পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা জীবনদোলা Reసి তাকে নিয়ে আর তোমায় ঠাট্ট করতে হবে না। তুমি চুপ কর দেখি ” সঞ্জয় কি একটা বলিতে যাইতেছিল ; কিন্তু বাহির হইতে গৌরী ডাকিল, "চঞ্চল, তোমার জন্যে একটু গরম দুধ এনেছি, খেতে হবে কিন্তু ” দুধট। আর একটু পরে আনিলেও চলিত, কিন্তু গেীরীর আর বেশীক্ষণ সঞ্জয়কে একল রাখিয়া যাইতে ভরসা হইতেছিল না। কি জানি যদিই কেহ কিছু দেখে কিম্ব শোনে তাহা হইলে আশ্রমে তাহাদের তিনজনেরই বিশেব স্বনাম হইবে না । গৌরী ঘরে ঢুকিয়াই দেখিল চঞ্চল আরক্ত মুখখানা নীচু করিয়া একটু সলজ হাসি হাসিতেছে, সঞ্জয়ের মুখও প্রসন্ন ! ঝড়-ঝঞ্চার দারুণ দুর্য্যোগের মাঝখানে কি একটা আশার আলো দেখা দিয়াছে। আপনার উদ্দেশ্য থানিকট সিদ্ধ হইয়াছে বলিয়। গৌরী খুশী হইল। বঞ্চিত জীবনের বেদন যে কি তাহ ত সে বোঝে। তাই সে বেদনার হাত হইতে ইহাদের পরিত্রাণ দিবার পথ সে খুজিতেছিল। বাহিরের স্কুল জমা বাধাকেও হৃদয় জয় করিতে পারে কি না একবার দেখিতে চাহিয়াfছল । মনে হইল হয়ত পারিতেও পারে। সফলতার একটা আনন্দে তাহারও মুখ উজ্জল হইয়া উঠিল। কিন্তু অস্তরে কি একটা বেদন কাটার মত বিধিয়া-বিধিয়া উঠিতে লাগিল । সে নিঃসঙ্গ, সে চিরবঞ্চিত, সংসারে শুষ্ক কৰ্ত্তব্যমাত্রেই তাহার সকল আনন্দের খোরাক খুজিতে হইবে । হাসিয়া সঞ্জয়কে সানন্দ অভিবাদন করিতে গিয়ু অলক্ষিতে একটা দীর্ঘশ্বাস তাহার বুকের ভিতর হইতে ঠেলিয়া উঠিল । বলিতে আসিয়াছিল দুইট মিষ্ট কথা, কিন্তু কিছুই তাহার বলা হইল না । একদিন গৌরী মনে করিয়াছিল বিলাস ও ভোগের মোহেই সংসারের সকল কিছু অাকৃড়াইয় সে বাল্য ও কৈশোরট। কাটাইয়াছে। সেই ভোগ ও ঐশ্বধ্য হইতে পাছে সে আজীবন বঞ্চিত থাকে, তাই বুঝি তাহার পিতা তাহার জীবনের বৈধব্যের অভিশাপের কথা তাহার নিকট হইতে এত সাবধানে গোপন করিয়া রাখিয়াছিলেন ; পাছে সে ব্ৰহ্মচারিণী সন্ন্যাসিনীর বেশে পার্থিব সকল

) eտո ծ ծ

ভোগমুখের মাঝখানেই তাহা হইতে দূরে মরণকাল পৰ্য্যন্ত তৃষিতের মত পড়িয়া থাকে আর পাছে তাহার অল্প জুটাইয়া দিবার লোক না থাকে, তাই বুঝি তাহার পিতা তাহাকে আবার ঘরসংসার পাতিয়া দিবার লোভে সেই ফাদে অনেকখানি পা বাড়াইয়াছিলেন। একদিন নৃপেন্দ্র তাহাকে ইহারই লোভ দেখাইয়াছিল, ক্ষিতিধর তাহাকে এইজন্তই লোভী বলিয়া নিষ্ঠুর শ্লেষ করিয়াছিল। সেদিন তাই সে সকলকে দেখাইতে চাহিয়াছিল যে, তুচ্ছ ভোগ-ঐশ্বর্ঘ্য ও বিলাসকে সে অনায়াসে পায়ের নখে ঠেলিয়া চলিয়া আসিতে পারে, আপনার অল্পও সে আপনি অর্জন করিতে পারে ; এই সকলের উদ্ধে উঠিয়া সংসারকে সে দেখাইতে চাহিয়াছিল ষে, সংসারের ভোগমুখ তাহার কাছে কত ছোট জিনিস । পিতার উপরও একবার তাহার রাগ হইয়াছিল যে, এইসকল সামান্ত জিনিযের জন্য পৃথিবীর চোখে তিনি তাহাকে এত ছোট কfরয় রাখিতে চাহিয়াছিলেন । কিন্তু আজ তাহার অন্তর বলিতেছে যে, পিতা ভুল করেন নাই । ভোগমুখ বলিতে যে ধনরত্ন, বস্ত্ৰ-অলঙ্কার, বিলাস-আয়াসের ছবি সে কল্পনা করিয়াছিল সেই স্বখের অভাবে তাহার জীবন ব্যর্থ হইবে এমন মুখের কথা তিনি চিস্তাও করেন নাই । শৈশবে, কৈশোরে এই দিয়াই তিনি তাহাকে ভুলাইয়াছিলেন বটে ; কিন্তু কন্যার কোন জীবনব্যাপী দুঃখে যে র্তাহার মন কাদিয়াছিল আজ তাহ গৌরী বুঝিয়াছে। পরের উপকার করিতে আসিয়া আজ সে বুঝিয়াছে কত গভীরভাবে সেই বেদন তাহার অস্তরে ক্ষতস্থষ্টি করিয়া চলিয়াছে। ঐশ্বৰ্ষ্য ও আরামের স্বখের চেয়ে বড় যে মহামুখ যে-আনন্দকে ন পাওয়ার বেদনায় তাহার অস্তুয়ের ক্ষতটা খোচা দিয়া উঠিতেছে, মূৰ্খ সে একদিন তাহার অস্তিত্বটাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনে নাই । কেবলমাত্র একটা মামুষের মুখের মধুর হাসি ও চোখের স্নিগ্ধ দৃষ্টির জন্যই যে আজন্ম মানুষের মন কাদিতে পারে, ইহা সে বিশ্বাস করিতেও পারিত না । জীবনে অস্তুত কোনো একদিন একজন মানুষ কেবল তাহাকেই লইয়৷ সকল ভুলিয়া থাকিবে, তাহাকে পাওয়ার জন্য আপনার জন্ম পৰ্য্যস্ত সার্থক মনে করিযে,পৃথিবীর সকল দুঃখদ্বন্দ্বের ভিতর