পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

➢ ዓ8 যাই, পরামর্শ করিয়া যাহা ভাল হয় স্থির করা যাইবে। বেণু কহিল—ন। আমি সেখানে যাইব না। বাপের সঙ্গে রাগারগি করিয়া হরলালের বাড়িতে আসিয়া বেণু থাকিবে এ কথাটা হরলালের মোটেই ভাল লাগিল মা। অথচ আমার বাড়ি থাকিতে পারিবে না এ কথা বলাও বড় শক্ত। হরলাল ভাবিল আর একটু বাদে মনটা একটু ঠাও হইলেই ইহাকে ভুলাইয়া বাড়ি লইয়া যাইব । জিজ্ঞাসা করিল—তুমি খাইয়া আসিয়াছ ? বেণু কহিল—না, আমার ক্ষুধা নাই-আমি আজ থাইব 커 || হরলাল কহিল—“সে কি হয় ?” তাড়াতাড়ি মাকে গিয়া কহিল, “মা বেণু আসিয়াছে, তাহার জন্য কিছু খাবার 5ाहे ।” শুনিয়া মা ভারি খুসি হইয়া খাবার তৈরি করিতে গেলেন । হরলাল আপিসের কাপড় ছাড়িয়া মুখ হাত ধুইয়া বেণুর কাছে আসিয়া বসিলেন। একটুখানি কাশিয়া একটুখানি ইতস্তত করিয়া তিনি বেণুর কাধের উপর হাত রাথিয়া কহিলেন—বেণু কাজটা ভাল হইতেছে না । বাবার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া বাড়ি হইতে চলিয়া আসা, এটা তোমার উপযুক্ত নয়। শুনিয়া তখনি বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া বেণু কহিল, *আপনার এখানে যদি সুবিধা না হয় আমি সতীশের বাড়ি যাইব ।”—বলিয়া সে চলিয়া যাইবার উপক্রল করিল। হরলাল তাহার হাত ধরিয়া কহিল—রোস, কিছু খাইয়া যাও । বেণু রাগ করিয়া কহিল—“ন, আমি খাইতে পরিব না।” বলিয়া হাত ছাড়াইয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল । এমন সময়, হরলালের জন্ত-যে জলথাবার প্রস্তুত ছিল তাহাই বেণুর জন্ত থালায় গুছাইয়া মা তাহাদের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । কহিলেন, কোথায় যাও বাছা! বেণু কহিল, আমার কাজ আছে আমি চলিলাম। মা কহিলেন, সে কি হয় বাছ, কিছু না খাইয়া যাইতে পরিবে না । এই বলিয়া সেই বারান্দায় পাত পাড়িয়া তাহাকে হাতে ধরিয়া থাইতে বসাইলেন। প্রবাসী। হরলাল কহিল—চল আমি সুদ্ধ তোমার বাবার কাছে বেণু রাগ করিয়া কিছুই খাইতেছে না—থাবার লইয়া একটু নাড়াচাড়া করিতেছে মাত্র এমন সময় দরজার কাছে একটা গাড়ি আসিয়া থামিল। প্রথমে একটা দরোয়ান ও তাছার পশ্চাতে স্বয়ং অধরবাবু মচ্‌মচ্ শব্দে সিড়ি বাহিয়া উপরে আসিয়া উপস্থিত। বেণুর মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল । মা ঘরের মধ্যে সরিয়া গেলেন। অধর ছেলের সম্মুখে আসিয়া ক্রোধে কম্পিতকণ্ঠে হরলালের দিকে চাহিয়া কহিলেন—এই বুঝি ! রতিকাস্ত আমাকে তখনি বলিয়াছিল কিন্তু তোমার পেটে যে এত মতলব ছিল তাহা আমি বিশ্বাস করি নাই। তুমি মনে করিয়াছ বেণুকে বশ করিয়া উহার ঘাড় ভাঙ্গিয়া খাইবে ! কিন্তু সে হইতে দিব না । ছেলে চুরি করিবে ! তোমার নামে পুলিস কেস করিব তোমাকে জেলে ঠেলিব তবে ছাড়িব ।”–এই বলিয়া বেণুর দিকে চাহিয়া কছিলেন—“চল! ওঠ !” বেণু কোনো কথাটি না কহিয় তাহার বাপের পিছনে পিছনে চলিয়া গেল । সে দিন কেবল হরলালের মুখেই খাবার উঠিল না । જે এবারে হরলালের সদাগর আপিস কি জানি কি কারণে মফস্বল হইতে প্রচুর পরিমাণে চাল ডাল খরিদ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। এই উপলক্ষে হরলালকে প্রতি সপ্তাহেই শনিবার ভোরের গাড়িতে সাত আট হাজার টাকা লইয়া মফস্বলে যাইতে হইত। পাইকেডুদিগকে হাতে হাতে দাম চুকাইয়া দিবার জন্য মফস্বলের একটা বিশেষ কেন্দ্রে তাহাদের যে অপিস আছে সেইখানে দশ ও পাচ টাকার নোট ও নগদ টাকা লইয়া সে যাইত সেখানে রসিদ ও খাতা দেখিয়া গত সপ্তাহের মোট হিসাব মিলাইয়া, বর্তমান সপ্তাহের কাজ চালাইবার জন্ত টাকা রাখিয়া আসিত । সঙ্গে অাপিসের দুই জন দরোয়ান যাইত। হরলালের জামিন নাই বলিয়া আপিসে একটা কথা উঠিয়াছিল কিন্তু বড় সাহেব নিজের উপর সমস্ত ঝুঁকি লইয়া বলিয়াছিলেন হরলালের জামিনের প্রয়োজন নাই। মাঘমাস হইতে এইভাবে কাজ চলিতেছে—চৈত্র পর্য্যস্ত চলিবে এমন সম্ভাবনা আছে। এই ব্যাপার লইয়া হরলাল বিশেষ ব্যস্ত ছিল। প্রায়ই তাহাকে অনেক রাত্রে আপিল হইতে ফিরিতে হইত। *