পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
প্রাকৃতিকী

 এতদ্ব্যতীত ঝটিকাকালে সমুদ্রজলে তৈল নিক্ষেপ দ্বারা স্রোতের প্রকোপ প্রশমিত করিয়া, ঝটিকার অনিষ্টকারিতার হস্ত হইতে উদ্ধার পাইবার আজকাল যে একটি উপায় উদ্ভাবিত হইয়াছে, তাহাও জলাবরণের উপর, তৈলের প্রভাবের ফল বলিয়া অনেকে স্থির করিয়াছেন। ঝটিকাকালীন উদ্বেলিত সমুদ্রজলে তৈল নিক্ষেপ করিলে ইহা চতুর্দ্দিকে বিস্তৃত হইয়া, আবরণের আকুঞ্চন শক্তি দ্বারা, তৈলব্যাপ্ত জলে এক প্রকার টান উৎপাদন করে, এবং ইহারই ফলে জল সম্পূর্ণ স্থির হইয়া এক সমতলে থাকিবার জন্য চেষ্টা করে। কাজেই এই টানের বিরুদ্ধে প্রবল বায়ুরেগও সহসা স্রোত উৎপন্ন করিতে পারে না।

 পূর্ব্বে বলা হইয়াছে কলুষিত তরল পদার্থে, আবরণের আকুঞ্চন শক্তি হ্রাস হওয়ায়, বিশ্বাবরণে টান থাকে না, এইজন্য সহজে বিম্বোৎপত্তি হয়; ইহা বিম্বোৎপত্তি ও তাহার স্থায়িত্বের কারণ বটে, কিন্তু ইহাই যথেষ্ট নয়, এতদ্ব্যতীত আরে। কারণ আছে। কলুষিত তরল পদার্থ বা সাবানজলের সর্ব্বাংশে আকুঞ্চনশক্তি সমান থাকে না, এজন্যই বিম্ব অধিক কাল স্থায়ী হয়। আবরণের আকুঞ্চনশক্তি সর্ব্বাংশে সমান থাকিলে, ইহা বিম্বাকারে কিছুতেই শূন্যে দাঁড়াইতে পারিত না, স্বীয় ভারে আপনিই জলে লীন হইয়া যাইত। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে, বিজাতীয় পদার্থের পরিমাণ ভেদে, তরল পদার্থের আবরণের আকুঞ্চনশক্তির পরিবর্ত্তন ঘটে; একই পদার্থের যে অংশ বিজাতীয় পদার্থ যোগে অধিক কলুষিত, তাহার সেই অংশের আকুঞ্চনশক্তি অপরাংশ অপেক্ষা অনেক কম। বিম্বাবরণের উর্দ্ধাংশ অপেক্ষা, অধোভাগে বিজাতীয় পদার্থ অধিক পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। এ জন্য তাহার নিম্নাংশ অপেক্ষা, অল্প কলুষিত ঊর্দ্ধাংশের আকুঞ্চনশক্তি অধিক হইয়া পড়ে এবং ইহারই ফলে বিম্বও অধিক কাল স্থায়ী হয়।