পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনটা কি ?
১১১

মূর্ত্তি গ্রহণ করে। কেবল ইহার নহে,—ওলাউঠা ডিপ্‌থিরিয়া প্রভৃতি নানা রোগের মূলেও তিনি ঐকার জীবাণুর কার্য্য দেখিয়াছিলেন। ঐ সকল রোগের জীবাণু মানুষ বা অপর প্রাণীর দেহে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া বংশবিস্তার করিতে থাকিলেই যে, প্রাণীর দেহে ঐ বিশেষ রোগের লক্ষণ প্রকাশ হইয়া পড়ে, তাহা প্রত্যক্ষ দেখা গিয়াছিল। তা ছাড়া প্রাণীর স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখাতেও তিনি বিশেষ বিশেষ জীবাণুর কার্য্য আবিষ্কার করিয়াছিলেন। পাষ্টুর পরম বৈজ্ঞানিক ছিলেন এবং রসায়নবিদ্যাতেও তাঁহার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি স্পষ্ট বুঝিয়াছিলেন, জীবাণু দ্বারা মানুষের দেহে বা নানা জড়পদার্থে যে পরিবর্ত্তন হয়, তাহা রাসায়নিক পরিবর্ত্তন। কিন্তু এই কথা প্রকাশ করিবার পাপ তিনি নিজস্কন্ধে লইতে সাহস করেন নাই। জীবনের কার্য্যের সঙ্গে যে, রাসায়নিক কার্য্যের কোনও সম্বন্ধ আছে তাহা প্রকাশ করা সত্যই সে সময়ে পাপের বিষয় ছিল। খুব বড় বড় বৈজ্ঞানিকগণও তখন জীবনের কার্য্যকে একটা সৃষ্টিছাড়া রহস্য বলিয়া মনে করিতেন! পরীক্ষাগারে নানা পদার্থের যোগবিয়োগে আমরা যে-সকল ঘটনা ঘটিতে দেখি এবং যে প্রাকৃতিক নিয়মের সাক্ষাৎ পাই, তাহা জীবশরীরের কার্য্যে কখনই চলে না, এই এক সংস্কার তাৎকালিক বৈজ্ঞানিকদিগের মনে বদ্ধমূল ছিল। কাজেই প্রাণিদেহে জীবাণুর কার্য্য সম্পূর্ণ জৈব কার্য্য বলিয়াই স্থির হইয়া রহিল, ইহার সহিত রাসায়নিক কার্য্যের যে, কোন যোগ থাকিতে পারে তাহা আর কাহারও মনে হইল না।

 পাষ্টুরের মৃত্যুর পর জর্ম্মানীতে বুক্‌নার (Büchner) নামক এক অসাধারণ প্রতিভাশালী বৈজ্ঞানিকের আবির্ভাব হইয়াছিল। ইঁহার স্বাধীন চিত্ত সংস্কারের গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ থাকিতে চাহে নাই। জীবাণুর কার্য্য গোড়ায় জৈব কার্য্য হইলেও তাহা যে, রাসায়নিক কার্য্য