পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9३. প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৪ { ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড র্তাহার ঘরের দরজায় করাঘাত করিয়া ডাকাডাকি করিতে লাগিলেন । দরজা বন্ধই রহিল, ভিতর হইতে অশ্রুবিকৃত গাঢ় কণ্ঠে প্রমদারঞ্জন বলিলেন, “ডাক্তার, মৃত্যু যাদের স্বভাবিক, তাদের বাঁচাবার চেষ্টা আর কোরো না । আমরা মরণকে তার স্থায্য পাওলার থেকে বঞ্চিত করি ব’লে সে এমনি ক’রেই আমাদের ওপর শোধ তোলে। আমার ছাববশ বছরের ছেলে আমারই পাপে গেল।” ভানুমতীর সেদিন জ্ঞানই হইল না। ভবানী হৃতশাবক বাস্ত্রীর মত তাহাকে আগ লাইয়া বসিয়া রঙ্গিল, কাহাকেও আর তাহার কাছে আসিতে দিল ন। নিজেও সারাদিন সে জলস্পর্শ করিল না। সন্ধ্যার সময় উদয় আসিয়া একবার করুণাবিগলিতকণ্ঠে ভাতুমতীর খবর জিজ্ঞাসা করিল। কাতি তাহার প্রশ্নের উত্তর দিল । ভবানী দাতে দাত ঘসিয়া বিড় বিড় করিয়া বলিল, “বড় ফুৰ্ত্তিই হ’ধেছে মনে । কিন্তু হতভাগা তোর সব আশাতেই ছাই পড়বে, এই আমি ব’লে রাখলাম।” উদয় বাহির হইয়া যাইভে-যাইতে আপন মনেই বলিল, “যাকৃ, টাকা চল্লিশট। আর বুড়ো এখন ফিরে’ চাইবে না ।” ( २ ) দশ বারোটা দিন কোনো রকমে কাটিয়া গেল । জমিদার-বাড়ীর উপর শোকের কৃষ্ণ ছায় গাঢ় হইয় রছিল, তবু মাহুষের স্বাভাবিক ধর্শ্ববশে সকলেই এক এক করিয়া জীবনকে আবার এই নৃতন অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাথিয় চালাইবার চেষ্টা করিতে লাগিল । চাকর-ঝিগুলি এতদিন মনিকদের শোকের আওতায় একেবারে মুসডাইয়া গিয়াছিল । এখন তাহারাও অল্পে অল্পে কোলাহল স্বরু করিল। বাকি রহিল কেবল ভবানী। তাহাকে আর হাসি গল্পে যোগ দিতে ভাকিবার সাহস কাহারও হইল না। কাতি মৃগ যুগষ্টয়া অন্য দাসীদের কাছে বলিল, “ষ্ঠাকাপান দেখ, সোয়ামী মরেছে যেন ওয়ই । অমন যে যার-পর নেই বাপ, সেও সামূলে উঠেচে, আর ঐ বুড়ী মাগীর রকম দেখ, বৌরাণীকে যেন ভূতের মত পেয়ে বসেছে । না দেয় বেরতে, ন দেয় কারে সঙ্গে কথা কইতে । বিধবা কি আর কেউ হয় না ? এই ত আমরা রয়েছি। যে গিয়েছে তার জন্যে নিজে ম’রে আর কি হ’বে ? খাও, দাও, আপনার জান বঁাচাও, এই ত বুঝি বাপু !" | প্রমদারঞ্জন ভিতরে ভিতরে কতটা সাম্‌লাইয়। ছিলেন বলা যায় না, তবে বাহিরের চালচলন র্তাহার আবার . প্রায় স্বাভাবিক হইয়া আসিয়াছিল। কিন্তু কথা-বাৰ্ত্ত। আর আগের মত ততটা বলিতেন না । ভানুমতীর অৰ্দ্ধ-অচেতন ভাবটা এখনও ভাল করিয়া কাটে নাই । ভবানী তাহাকে শিশুর মত করিয়া আগলাইয়া রাথিত। নাওয়ানো, খাওয়ানো সবই আপন হাতে করিত। সে স্বভাবতই স্বল্পভাবণী ছিল, এখন আর একেবারেই কথা বলিত না । কেবল উদয়কে দেখিলে তাহার মুখ রাগে লাল হইয়া উঠিত, আপন মনে চাপা গলায় সে অভিশাপ বর্ষণ করিতে আরম্ভ করিত । বেলা দশটা বাজে । ভানুমতীকে স্নান করাইয়া, তাহার জলযোগের সব আয়োজন করিতে ভবানী ঘরের ৰাছির হইতেছে, এমন সময় কৰ্ত্তার খাস চাকর কুবের আসিয়া খবর দিল যে, কর্তাবাবু একবার তাহাকে ডাকিতেছেন । কৰ্ত্তার ঘরে বিশেব কথন ও তাহার ডাক পড়ে না। কিঞ্চিৎ অবাকৃ হইয়া ভবানী বলিল, “সেথানে আর কে কে আছেন ?” কুবের বলিল, “ডাক্তার-বাৰু,নায়েব-বাবু, আর ছোট দাদা-বাৰু।” মাথার কাপড় টানিতে টানিতে ভবানী জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ডেকেছেন জান কিছু ?” কুবের বলিল, সে খবর তাহার জানা নাই। দুধ, ফল, মিষ্টি গোছাইবার ভার আর-একজনের উপর দিয়া ভবানী । আস্তে-আস্তে কৰ্ত্তার ঘরের দিকে চলিল। কি প্রয়োজনে । যে তাহার ডাক পড়িতে পারে, তাহার মনের মধ্যে কেবল তাহারই জল্পনা চলিতে লাগিল ।