পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] প্রমদারঞ্জন খাট ছাড়িয়া একখানা বড় ইজি-চেয়ারে বসিয়াছিলেন । ডাক্তার ও নায়েব তাহার দুই পাশে বসিয়াছিলেন, এবং উদয় ছিল কপাট ধরিয়া দাড়াইয়া । জ্যাঠা মহাশয়ের সাম্নে বসিবার সাহস তাহার কোনো কালেই হইভ না, প্রয়োজন দেখিলেই যেন দৌড় মারা চলে, এমন ভঙ্গী করিয়া সে সৰ্ব্বদা দাড়াইয়া থাকিত । ভবানী আসিয়া দরজার কাছে দাড়াইল । হাতের ইলারায় তাহাকে ভিতরে ঢুকিতে বলিয়া উদয় আkে একটু সরিয়া গেল। প্রমদারঞ্জন একখানা খেলা চিঠি হাতে করিয়া ছিলেন, সেই বিষয়েই বোধ হয় ডাক্তার এবং নায়েবের সঙ্গে তাহার কোনো পরামর্শ হইতেছিল । ভবানীকে দেখিয়া ডাক্তার বলিলেন, “এই যে ভবানী ! বৌমার শরীর আজ কেমন ?” ভবানী মৃদু গলায় বলিল, "অল্পে অল্পে সামূলে উঠছে, বাবু। কাল রাত্রে বেশ ঘুমিয়েছে। এ ক'দিন ত চোখেপাতায় এক করেনি ।” প্রমদারঞ্জন চিঠি হইতে চোখ তুলিয়া বলিসেন, “বেীমার বাষ কলকাতায় এসেছেন। তিনি মেয়েকে নিয়ে যেতে চান। বেীমার কি মত জানা দরকার । এখানে থাকৃতে চান, যেমন আদরে চিরদিন ছিলেন তাই থাকুবেন, বাপের কাছে থাকৃতে চান আমি কোনো আপত্তি করব না। তার শরীর বদি বেশী থারাপ না “থাকে, তাকে একবার জিগগেস ক’রে এসে । আমার চিঠির জবাব পেলেই বেয়াই মশায় ওখান থেকে বেরিয়ে ‘পড়বেন ।” ভাক্তার-বাবু যলিলেন, “কিন্তু একেবারে পাঠিয়ে দেওয়া আমি ঠিক মনে করি না । ছেলের অবর্তমানে এখন তাবই ছেলের সষ কাজ করতে হবে । কৰ্ত্তব্য ব’লে ত একটা জিনিষ আছে । আপনাকে দেখা-শোনাই "ঠার জীবনের অবলম্বন হওয়া উচিত এখন ।” জমিদারবাবু বলিলেন, “ওকথা আর বোলোনা, ভায়া । আমি কবে আছি কবে নেই। আমার ভাবনা ভাষতে ভগবান আছেন । ওর অল্প বয়েস, এমন ভয়ানক আধাতট। পেল, এখন যা নিয়ে মনকে ভোলাতে পারে, তাকে তাই দেওয়া উচিত। বাপের বাড়ী থাকা আর এখানে থাকা পরভৃতিক - vව්ථි এখন ওর একই কথা। ওখানে থাকৃলেও টাকাকড়ির কোনে অভাব তার হবে না , জ্ঞানদার জন্তে ধে মালহার বর\দ ছিল, তা বেীমাই পাবেন আজীবন ।” নায়েব মশায় এই জমিদারীতে কাজ করিয়া মাথার চুল পাকাইয়াছিলেন ; স্বত্তরাং তিনি মাঝে মাঝে একটু মন খুলিয়া কথা বলিবার অধিকার লাভ করিয়াছিলেন । বিধবা ভাতুমতীকে মাসিক দেড় হাজার টাকা দিবার প্রস্তাবে তিনি বলিয়া উঠিলেন, “অত টাকা, ছেলেমানুষ তিনি, তার হাতে দেওয়া কি ঠিক হবে ? বারোভূতে লুটে থাষে শেবে আমাদের দেশে মেয়েছেলের আর খরচ কি বলুন ? বিশেষ ক’রে বিধবা মানুষের ? দেড়শ দু’শ টাকা হ’লেই ভেসে যাবে । দান-ধ্যান করা বই আর তাদের পূরচ কি ?” ভবানীর কাণ ছিল প্রমদারঞ্জনের ও র্তাহার সঙ্গীদের কথার দিকে, কিন্তু চোখ ছিল উদয়ের মুখের উপর। অতগুলি টাকা মাস মাস হাতছাড়া হইবে এই প্রস্তাব শুনিয়াই যেন উদয়ের মুখ গম্ভীর ইয়া উঠিল । যদিও প্রমদারঞ্জন এখনও মরেন নাই এবং উদয়ের মুখের র্কট। ভানুমতীও এখনও বঁ চিয়া,ভৰু সে নিজেকে জমিদার বলিয়া একরকম ধরিয়াই লইয়াছিল । স্বতরাং তাহার টাকা এমন ভাবে অপব্যয় করার প্রস্তাবে তাহার মুখ যে বিকৃত হইয়৷ উঠিবে সে আর বিচিত্র কি ? ভবানী অশিক্ষিতা স্ত্রীলোক হইলেও মানব-চরিত্রে জ্ঞান তাহার অল্প ছিল না। বিশেষ করিয়া উদয় সম্বন্ধে তাহার কখনও ভুল হইত না। উদয়ের মনের কথা সে একরকম অীচ করিয়াই লইল এবং ক্রুর দৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া প্রমদারঞ্জনকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, *দিদিমণি ত যেতেই চাইবেন, কিন্তু এখন তাকে এত নাড়া নাড়ি করা কি ঠিক হবে ? এই গাড়ী থেকে ট্রেন, ট্রেন থেকে ষ্টীমার, এত সব কি সইবে ?” প্রমদারঞ্জন উত্তর দিবার আগেই ডাক্তার বলিলেন, *তাতে বেশী কিছু অনিষ্ট হবে না। শরীর দুৰ্ব্বল, ত৷ ফাই ক্লাশে বাবেন এখন,লোকের ভীড় পোহাতে হবে না।” ভবানী গলা নীচু করিয়া বলিল, “উীর শরীরের কথা বলছি না ডাক্তারবাবু, কিন্তু বংশের দুলাল রয়েছেন তাৱ