পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মনুষ্যসৃষ্টি
৯৫

কোন স্থায়ী উপায় উদ্ভাবনের জন্য চিন্তা করিতে হইয়াছিল। প্রবল শত্রুপক্ষের বাণবর্ষণে যখন যোদ্ধার ধনু ভগ্ন হইয়া যায় এবং আত্মরক্ষার চেষ্টায় তূণীর শূন্য হইয়া পড়ে, তখন নিজের দেহপ্রাণ অক্ষত রাখিবার জন্য তাহাকে উপায়ান্তর অবলম্বন করিতে হয়। পার্শ্বচর শরীররক্ষকের স্কন্ধে যে কঠিন বর্ম্ম সঙ্কটকালের জন্য রাখা হইয়াছিল, তাহার প্রতি তখন যোদ্ধৃবরের দৃষ্টি পড়ে। সেই কঠিন বর্ম্মে আচ্ছাদিত হইয়া দাঁড়াইলে বিপক্ষের বাণ বর্ম্মে ঠেকিয়া শতধা হইয়া পড়িয়া যায়। প্রতিকূল প্রাকৃতিক শক্তির নিষ্ঠুরতার হাত হইতে উদ্ধার পাইবার জন্য জীবকে ঠিক্ পূর্ব্বোক্ত প্রকারেই সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল। বর্ম্ম প্রস্তুত ছিল না, নিজের শরীরকে রূপান্তরিত করিয়া ইহারা বিরুদ্ধ শক্তির আক্রমণ হইতে ত্রাণ পাইত। এক কোষময় প্রাথমিক জীব দ্বিধা খণ্ডিত হইতে হইতে যে অসংখ্য সন্তানসন্ততি উৎপন্ন করিত তাহাদের মধ্যে সকলগুলিই মূলজীবের ছাঁচে না জন্মিয়া নানাকারণে বিকলাঙ্গ হইয়া জন্মিত। এই বিকলতা মহাভারতের বীর কর্ণের সহজ কবচের ন্যায় কার্য্য করিলে প্রাকৃতিক উপদ্রর তাহাদিগকে স্পর্শ করিতে পারিত না। জীবনসংগ্রামে জয়যুক্ত হইয়া যে সকল জীব নানাযুগে পৃথিবীতে বিচরণ করিয়াছিল, তাহাদিগকে মহাবীর কর্ণের ন্যায়ই সহজ কবচধারী হইয়া জন্মিতে হইয়াছিল।

 জীবের এই ক্রমপরিবর্ত্তন পৃথিবীর কেবল শৈশবজীবনেরই ঘটনা নয়, বাহিরের প্রাকৃতিক শক্তি যেমন ধীরে ধীরে পরিবর্ত্তিত হইয়া আসিতেছে, জীবও সেইপ্রকার নানা আকার পরিগ্রহ করিয়া জাতির পর জাতি সৃষ্টি করিতে করিতে চলিয়াছে। বর্ত্তমান যুগেও এই পরিবর্ত্তনের ধারার বিরাম নাই। ইহার অন্ত কোথায়, এবং ইহা কোন্ দিক্ লক্ষ্য করিয়াই চলিয়াছে, তাহা নিশ্চয় করিয়া বলা আমাদের জ্ঞানবুদ্ধির অতীত।