পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ম সংখ্যা । ] সতীশ । বা, আমরা যে ছিলুম না, আবার চলুন ! সতীশের পীড়াপীড়ি বিনয় অগ্রাহ করিতে পারিল না । বন্দীকে লইয়া বাড়িতে গ্রবেশ করিয়াই সতীশ উচ্চস্বরে কহিল—“বাবা বিনয় বাবুকে এনেছি!” বৃদ্ধ ঘর হইতে শহির হইয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “শক্ত হাতে ধরা পড়েছেন, শীঘ্র ছাড়া পাবেন না । সতীশ তোর দিদিকে ডেকে দে।” । বিনয় ঘরে আসিয়া বসিল, তাহার হৃৎপিণ্ড বেগে উঠতে পড়িতে লাগিল। পরেশ কহিলেন “হঁাপিয়ে পড়েচেন বুঝি! সতীশ ভারি দুরন্ত ছেলে ।” ঘরে যখন সতীশ তাহার দিদিকে লইয়া প্রবেশ করিল তখন বিনয় নিজের ছেড়া জুতার উপর কোচার অগ্রভাগ মেলিয়া দিয়া সেই দিকে চোখ রাগিয়া বসিয়া ছিল। প্রথমে সে একটি মৃদু সুগন্ধ অনুভব করিল—তাহার পরে শুনিল পরেশ বাবু বলিতেছেন—“রাধে, বিনয় বাবু এসেছেন। একে ত তুমি জানই ।” বিনয় চকিতের মত মুখ তুলিয়া দেখিল সুচরিতা তাহাকে নমস্কার করিয়া সামনের চৌকিতে বসিল—এবার বিনয় প্রতিনমস্কার করিতে ভুলিল না । সুচরিতা কহিল, -“উনি রাস্তু দিয়া যাচ্ছিলেন । ওঁকে দেখ বা মাত্র সতীশকে আর ধরে রাখা গেল না, সে গাড়ি থেকে নেমেই ওঁকে টেনে নিয়ে এল । আপনি হয় ত কোনো কাজে যাচ্ছিলেন- আপনার ত কোনো অসুবিধে হয়নি !” সুচরিতা বিনয়কে সম্বোধন করিয়া কোনো কথা কহিবে বিনয় তাহ প্রত্যাশাই করে নাই। সে কুষ্ঠিত হইয়া ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল—“ন, আমার কোনো কাজ ছিল না, অসুবিধে কিছুই হয়নি।” সতীশ সুচরিতার কাপড় ধরিয়া টানিয়া কহিল—“দিদি চাবিটা দাও না। আমাদের সেই আগিনটা এনে বিনয় বাবুকে দেখাই ।” স্বচরিতা হাসিয়া- কুহিল—“এই বুঝি শুরু হল ! যার সঙ্গে বক্রিয়ারের ভাব হবে তার আর রক্ষে নেই-আর্গিন ত তাকে শুনতেই হবে—আরো অনেক দুঃখ তার কপালে আছে । বিনয় বাবু, আপনার এই বন্ধটি ছোট কিন্তু এর গোরা । ७७१ বন্ধুত্বর দায় বড় বেশি–Pা করতে পারবেন কি না, জানিনে ।” sy বিনয় স্বচরিতার এইরূপ অকুষ্ঠিত আলাপে কেমন করিয়া বেশ সহজে যোগ দিবে কেনো মতেই ভাবিয়া পাইল না। লজ্জা করিবে ন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিয়াও ফালে । প্রকারে ভাঙাচোরা করিয়া একটা জবাব দিল--"না, কিছুই না—আপনি সে— আমি-আমারও বেশ ভালই লাগে । সতীশ তাহার দিদির কাছ হইতে চাবি আদায় করিয়া আর্গিন আনিয়া উপস্থিত করিল। একটা চৌকা কাচের আবরণের মধ্যে তরঙ্গিত সমুদ্রের অনুকরণে নীল রং করা কাপড়ের উপর একটা খেলার জাহাজ রহিয়াছে । সতীশ চাবি দিয়া দম লাগাইতেই আর্গিনের সুরে তালে জাহাজটা তুলিতে লাগিল এবং সতীশ একবার জাহাজের দিকেও একবার বিনয়ের মুখের দিকে চাহিয়া মনের অস্থিরতা সম্বরণ করিতে পারিল না । এমনি করিয়া সতীশ মাঝখানে থাকাতে অল্প অল্প করিয়া বিনয়ের সঙ্কোচ ভাঙিয়া গেল—এবং ক্রমে সুচরিতার সঙ্গে মাঝে মাঝে মুখ তুলিয়া কথা কহাও তাহার পক্ষে অসম্ভব হইল না । সতীশ অপ্রাসঙ্গিক হঠাৎ এক সময় বলিয়া উঠিল “আপনার বন্ধুকে একদিন আমাদের এখানে আনবেন না ?” ইহা হইতে বিনয়ের বন্ধসম্বন্ধে প্রশ্ন উঠিয়া পড়িল । পরেশবাবুরা নূতন কলিকাতায় আসিয়াছেন তাহারা গোর সম্বন্ধে কিছুই জানিতেন না। বিনয় তাহার বন্ধুর কথা আলোচনা করিতে করিতে উৎসাহিত হইয়া উঠিল । গোরার যে কিরূপ অসামান্ত প্রতিভা, তাহার হৃদয় যে কিরূপ প্রশস্ত, তাহার শক্তি যে কিরূপ অটল তাহ বলিতে গিয়া বিনয় ফেন্স কথা শেষ করিতে পারিল না । গোরা যে একদিন সমস্ত ভারতবর্ষের মাথার উপরে মধ্যাহূ স্থৰ্য্যের মস্ত প্রদীপ্ত হইয়া উঠিবে—বিনয় কছিল, এ বিষয়ে আমার সন্দেহ মাত্র নাই । বলিতে বলিতে বিনয়ের মুথে যেন একটা জ্যোতি দেখা দিল, তাহার সমস্ত সঙ্কোচ একেবারে কাটিয়া গেল। • এমন কি, গোরার মত সম্বন্ধে পরেশবাবুর সঙ্গে দুষ্ট একটা +. বাদ প্রতিবাদও হইল। বিনয় বলিল—“গোরা যে হিন্দু সমাজের সমস্তই অসঙ্কোচে গ্রহণ করতে পারটে তার কারণ <o ris