আগ্নেয়গিরির উপর আসন পাতিয়া বসিয়া নাই, কে বলিতে পারে ? শ্রেণীতে শ্রেণীতে বিরোধ শাস্তির দিক দিয়া সাম্প্রদায়িক বিরোধের চেয়ে বিন্দুমাত্রও ভাল নহে। ভারতবর্ষে যাহারা জমীদারে কৃষকে ধfনকে শ্রমিকে বিরোধে কোনও পক্ষ অবলম্বন করেন, তাঙ্গদের উদ্দেশ্ব সম্বন্ধে আমরা কিছু বলিতে চাই ন! ; কারণ উদ্বেগুটি কি নিশ্চিত জানা কঠিন, অতুমান করা সহজ । তাহ! ভাল হইতে পারে। কিন্তু এ কথা আমরা নি:সংশয়ে বলিতে পারি, যে, এই বিরোধ হওয়াতে দেশে শাস্তি স্থাপিত হইয়াছে বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিরোধ একটুও কমিয়াছে, ইহা মনে করিলে বা বলিলে ভ্রম হইবে। ধৰ্ম্মমতঘটিত বিরোধ এখনও পৃথিবীতে আছে। কিন্তু ইহা বোধ হয় সত্য, যে, সেরূপ বিরোধের উগ্ৰত কমিয়াছে । এখন কোন ধৰ্ম্মের লোকসমষ্টিই অন্য ধৰ্ম্মের লোকসমষ্টিকে পুড়াইয়া বা অন্য প্রকারে মারিয়া ফেলা উচিত বা আবশ্বক মনে করে না। অতীত কালে ইউরোপের খ্ৰীষ্টিয়ানেরা যেমন প্যালেষ্টাইনে ক্রুজেড নামক ধৰ্ম্মযুদ্ধ করিয়াছিল, তাহা বহু শতাব্দী হয় নাই, ভবিষ্যতে আর কখনও হইবে বলিয়া মনে হয় না। মুসলমানদের দ্বারা জেহাদ বস্তুতঃ যাহা হইয়াছে তাহা অতীত যুগের কথা। এখন জেহাদের কথা কেহ কেহ বলিলেও কোনও মুসলমানপ্রধান স্বাধীন দেশের গবন্মেণ্ট যে ভবিষ্যতে জেহাদ করিবে তাহার সম্ভাবন কম । কিন্তু আর্থিক যে শ্রেণীবিভাগ, ধন-উৎপাদক ও ধন-ভোক্তার মধ্যে যে ভেদ, শ্রমিক ও ধনিকের মধ্যে যে ভেদ, কৃষক ও ভূম্যধিকারীর মধ্যে যে ভেদ,