বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলাপ-আলোচনাk ঐ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছপর-বেলা আমাদের খাওয়া শেষ হ'লে কবি বললেন,— “শিল্পকলার উদ্দীপনা নিয়ে নন্দলালের সঙ্গে আমার যে, কথাটা হয়েছিল সেটা ভেবে দেখবার। “বৈদিককালে বিশেষ মন্ত্রে যে-সকল বিশেষ যজ্ঞবিধি ছিল ইষ্ট্রলাভের কল্পনা ছিল তার লক্ষ্য। ধৰ্ম্মের আকারে সে একরকম বৈষয়িকতা । বৈষয়িকতায় মানুষের সঙ্গে মানুষকে মেলাতে পারে না। কামনার বিষয়কে সকলের সঙ্গে ভাগ করে ভোগ করা চলে না। তাই সেইদিন পুণ্যফলের সঙ্গে পণ্য-ফলের তফাৎ ছিল না, গে-কাঞ্চনের দরে তার কেনা-বেচা চলত। “বৌদ্ধধৰ্ম্ম ধৰ্ম্মের ক্ষেত্রে মানুষকে মিলিয়েছিল, কেনন। ভোগ তার লক্ষ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল মুক্তি। সেই মুক্তির ডাকে মানুষ জেগে উঠ ল । “যখন ঘুমোই তখন আমরা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। সেই স্বাতন্ত্র্যের বেড়ার মধ্যে বেঁচে থাকি মাত্র, আপনাকে জানিনে। সকলের মধ্যে নিজেকে জানাই হচ্চে জানা । তাই বৌদ্ধযুগে সৰ্ব্বজনীন জাগরণের আলোতে মানুষ আপনাকে যখন প্রবল ক’রে জানলে তখন আপনাকে প্রচুর ক’রে জানাতে চাইলে । সেই জানাতে চাওয়ার একটা অজস্র পরিচয় পাওয়া গেল তখনকার শিল্পকলায় । “য়ুরোপে খৃষ্টধৰ্ম্ম যখন সজীব ছিল তখন সে ধৰ্ম্মও কি রকম অনিবাৰ্য্য বেগে কলাস্তষ্টির উদ্রেক করেচে তার ব্যাখ্যা করা বাহুল্য । আমাদের পৌরাণিক ধৰ্ম্মে ভক্তির আহবানে সৰ্ব্বসাধারণের মিলন, সেই মিলনে যে আত্ম-প্রকাশের উদ্যম জেগেছিল তাও মূর্তিকলায়, চিত্রকলায়, গীতিকলায় উচ্ছসিত না হ’য়ে থাকৃতে পারেনি।” দিলীপকুমার বললেন, “এই রকম হ’য়ে থাকে এটা তো ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু কেন হয় সেটা তো জানা চাই ।”

  • সমস্ত আলোচনাটি সম্পূর্ণ নিজের ভাষাতেই লিখতে হয়েচে । ইপো । ১১ আগষ্ট ১৯২৭ ॐ ब्रशैौलानां१ %ाकूब्र

কবি বললেন, “বই পড়তে পড়তে পাঠক কোনে একটি বিশেষ বাক্যে বিশেষ আগ্রহ বোধ করলে সেটা নীচে লাইন টেনে দেয়। যদিও সে বাক্যের রচয়িত মে নয় তবু নিবিড় উপলব্ধির দ্বারাই তার প্রতি সে নিজের স্বত্ব অনুভব করে। এমনি ভাবে বিশ্ব-সংসারে যে বিষয়টিতে চিত্তের স্বত্ব বোধ করি তার গায়ে এমন চিহ্ন দিতে চাই য চিরকালের। সেই চিহ্নকে বলে আট। সাধারণ বিশ্বলোকে যে অসংখ্য জিনিষ আছে—আর আমার বিশেষ চৈতন্যলোকে যা কিছু উদ্ভাসিত, দুইয়ের তফাৎ কেমন, যেমন চাদের যে-পিঠ পৃথিবীর দিকে ফেরানো, তার সঙ্গে বিষ্ণু পিঠের মে-তফাৎ। এই আলো করা পিঠটিকে নিয়েই পৃথিবীর গান, তার উৎসব। বিশ্বের যেখানে আমাদের চিত্তের আলো বিশেষ ক’রে পড়ে, সেইখানেই বিধাতার স্বষ্টিকে নানা রূপে রসে রঙে গানে বরণ করে নিয়ে নিজের স্মৃষ্টি ক'রে নিই। বর আসে বিয়ে করতে, নেহাৎ-সাধারণ মানুষ, কিন্তু সেদিন বাজনা বাজিয়ে আলে জালিয়ে বুঝিয়ে দিই সকল মানুষেরই অসামান্য মূল্য আছে, যথাস্থানে যাচাই করলেই ধরা পড়ে। ক’নের বাড়ির নিকটে বরের দাম রাজ মহারাজের চেয়ে বেশী,—ময়ের কোলের নিকষে ছেলের দাম তেম্নি। দামটা বাইরে নয় ভিতরে, আমাদের চিত্তের স্বীকৃতিতে। “নন্দলালের জিজ্ঞাস্ত ছিল এই যে, আধুনিক রূপকারের কাছে, রসম্রষ্টার কাছে এখনকার যুগের ডাকটা কি ? বৌদ্ধযুগে, খৃষ্টযুগে যে-আহবানে মানুষের স্বষ্টিশক্তিকে জাগিয়েচে তার ছাপ তখনকার কালের সকল কাজেই ;– তখন কলাস্থষ্টির প্রেরণাতে যে ঐক্য তার রচনাতেও সেই ঐক্য ছিল । আজ আমাদের কাজে ডাকের মধ্যেই ব৷ ঐক্য কি, আর কোথায় ঐক্য তার সাড়ায় ? “উত্তর দেবার আগে ভেবে দেথতে হবে এখনকার কালে কোন কথাটা সব-চেয়ে বড়ো। “পূৰ্ব্বেই বলেচি বৈষয়িকতায় মানুষকে এক করে না।