পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১ e প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৪৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড বাবা।” প্রহারের বহর ত’ সে নিজেই যাচাই করিয়া দেখিয়াছে এবং আমার স্বপুষ্ট শরীরটা সৌন্দর্য্যের দিক্‌ হইতে ন হইলেণ্ড সেদিক হইতে দেখিলে নেহাৎ তাচ্ছিল্য করিবার ছিল না। কিন্তু এই ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’ নীতিতে বাগ মানিল না যে ছেলেটি সেটি নারাণ মিত্র। পাত লা ছিপ-ছিপে চেহারা, রংটা উজ্জল না হ’লেও শু্যাম বর্ণ। বড় বড় চোখদুটি বুদ্ধিতে চঞ্চল এবং মুখে সব সময়ই দুষ্টামির হাসি। ৩য় শ্রেণীতে তখন সে পড়ে। বয়স তার মোটে তের, কিন্তু পাকামিতে ছিল একেবারে প্রবীণ । দুষ্টামির ধারা তার ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। নিদ্রালস পণ্ডিতের বিনাঅনুমতিতে শিখাচ্ছেদ বা পাদুক অপহরণ, শিক্ষকের সহিত বাকুযুদ্ধ বা অনর্থক অবাধ্যত, প্রভৃতি শাস্তিভঙ্গের সাধারণ উপদ্রবগুলিকে সে নিতান্ত সেকেলে ইতরামি বলিয়া মনে করিত এবং যাহারা ঐ পথ অবলম্বন করিত তাহাদিগকে অবজ্ঞার চক্ষে দেখিত। ছাত্রদের অদ্ভুত নামকরণ তাহারই কল্পনা-প্রস্থত এবং সকল শিক্ষকেরই শারীরিক বা অন্য ক্রটি অবলম্বনে সে একটি ছড়া রচনা করিয়াছিল। মধ্যে মধ্যে সে তাহার আধুনিক ভদ্ররসিকভায় সহপাঠীদিগকে মোহিত ও শিক্ষকবৃন্দকে সন্ত্রস্ত করিয়া তুলিত । শুনিয়াছিলাম একবার পণ্ডিত মহাশয় অধ্যাপনাকালে শেষের ঘণ্টায় নিদ্রিত হইয়া পড়িলে সকল ছাত্রকে কক্ষ হইতে বাহির করিয়া দিয়া এবং সস্তপণে সকল দ্বার ও জানালা রুদ্ধ করিয়া বাহির হইতে শিকল তুলিয়া সে চলিয়া যায়। বিদ্যালয়ের ছুটির কোলাহলেও তাহার নিদ্রাভঙ্গ ঘটে নাই, এমনই সযত্নে দ্বার-সমূহ রুদ্ধ হইয়াছিল। সেই নির্জন গৃহে প্রান্তদেহে পরম শাস্তিতে মুখনিদ্রায় তিনি শ্রীস্তিদূর করিতেছিলেন। সদ্ধার প্রাক্কালে নিদ্রাভঙ্গে তিনি সেই অন্ধকারে গৃহের দ্বারঅন্বেষণে টেবিল, বেঞ্চ প্রভৃতিতে যথেষ্ট বাধা ও আঘাত প্রাপ্ত হইয়া তারস্বরে সাহায্য প্রার্থনা করিতে থাকেন। তাহার ভয়-কম্পিত আৰ্ত্তস্বরে আকৃষ্ট হইয়া মালী আসিয়া পড়াতে ব্রাহ্মণ শীঘ্রই উদ্ধার পান। পরদিবস বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযুক্ত হইলে নারাণ মিত্র সমস্তই স্বীকার করিয়া বলে, সে কোনও অসম্ভিপ্রায়ে ঐকুপ করে নাই, সমস্ত দিন দারুণ পরিশ্রমের পর পণ্ডিত মহাশয়ের নিদ্ৰাকর্ষণ হইলে তাহার অবাধ স্বনিদ্রার জন্যই সে ঐ প্রকার স্নব্যবস্থা করিয়াছে, সুতরাং ইহাতে দোষ কিছু হইতে পারে বলিয়া সে মনে করে নাই। যাহা হউক প্রধান শিক্ষক তাহাকে বলিয়া দিলেন অধ্যাপন কালে নিদ্রিত হইয়া পড়িলে নিদ্রাভঙ্গই বিধেয় এবং ওরূপ আচরণ আর যেন কখনও সে না করে । কয়েক মাস পরে পণ্ডিত মহাশয়ের আর একদিন নিদ্রার উদ্রেক হইলে সে সকল ছাত্রদের বলিল, “তোর সব চুপ কর” । ক্ষণকাল পরে পণ্ডিত মহাশয়ের নিদ্র। একটু গভীর হইলে তাহাকে জাগরিত করিবার অছিলায় সে এত জোরে নাড়া দিতে লাগিল যে নিদ্রাভঙ্গ তাহারত হইলই, উপরি যথেষ্ট সন্দেহ হইল যে, শরীরের আরও কিছু ভঙ্গ, হইয়াছে। এই নিদ্রাভঙ্গের ফলে তিনি তিন দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হইতে পারেন নাই এবং তঁহার নিদ্রা আর তিন রাত্রি জোড়া লাগে নাই। প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের ভংসনীয় সে বলে, “আজে আপনিষ্টত ঘুম ভাঙ্গাত বলেছিলেন ; একটু অসাবধান হ’য়ে পড়েছিলাম তাই লগে গেছে মাপ করবেন ।” আর একবার শুনিয়াছিলাম কোনও এক শিক্ষককে জত্ব করিবার অদ্ভুত ফৰ্মী। তামাকু সেবন তার একটু বেশী প্রিয় ছিল বলিয়া প্রতি ঘণ্টার শেবে তিনি ধূমপান করিতেন এবং তৎসংক্রাস্ত আয়োজনের নিমিত্ত মালীর ম’সিক সন্তোষ বিধান তাহীক করিতে হইত। তার ঘণ্ট{য় নারাণ মিত্র সেদিন জ্বল থাইতে বাহিরে আসিয়। মালীখে সশব্যস্তে বলিল, “সার তামাক চাচ্চেন শীগগির সেজে নিয়ে যু, আমাদের ক্লাশে আছেন।” পরে মালীকে তামাক ইয়। ক্লাশের মধ্যে প্রবেশ করিতে দেখিয়া, সটান প্রধান শিক্ষকের নিকট গিয়া বলিল, “আমাদের ক্লাশে ছাত দিয়ে বড় জল পড়ছে, সার আপনি একবার চলুন।" তারপর সে নিজের জায়গায় গিয়া শাস্ত ছেলের মত বসিল । শিক্ষক ত তখন মালীকে বকিতেছেন। সে বেচারী থভমত হইয়া বলিতেছে,"আপনি ত মোটে এইমাত্র তামাক চাইলেন।” এই বলিয়া হাত বাড়াইয়া যেই সে ছ কাটি দিতে যাইবে অমনি প্রধান শিক্ষক মহাশয় প্রবেশ