পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
প্রাকৃতিকী

বলেন, দুগ্ধে ‘দম্বল’ অর্থাৎ দধিবীজ দিলে তাহা যেমন গাঁজিয়া উঠিয়া রূপান্তর প্রাপ্ত হয়, সেই প্রকার রূপান্তর পাইয়াই জীবনের কার্য্য চলে। দুগ্ধে দধিবীজ দেওয়াই গাঁজানো বা মাতানোর (Fermentation) একমাত্র উদাহরণ নয়। ময়দা বা সুজীতে খামী দিয়া যখন আমরা পাঁউরুটি প্রস্তুত করি, ভাতে জল দিয়া আমরা যখন পান্তাভাত প্রস্তুত করি, তখনো আমরা ঐসব জিনিষকে গাঁজাই। বিজ্ঞানের মতে আমরা যাহাকে জীবন বলি, তাহা এই প্রকারের নানা গাঁজানো বা মাতানো লইয়াই চলে। কথাটা হঠাৎ শুনিলে অসম্ভব বলিয়া মনে হয় সত্য, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের অভ্রান্ততার এত প্রমাণ আছে যে, ইহাকে সত্য বলিয়া মানিতেই হইতেছে।

 কখনই কোন বৃহৎ সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা একদিনে এবং এক জনের চেষ্টায় হয় নাই। কেহ উপাদান সংগ্রহ করিয়াছেন, কেহ সেগুলিকে একত্র করিয়াছেন, কেহ বা তাহাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। যুগযুগান্তের চেষ্টায় এই প্রকারেই এক একটি সিদ্ধান্ত দৃঢ় ভিত্তির উপরে দাঁড়াইয়া যায়। আমরা যে সিদ্ধান্তের আলোচনা করিতে যাইতেছি, তাহারও প্রতিষ্ঠা ঐ প্রকারে ধীরে ধীরে হইতেছে। প্রাচীন ও আধুনিক বহু শারীরতত্ত্ববিদের হস্তচিহ্ন ইহাতে ধরা পড়ে। যাঁহারা ইহার গোড়া পত্তন করিয়াছেন, তাঁহাদের কথা স্মরণ করিলে, প্রথমেই ফ্রান্সের জগদ্বিখ্যাত মহাপণ্ডিত পাষ্টুরের (Pasteur) কথা মনে আসে। দুগ্ধে দধিবীজ দিলে বা ময়দায় খামী দিলে সেগুলি কেন গাঁজিয়া রূপান্তরিত হয়, ইহা লইয়া তিনি এক সময় গবেষণা আরম্ভ করিয়াছিলেন। ইহাতে জানিয়াছিলেন, এক প্রকারে অতিক্ষুদ্র জীব দুগ্ধে বা ময়দায় আশ্রয় গ্রহণ করে। আমরা যখন দধি প্রস্তুত করিবার জন্য দুগ্ধে ‘দম্বল’, দিই, তখন সেই জীবাণুরই কতকগুলি দুগ্ধে ছাড়িয়া দিই, তার পর সেগুলি বংশবিস্তার করিয়া সমস্ত দুগ্ধকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিলে দুগ্ধ দধির