পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
প্রাকৃতিকী

না। কাজেই বুদ্ধিমান্ শিকারীকে ভবিষ্যতের চিন্তা অভ্যাস করিতে হইয়াছিল। যাহারা এই চিন্তায় অনভ্যস্ত ছিল ক্ষুৎপিপাসা ও অনাহারে তাহাদের সকলকে সবংশে মৃত্যুমুখে পড়িতে হইত। এই প্রকারে কেবল একটিমাত্র উন্নতবুদ্ধি নরাকৃতি জাতি পৃথিবীতে টিকিয়া থাকিতে পারিয়াছিল। ইহাকেই আধুনিক মানবজাতির পিতামহ বলা যাইতে পারে। এই অসম্পূর্ণ মানবই ধীরে ধীরে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হইয়া আধুনিক মনুষ্যজাতির সৃষ্টি করিয়াছে।

 মনুষ্যসৃষ্টির ঠিক্ পূর্ব্বেকার ব্যাপারগুলি আলোচনা করিলে মনে হয়, অসম্পূর্ণ মানব কতকগুলি প্রাকৃতিক দানকে অব্যবহারে কার্য্যের অনুপযোগী করিয়া নিজের উন্নতি খুব দ্রুত করিয়া তুলিয়াছিল। এই স্বেচ্ছাকৃত নিঃসহায়তা মানুষকে ঘেরিয়া না দাঁড়াইলে, সেই মানুষ কখনই এতদিনে এখনকার মানুষে পরিণত হইতে পারিত না। সেই নিঃসহায়তাই মানুষকে গৃহবস্ত্র ও অস্ত্রাদি নির্ম্মাণের কৌশল শিখাইয়াছে। মানুষ যদি পক্ষীর ন্যায় প্রকৃতিদত্ত বস্ত্রে দেহ আবৃত রাখিত, এবং তাহাদের ন্যায় পক্ষবিশিষ্ট হইয়া যথেচ্ছা গমনাগমন করিয়া সহজে আহার্য্য সংস্থান করিতে পারিত, তবে আজ আমরা মনুষ্যজাতিতে আধুনিক সভ্যতার লেশমাত্র দেখিতাম না, এবং উড়িবার কল আবিষ্কারের জন্য দেশের বড় বড় পণ্ডিতদিগকে চিন্তাকুল দেখিতাম না। প্রকৃতির বৈরিতাই পশুত্বে মনুষ্যত্বের আরোপ করিয়াছে।