পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やeや গ্রন্থে পরিচিত । আমার দেশ হইতে বহু যোজন দূরে--এই .. খানেই, বিষগ্নচিত্ত রাষ্ট্রপতি কার্ণের আমলের, এবং শ্রান্তক্লান্ত রাষ্ট্রপতি ফোরের আমলের সংবাদপত্র ও সমালোচনী পত্রিকাদি দেখিলাম। মনে হইল যেন আমি হঠাৎ ফরাসী মফস্বল-প্রদেশের কোন একটি ক্ষুদ্র নগরে আসিয়া পড়িয়াছি। এই সন্মিলনীটি একটি পাস-প্রতিষ্ঠান। একজন পাসী বণিক আভিজাত্যের উপাধি মনে করিয়া গৰ্ব্বের সহিত "পতি” নাম ধারণ করেন; ইনিই এই সম্মিলনীট স্থাপন করিয়াছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ফরাসী নাবিকগণ র্তাহার কোন পূৰ্ব্বপুরুষকে এই নামটি প্রদান করিয়াছিল । য়ুরোপীয় অঞ্চলের সীমান্ত হইতে পার্স-সহর আরম্ভ হইয়াছে ; তাহার আরও দূরে হিন্দু:সহর, মুসলমান-সহর । এটা যেন আর এক জগৎ,—একবারেই অপরিচিত ; যেন মুহূর্তের মধ্যে যোজন পথ দূরে—উহারই সংলগ্ন অথচ সম্পূর্ণরূপে পৃথক যেন আর এক জগতে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। এমন কি, একজন ইংরাজ আপনার ঘোড়াকেও এখানে আনিতে সাহস করে না । আমাদের প্যারিসের তরুবীথিবিশিষ্ট সেখীন লোকের অঞ্চলটির মত, তাহার পরপারে আর সমস্ত স্থান যেন ইংরাজের পক্ষে অপরিচিত পল্লীপ্রদেশ। ইহাই দেশীয়দের সহর। কিন্তু আমি নিশ্চয় করিয়া বলিতেছি, পরিব্রাজকের দৃষ্টিতে এই পার্স রাস্তার বাড়ীগুলিতে একটা খামখেয়ালী ধরণের নিজত্ব আছে—উহার গবাক্ষ বারাণ্ডাদিতে বেশ একটু মৌলিকতা প্রকাশ পায়। কিন্তু বোম্বাই অপেক্ষাকৃত একটি নূতন সহর। ইহা অপেক্ষ মুরাট, কিংবা লাহোর, কিংবা "কোন পারস্ত-সহর, কিংবা পুতিগন্ধ আবর্জনাময় বারাণসীও আমার ভাল লাগে! এখানে নগরটা বেশী তাড়াতাড়ী বাড়িয়া উঠিয়াছে,—সেই সঙ্গে কতকগুলা মসজিদ ও দেবালয়ও তাড়াতাড়ি নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। হিন্দুবাড়ীগুলাকে গোলাপী, হলদে কিংবা নীল পাথুরে রঙ্গে রঞ্জিত করিয়া কারুকাৰ্য্যের অভাব অতি সহজে পূরণ করা হইয়াছে। আমাদের বৃষ্টিবহুল দেশে, এইরূপ রং-চং করিলে রং-মাখানে সং-এর মুখের মত মনে হইত। কিন্তু এই মুখামল তালীবনের দেশে, প্রাচ্য সুর্য্যপ্রভার এমনি মহিমা—(স্বৰ্য্য একটা মন্ত যাদুকর)-যুরোপীয় অঞ্চলের এক ধেয়ে, ধুসরত প্রবাসী। পূর্ণ;–পুস্তকের নাম, লেখকের নাম—সব আমার [ ৭ম ভাগ। দেখিয়া আসিয়া এই সমস্ত বিচিত্র ‘বর্ণে নেত্র পরিতৃপ্ত হয় । * শুামল মূৰ্ত্তিতে রাস্তাগুলা,পরিপূর্ণ;–লম্বোদর নগ্ন শিশু ; স্ত্রীলোকেরা এমন সুন্দরব্রুপে কাপড় পরিয়াছে যে উহাদের মুনম্য শুামল গায়ের গড়ন বেশ প্রকাশ পাইতেছে ; মুণ্ডিত মস্তক লোক,—তাহদের দৃষ্টি অদ্ভূত ; ক্ষতাচ্ছন্ন পাংশুবর্ণ কতকগুলা কঙ্কাল-সার লোক, করুণ-কোমল, হতাশ-বিহ্বলদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ধরিয়া আমাদের দিকে চাহিয়া রহিয়াছে। এই সব অবসন্ন, কুঞ্চিত-গতি, মনুষ্য-ডিম্বের ঝাক, প্রখর রৌদ্রের মধ্যে, দুর্ভিক্ষের মধ্যে, মহামারীর মধ্যে পড়িয়া রহিয়াছে। সংবাদপত্রে প্রকাশ—মহামারীতে প্রতিদিন ১৫০০ লোক মরিতেছে। ইহাই দেশীয় সহর। একটা দেবালয়ের দ্বারদেশে আসিয়া ভিতরে প্রবেশ করিবার জন্য আমি বিশেষ চেষ্টা করিলাম। কেন না, আমি দেখিতে পাইলাম—অভ্যস্তর-প্রদেশে একটা রজতময় প্রকাও বৃষ রহিয়াছে ; হস্তের ঘর্ষণে, উহার গাত্র মসৃণ হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু আমি ম্লেচ্ছ, মন্দিরের প্রবেশ-দ্বারে আমার পা ধুইয়া ফেলিতে হইবে। মুহূর্বের মধ্যে, ছিন্নবস্ত্র ক্ষুধিত লোক, তীর্থযাত্রীর দল, ব্রাহ্মণ ভিক্ষুকেরা আমাকে ঘিরিয়া ফেলিল, ভিক্ষ না দিলে আমাকে এক পাও নড়িতে দিবে না । পাছে আমার উপস্থিতিতে মন্দিরের উপর বজ্রপাত হয় এই আশঙ্কায় যেন উহারা বাহু উত্তোলন করিয়া আমার পথ আটকাইতে লাগিল ! একটা সরু ও নীচু দোকান-ঘরে, একজন দোকানদার, বুদ্ধের মত অচল ভাবে বসিয়া আছে ;–গোল-গাল মুখ ; চোখে অস্পষ্ট হাসির ভাব। আমি নিকট দিয়া যখন চলিয়া গেলাম, আমাকে তাকাইয়া দেখিল । গ্রাম-সম্বন্ধীয় পরিচ্ছেদে আমি এই ব্যক্তিদের কথা কিছুই বলি নাই। বলি নাই কেন ?—অবগু, গ্রামপল্লিতে দোকান যে একেবারে নাই তাহী নহে । আজকাল সেখানেও দোকান দেখিতে পাওয়া যায়—বলি নাই এই জন্ত, যেহেতু গ্রামপল্লীর যেরূপ, সমাজগঠন, তাহাতে সেই । আদিকালের ধরণে গঠিত গ্রামপল্লীতে দোকান জিনিসটা অনাবশুক । দোকান সম্প্রতি প্রচলিত হইয়াছে—এবং উৎ এই পল্লীসমাজের একটা আনুষঙ্গিক ব্যাপার মাত্র।