পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মনুষ্যসৃষ্টি
১০৭

পূর্ণ রাখে। ইহা একটা পরীক্ষিত প্রাকৃতিক নিয়ম। অন্ধের শ্রবণ ও স্পর্শশক্তির তীক্ষ্ণতা এবং বধিরের দৃষ্টিশক্তির প্রাখর্য্য চিরপ্রসিদ্ধ। এই প্রাকৃতিক নিয়মটিকে মনে রাখিয়া বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, যখন মানবের অতি প্রাচীন পূর্ব্বপুরুষগণ স্তন্যপায়ীর আকারে বৃক্ষে বিচরণ করিতেছিল, তখন সেই সকল প্রাণীতে আরো কতকগুলি মনুষ্যসুলভ শক্তির সঞ্চার হইয়াছিল। অনেক ইতর প্রাণীর তুলনায় মানুষের দৃষ্টি ও ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত অল্প। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, মানবের প্রাচীন পূর্ব্বপুরুষগণ যখন শাখীর আকারে ছিল, তখন ধরাতলবিহারী প্রাণীদিগের ন্যায় তাহাদের ঘ্রাণ বা দৃষ্টিশক্তির চালনা করিতে হইত না। কাজেই ব্যবহারের অভাবে এগুলি ক্রমে দুর্ব্বল হইয়া গিয়া অপর শক্তির উন্নতি করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এই দুর্ব্বলতা বৃক্ষচর প্রাণীকে মনুষ্যত্বের দিকে যে, কত অগ্রসর করিয়াছিল তাহার ইয়ত্তা করা যায় না। ঘ্রাণশক্তির তীক্ষ্ণতা হারাইয়া ইহারা যখন কুকুরের মত গন্ধগ্রহণ করিয়া আহার্য্য অনুসন্ধানাদি করিতে পারিত না, এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অভাবে দূরস্থ শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য করা যখন তাহাদের পক্ষে অসম্ভব হইয়া দাঁড়াইয়াছিল, তখন আত্মরক্ষার অন্য উপায় না থাকায় বুদ্ধির পরিচালনা করিয়া কার্য্য সম্পন্ন করা ব্যতীত তাহাদের আর গতান্তর ছিল না। এই পরিবর্ত্তনই ইহাদের উন্নতির পথ উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছিল।

 ইহার পর পুর্ব্বোক্ত প্রাণীদিগের মধ্যে বুদ্ধি-পরিচালনার কৌশল লইয়াই প্রতিযোগিতা চলিয়াছিল বলিয়া মনে হয়। বৃক্ষবিহারী প্রাণী হইতে যখন হস্তপদাদিযুক্ত মনুষ্যাকৃতি জীবের উৎপত্তি হইয়াছিল, তখন উহাদিগকে পশুপক্ষী বধ করিয়াই জীবন ধারণ করিতে হইত। বলা বাহুল্য এই কার্য্য, তাহাদের বুদ্ধিবিকাশের খুবই সাহায্য করিত। সমস্ত বৎসর ধরিয়া কোন স্থলেই হাতের গোড়ার শিকার পাওয়া যায়