পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিম্ব
৮১

ক্ষুদ্র তৈলবিন্দুকে জলের অত্যল্পস্থান অধিকার করিয়া ভাসিতে দেখি, তখন তাহার অপর কারণ থাকে। সমগ্র জল তৈলাচ্ছাদিত না হইয়া, কেবল একস্থানে তৈল ভাসিতে দেখা, পরিষ্কার জলে কিছুতেই সম্ভব নয়। যে জল পূর্ব্বে বিজাতীয় পদার্থযুক্ত বা তৈল সংমিশ্রিত হইয়া, উপরিস্থ আবরণের আকুঞ্চন ক্ষমতা কমাইয়া তাহাকে তৈলবিন্দুস্থ আবরণদ্বয়ের সমবেত শক্তির সহিত সমান করিয়াছে, তাহাতেই কেবল তৈলবিন্দু ব্যাপ্ত না হইয়া ভাসিতে পারে। কৌতূহলী পাঠকপাঠিকাগণ একটি ক্ষুদ্র পাত্রে জল রাখিয়া অনায়াসে ইহার পরীক্ষা করিতে পারেন।

 এখন পূর্ব্ববর্ণিত সহজ পরীক্ষা এবং আরো অনেক উদাহরণ দ্বারা দেখা যায় যে,—বিজাতীয় পদার্থ দ্বারা কলুষিত হইলে, তরল পদার্থের আবরণের স্বাভাবিক আকুঞ্চনশক্তি অনেক হ্রাস হয় এবং ইহারই ফলে বিম্বোৎপত্তির অনেক সুযোগ উপস্থিত হইয়া পড়ে। কারণ আকুঞ্চনশক্তি হ্রাস হওয়ায়, বিম্বাবরণে অধিক টান থাকে না, কাজেই ইহা চাপসহনশীল হইয়া উঠে এবং সহজে ছিন্ন হয় না।

 বিজাতীয় পদার্থ সংযোগে, সূক্ষ্মাবরণের আকুঞ্চনশক্তির বৈলক্ষণ্যের আরো দুই একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। বোধ হয় অনেকে দেখিয়া থাকিবেন, প্রশস্ত পাত্রস্থ নির্ম্মল জলে, কর্পূর নিক্ষেপ করিলে, ভাসমান কর্পূর-কণা জীবন্ত কীটের ন্যায় নানা গতিতে সবেগে জলের উপরে বিচরণ করিতে থাকে,—অনুসন্ধান দ্বারা দেখা গিয়াছে ইহা কর্পূর সংযোগে জলাবরণের আকুঞ্চনশক্তির হ্রাসের ফলমাত্র। প্রশস্ত পাত্রের সর্ব্বাংশে কর্পূর পরিব্যাপ্ত হইতে না পাইয়া, ইহা কেবল নিকটস্থ জলভাগের আকুঞ্চনশক্তি হ্রাস করে, কাজেই দূরস্থ জলাবরণের শক্তির আধিক্য প্রযুক্ত টান পাইয়া সেগুলি ইতস্ততঃ বিচরণ করিতে থাকে। জলকে কোন প্রকারে কলুষিত বা তৈলাক্ত করিয়া তাহার আকুঞ্চন শক্তির হ্রাস করিলে, কর্পূরের গতি এককালে বন্ধ হইয়া যায়।