পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা । ] , ছেড়ে দিয়ে রাশ রাশ টাকা নিয়ে তিনি হঠাৎ উন্টে খুব গুচি হয়ে দাড়িয়েচেন কিন্তু আমি ত পারব না! আমার সাতপুরুষের সংস্কার একটা একটা করে নির্মূল করা হয়েচে —সে কি এখন আর বল্লেই ফেরে ? গোরা । আচ্ছ, তোমার পূর্বপুরুষদের কথা ছেড়ে দাও—তারা ত কেউ কোনো আপত্তি করতে আসচেন না। কিন্তু আমাদের খাতিরে তোমাকে কতকগুলো জিনিষ মেনে চলতেই হবে। না হয় শাস্ত্রের মান নাই রাখলে, স্নেহের মান রাখতে হবে ত ! আনন্দময়ী। ওরে অত করে আমাকে কি বোঝাচ্চিস । আমার মনে কি হয় সে আমিই জানি! আমার স্বামী, আমার ছেলে—আমাকে নিয়ে তাদের যদি পদে পদে কেবল বাধতে লাগল তবে আমার আর মুখ কি নিয়ে ! কিন্তু তোকে কোলে নিয়েই আমি আচার ভাসিয়ে দিয়েচি ত৷ জানিস্ ? ছোট ছেলেকে বুকে তুলে নিলেই বুঝতে পারা যায় যে জাত নিয়ে কেউ পৃথিবীতে জন্মায় না । সে কথা যে দিন বুঝেচি সে দিন থেকে এ কথা নিশ্চয় জেনেচি যে আমি যদি খৃষ্টান বলে ছোট জাত বলে কাউকে ঘৃণা করি তবে ঈশ্বর তোকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবেন। তুই আমার কোল ভরে আমার ঘর আলো করে থাক আমি পৃথিবীর সকল জাতের হাতেই জল খাব! আজ আনন্দময়ীর কথা শুনিয়া বিনয়ের মনে হঠাৎ কি একটা অস্পষ্ট সংশয়ের আভাস দেখা দিল । সে একবার আনন্দময়ীর ও একবার গোরার মুখের দিকে তাকাইল কিন্তু তখনি মন হইতে সকল তর্কের উপক্রম দূর করিয়া দিল । গোরা কহিল—ম, তোমার যুক্তিটা ভাল বোঝা গেল না । স্বার বিচার করে শাস্ত্র মেনে চলে তাদের ঘরেও ত ছেলে বেঁচে থাকে আর ঈশ্বর তোমার সম্বন্ধেই বিশেষ আইন গুনে এ বুদ্ধি তোমাকে কে দিলে ?

  • আনন্দময়ী। যিনি তোকে দিয়েচেন বুদ্ধিও তিনি দিয়েছেন। তা আমি কি করব বল! আমার এতে কোনো হাত নেই। কিন্তু ওরে পাগল, তোর পাগলামি দেখে আমি হালৰ কি কাবত ভেৰে পাইনে ? যাক সে সব কথা যাক। তবে বিনয় আমার ঘরে খাবে না ?

গোরী । ও ত এখনি মুযোগ পেলেই ছোটে, লোভটি গোরা । રક્ત૧ ওর ষোলো আন । যে বামুনের ছেলে, ফুটো মিষ্টি দিয়ে সে কথা ওকে ভোলালে চলবে না। ওকে অনেক ত্যাগ করতে হবে, প্রবৃত্তি সাম্লাতে হবে, তবে ওর জন্মের গৌরব রাখতে পারবে । মা, তুমি কিন্তু রাগ কোরো না! আমি তোমার পায়ের ধূলো নিচ্চি ! আনন্দময়ী। আমি রাগ করব! তুই বলিস্ কি ! তুই যা করচিস এ তুই জ্ঞানে করচিস নে, তা আমি তোকে বলে দিলুম। আমার মনে এই কষ্ট রইল যে তোকে মানুষ করলুম বটে কিন্তু—যাই হোকৃগে, তুই যাকে ধৰ্ম্ম বলে বেড়াস্ সে আমার মান চলবে না—না হয়, তুই আমার ঘরে আমার হাতে নাই থেলি—কিন্তু তোকে ত দুসন্ধে দেখতে পাব, সেই আমার ঢের। বিনয়, তুমি মুখটি অমন মলিন করে না বাপ,--তোমার মনটি নরম, তুমি ভাবৃচ আমি দুঃখ পেলুম— কিছু না বাপ ! আর একদিন নিমন্ত্রণ করে খুব ভাল বামুনের হাতেই তোমাকে খাইয়ে দেব—তার ভাবনা কি ! আমি কিন্তু, বাছা, লছমিয়ার হাতের জল খাব, সে আমি সবাইকে বলে রাখুচি। গোরার মা নীচে চলিয়া গেলেন। বিনয় চুপ করিয়া কিছুক্ষণ দাড়াইয়া রহিল—তাহার পর ধীরে ধীরে কহিল— “গোরা, এটা যৈন একটু বাড়াবাড়ি হচ্চে !” গোরা। কার বাড়াবাড়ি ? বিনয় । তোমার । গোরা। এক চুল বাড়াবাড়ি নয়। যেখানে যার সীমা আমি সেইটে ঠিক রক্ষে করে চলতে চাই। কোন ছুতোয় স্বচ্যগ্ৰভূমি ছাড়তে আরম্ভ করলে শেষকালে কিছুই বাকি থাকে না । বিনয় । কিন্তু ম যে ! . গোরা । মা কাকে বলে সে আমি জানি । আমাকে কি সে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে । আমার মার মত মা ক’জনের আছে। কিন্তু আচার যদি না মানতে সুরু করি তবে এক দিন হয় ত মাকেও মানব না। দেখ বিনয়, তোমাকে একটা কথা বলি, মনে রেখো–হৃদয় জিনিষটা অতি উত্তম কিন্তু সকলের চেয়ে উত্তম নয়। . বিনয় কিছুক্ষণ পরে একটু ইতস্তত করিয়া বলিল—