পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা } গোতমের ধৰ্ম্মে আত্মার স্থান లిe . দেহাদি অাছে ইহা অপরেও স্বীকার করিত, গোতমও স্বীকার করিতেন। পার্থক্য এই—অপরে বলিত, দেহাদি আত্মা ; গোতম বলিতেন, দেহাদি আত্মা নহে। "দেহ আমার আত্মা’—ইহার অর্থ এই যে, দেহই আমার বিশেষত্ব, দেহই আমার স্বরূপ, দেহ না থাকিলে আমি থাকিব না। বেদন বিজ্ঞানাদি অামার আত্মা ইহার অর্থ এই সমুদায়ই আমার বিশেষত্ব, আমার স্বরূপ ; এ সমুদায় না থাকিলে আমি থাকিব না । অপরে দেহবিজ্ঞানাদিকে পুরুষের বিশেষত্ব এবং স্বরূপ বলিয়া মনে করিত, কিন্তু গোতম তাহা মনে করিতেন না। সাধারণ মতের সহিত গোতমের মতের পার্থক্য এই স্থলে । আত্মা নিত্য কোন কোন পণ্ডিত বলিতেছেন যে, উদ্ধৃত অংশে গোতম আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করিয়tছন । এ কথ। যে কোথায় আছে, আমরা তাহ খুজিয়া পাইলাম না। আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করা দূরে থাকুক, গোতম এস্থলে আত্মার নিত্যত্ব, অবিকারিত্ব ও মুখময়ত্বই ঘোষণা করিয়াছেন। আলোচনা করিয়া দেখা যাউক । উদ্ধৃত স্থলে আমরা তিনটি অংশকে (ক), (খ), (গ), দ্বারা চিহ্নিত করিয়াছি। দেহ বেদনাদি কেন আত্মা নহে—এ সমুদায়স্থলে তাহারই যুক্তি দেওয়া হইয়াছে। এই তিনটি যুক্তি নিম্নে সরল ভাষায় ব্যক্ত হইল । (ক) যাহা ব্যাধিগ্রস্ত হইতে পারে তাহা আত্মা নহে । (খ) যাহার উপরে আমার পূর্ণ বস্তৃত্ব নাই, তাহা আমার আত্মা নহে । (গ) যাহা অনিত্য, দুঃখময় এবং পরিবর্তনশীল তাহা আত্মা নহে । গৌতম ধখন বলিলেন, ব্যাধিগ্রস্ত বস্তু আত্মা হইতে পারে না, তখনই বুঝিতে হইবে যে, আত্মা ব্যাধির অতীত। যখন বলা হইল যাহার উপরে আমার কত্বৰ নাই, তাহা আমার আত্মা নহে, তখনই বুঝিতে হইবে আমার আত্মা আমার সম্পূর্ণ অধীন। আর যখন বলা হইল অনিত্য, দুঃখময়, এবং পরিবর্তনশীল বস্ত আত্মা নহে, তখনই সিদ্ধাস্ত করিতে হইবে ধে, আত্মা নিত্য, সুখময় এবং অবিকারী । গৌতম যাহা বলিয়াছেন, তাহা হইতে অন্ত প্রকার সিদ্ধাস্ত করিবার উপায় নাই। গোতম আত্মা স্বীকার করিতেন এবং এই আত্মা স্বাধীন, নিত্য, নিৰ্ব্বিকার এবং সুখ স্বরূপ । অপর দিক হইতে বিচার করা যাউক । কল্পনা কর এক ব্যক্তি গৌতমকে এইপ্রকার প্রশ্ন করিল :– “ভগবন্‌! এই সংসারে যদি এমন একটি বস্তু পাওয়া যায় যাহা ব্যাধির অতীত, যাহার উপর আমার পূর্ণ কর্তৃত্ব, যাহা নিত্য, মুখময় এবং অধিকারী—সেই বস্তুকে কি আমি আমার আত্ম। বলিতে পারি ?” গোভম নিশ্চয়ই বলিবেন, “ইহা নিশ্চয়ই তোমার আত্ম ।” কিন্তু আমরা বাস করিতেছি সংসারে ; সংসারে যাহা কিছু আছে, সে সমুদ্রায়ই অনিত্য এবং বিকারী। সুতরাং গৌতমকে কেহই ঐ নিত্য বস্তু দেখাইয়া দিতে পারিত না । অনিত্য সংসারে নিত্য বস্তু দেখান যায় না ; ইহাতেই কি বলিতে হইবে নিত্য বস্তুই নাই ? সাহারাতে শ্বেত ভল্লুক নাই, ইহাতেই কি সিদ্ধান্ত করিতে হইবে শ্বেত ভল্লুক বলিয়া কোন প্রাণীই নাই ? সাহারাতে শ্বেত ভল্লুক না থাকিতে পারে কিন্তু অন্যত্র আছে। এইরূপ অনিত্য সংসারে নিত্য বস্তু দৃষ্ট না হইতে পারে। কিন্তু নিত্য জগতে নিত্য বস্তু থাকিতে পারে । গোতম কখন বলেন নাই যে, নিত্য জগৎ নাই বা নিত্য জগতে ঐ প্রকার নিত্য আত্মা নাই । যখনই তাহার নিকট আত্মার বিষয় প্রশ্ন উঠিত, তখন দেহাদিকে লভ্য .করিয়াই ঐ প্রশ্ন উঠিত, এবং গোতম দেহাদি বস্তকে লক্ষ্য করিয়াই আত্মতত্ত্ব ও অনাত্মতত্ত্বে ব্যাখ্যা করিতেন। তিনি পুনঃ পুনঃ বলিয়াছেন যে, দেহাদি আত্মা নহে এবং কোন কোন স্থলে এপ্রকারও বলিয়াছেন যে, এই বাহ জগৎও আমার আত্মা